সত্যিকারের কন্ঠ
ভাষাটির নামের অর্থ হলো এই-সত্যিকারের কন্ঠ। যে ভাষায় কথা বলতে পারেন মোটে দুজন মানুষ। তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। ফলে ভাষাটির চর্চা আর হবে না বলে ভয়ে মোবাইলের বিজ্ঞাপনে তাদের নিয়ে আসা হলো। এরপর হলো অভিধান। তারা সরকারিভাবে ভাষাটি শেখালেন। কিভাবে ‘আইয়াপা’ ভাষাকে মেক্সিকোতে বাঁচিয়ে রাখা হলো সে গল্প
তাদের ভাষাটি ১ হাজার বছরের পুরোনো। ভাষাটিতে অনর্গল কথা বলতে পারেন, সবকিছু বুঝতে ও বোঝাতে পারেন এমন মানুষ বিশ্বে তারা দুজন। একজনের বয়স এখন ৮৬, নাম তার মানুয়েল সেগোভিয়া। অন্যজনের নাম ইসিগ্রো বেলাফকেফ। তার বয়স হলো ৮০। দুজনেই ‘আরিয়াপা’ নামের একটি নীচু অঞ্চলের গ্রামটির বয়স্ক নাগরিক। মেক্সিকোর দক্ষিণের তাবাসকো অঙ্গরাজ্যে তাদের এই জন্মস্থান। তাদের ভাষাটিকে বলা হয় সংক্ষেপে ‘আইয়াপা’, তারা ‘আইয়াপানেকো’ জাতি। এই ভাষা থেকে তাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীটির জন্ম। ভাষাটি মেক্সিকোতে আছে। এই দুজনের মাধ্যমেই বেঁচেছে। ভাষাটি নিয়ে সামান্যতম আগ্রহও নেই দেখে, ভাষাবিজ্ঞানীরা এক দশক ধরে কাজ করেছেন ভাষায় একটি অভিধান তৈরিতে। সেই কাজের শুরু ১৯৯৮ সালে। ২০০৮ সালে মেক্সিকো সরকার অনন্য উদ্যোগ নিলেন ইসিগ্রো বেলাফকেফকে বেতন দেওয়া শুরু করে। আইয়াপানেকোর শিশুদের তিনি ভাষাটি শেখানো শুরু করলেন। তার ছেলে ও চারজন শিশুকে ভাষাটি শেখাতে লাগলেন। তারপরও ২০১৪ সাল পর্যন্ত আর কোনো ভাষাভাষী ছিল না, কেউ ভালোভাবে কথা বলতে পারতেন না। এর আগে স্প্যানিশদের উপনিবেশ ছিলেন তারা, তাদের ভাষাও। শুরু থেকে একের পর এক যুদ্ধ, বিপ্লব, দুর্ভিক্ষ ও বন্যায় আক্রান্ত হয়ে একে, একে মারা গিয়েছেন তাদের মানুষরা। অনেকে ভাষা ও দেশ বদল করেছেন। ফলে দুই মানুষের কথা বলার ভাষাটি অন্য আরো অনেক আদিবাসী ভাষার মতো হারিয়ে যেতে চলেছে। তবে তারা একে, অন্যের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেছেন ও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন সবাইকে চমকে গিয়ে।
এই দুজন মানুষকে নিয়ে তো উত্তেজনার অভাব নেই। তাদের মধ্যে বিবাদ কি নিয়ে হয়েছে, সেটি ভালোভাবে কেউ জানেন না। একটি প্রাচীন ভাষার কেন দুজন বন্ধু কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন, সেটি ভাষাতাত্বিক অধ্যাপকদের হতাশ করে দিয়েছে। তাদের সামান্য কথা বলায় রাজি করতে পারেননি তাদের কেউ। ২০১৪ সালে সংবাদমাধ্যমগুলো আইয়াপেনেকো ভাষা ও এই আদিবাসী গোষ্ঠীর বেদনাবিধুর গল্পটি প্রকাশ করতে শুরু করেছে। একটি অত্যন্ত বিপন্ন ভাষা, আছে সে তাবাসকো নামের মেক্সিকোর একটি অঙ্গরাজ্যে, তাদের আদি বাসস্থান আইয়াপেনেকো গ্রামে, তারা ভুলে যাওয়া কিছু বিবাদের ফলে একে অন্যের সঙ্গে আলাপ করা বা কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। ভাষাটিকে নিয়ে কাজ করতে ও একে শেষ দুজন মানুষের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে অনেক ভাষাবিজ্ঞানী ছুটে গিয়েছেন আদিবাসী এই পুরুষদের কাছে। একজন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতাত্বিক নৃতত্ববিদ ড্যানিয়েল সাসলাক। তিনি তাদের আইয়াপানেকো ভাষার একটি ডিকশনারি তৈরি করতে দুজনের সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। বলেছেন, ‘তাদের দুজনের মধ্যে অনেক মৌলিক মিল নেই। সেগোভিয়ার আমার মনে হয়েছে, সামান্য খোঁচানোর স্বভাব আছে আর বেলাফোকের হলেন সুখ, দু:খ যেকোনোকিছুতেই উদাসীন একজন ব্যক্তি। তিনি খুব কমই বাড়ি থেকে বেরুতে ভালোবাসেন। একেবারে ঘরকুনো স্বভাবের মানুষ। তাকেই খোঁচান সেগোভিয়া।’
তাদের এই গ্রন্থাভিধানটি দুজনের ভাষাটি চলে যাবার আগেই ধরে রাখার একটি তুমুল গতিশীল প্রকল্প। প্রকল্পের প্রধানকে দুই মানুষ কথা বলেছেন তাদের ভাষা নিয়ে। সেগোভিয়া জানিয়েছেন, ‘যখন আমি একটি ছোট্ট বালক ছিলাম, সবাই আমাদের আইয়াপা ভাষায় কথা বলতেন। একটু, একটু করে আমার মাতৃভাষাটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। এখন মনে হয়, আমার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এটিও মারা যাবে।’ তবে তিনি তার ভাষার শেষ মানুষ বেলাফকেরের সঙ্গে কোনো প্রকাশ্য শত্রুতার কথা অস্বীকার করেছেন। বরং বলেছেন, আইয়াপানেকো ভাষাটিকে এক দশক আগে পর্যন্ত কথা বলে চর্চা করার অভ্যাসটি ধরে রেখেছিলেন দুজনে মিলে। এখনও তিনি ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তার ছেলের সঙ্গে কথা বলে। তার ছেলের বৌ-তিনিও তাকে বুঝতে পারেন; তার সঙ্গে আদিবাসী মানুষটি তার ভাষায় কথা বলেন। তবে ছেলে ও ছেলের বৌ কথা বলে সামান্য কটির বেশি শব্দ উচ্চারণ করতে পারেন না পূর্বপুরুষের।
এই ভাষায় অনর্গল আরেকজন মাত্র বেলাফকেফ তখন আর কোনো মানুষের সঙ্গে নিজের মাতৃভাষায় নিয়মিত কথা বলতে রাজি নন। এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১১ সালে। এরপর থেকে তাদের নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। অথচ তারা দুজনে বাস করেন একে অন্যের থেকে ৫শ ফিট দূরের বাড়িতে। মৌখিক বিনিময় করতে কেন অস্বীকার করেছেন সেটিও ভালোভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে যারা তাদের চেনেন, বলেছেন, কোনোদিনও একে অন্যের সঙ্গ পছন্দ করেননি বিশ্বের একটিমাত্র ভাষায় কথা বলা মোটে দুজন পুরুষ।
আগে থেকে তাদের ভাষা নিয়ে তো অনেকে গবেষণা করছেন। তাদের নিয়ে কাজ করা ড্যানিয়েল সাসলাক জানিয়েছেন, “আইয়াপানেকো নামের আদিবাসীদের কাছে পরিচিত ভাষাটির মাধ্যমে শত, শত বছরের দ্বীপ-আইয়াপানেকো, একটি ভাষাভিত্তিক দ্বীপ ছিল সবসময়। এই ভাষার চারপাশে এখানে ছিল শক্তিশালী আদিবাসী ভাষাগুলো। তবে আইয়াপানেকো ভাষাটির মৃত্যুর কারণ অন্যরকম। ২০ শতকের মাঝামাঝিতে প্রধান ও দখলদার ভাষা স্প্যানিশে লেখাপড়ার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর অন্য মুখের ভাষাগুলো এই অঞ্চলের আদি মানুষদের কাছ থেকে দ্রুত হারিয়ে যেতে লাগলো। শক্তিশালী ভাষা আইয়াপানেকোর মৃত্যু খবর স্প্যানিশে শিক্ষাব্যবস্থা চালু হওয়ার পর শুরু হয়ে গেল। লিখিতভাবে তাদের আর কোনো বর্ণমালা তৈরি করা হলো না। ভাষাটিকে উন্নত করার কোনো কাজও করলেন না স্পেনের রাজা ও রাণী এবং মেক্সিকোর সরকার। তবে কয়েকটি দশক শিশুদের আদিবাসী ভাষায় কথা বলা নিষিদ্ধ করে ভাষাটিকে শেষ করে দেওয়া হলো। পরিবারগুলোতে মুখের ভাষা হিসেবে বেঁচে থাকলো আইয়াপানেকো। তবে শেষ রক্ষা হলো না। শহরায়ন ও অভিবাসনের কবলে পড়লো ভাষায়টি। এগুলোর শুরু হলো ১৯৭০’র দশকে। ফলে যে মূল মানুষগুলো গ্রামে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে ভাষাটিকে ধরে রেখেছিলেন, তারাও উচ্ছেদ হয়ে গেলেন। তাদের বাঁধনগুলো ভেঙে যেতে লাগলো।”
আরিয়াপা ভাষা নিয়ে কাজ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকজন ভাষাতাত্বিক জনাথন রেঙ্গল বলেছেন, ‘আরিয়াপা ভাষাটি আরিয়াপানেকো এলাকার ভাষা। আছে তাবাসকো অঙ্গরাজ্যে। ৬শ বছরের পুরোনো ভাষাটি। আরো ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ভাষা হয়ে দাঁড়ালো পরে মায়া, আজটেক ভাষা। ফলে ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক ও এলাকাভিত্তিক ভাষা হয়ে গেল। তারা এই অঞ্চলে আগে কলম্বিয়ানদের অধীনে ছিলেন। তারপর এলো স্প্যানিশ ভাষা। ফলে দুর্বলতম হয়ে গেল। এরপর মেক্সিকোতে স্প্যানিশ ভাষায় আবিশ্যিকভাবে লেখাপড়ার নিয়ম চালু হওয়ার পর তাদের ভাষাটি শতবষ আগ থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। মেক্সিকো গ্রহণযোগ্য ভাষা হিসেবে বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে স্প্যানিশ শেখানো শুরু করলো। তারপর তেলের খনি পাওয়া গেল বলে নতুন অধিবাসীরা আসতে শুরু করলেন আইয়াপানেকোতে। ফলে ধীরে, ধীরে আইয়াপোনেকোর স্থানীয় ভাষাটির সঙ্গে মানুষের সংযোগ আরো কমে যেতে লাগলো।’
তাদের ভাষাটিকে নিয়ে গবেষণা করতে, করতে সাসলাক বলেছেন, ‘একটি দু:খের গল্প এগুলো। তবে আপনি সত্যিই জেনে খুশি হবেন, কীভাবে একে চারপাশ থেকে উঁচুতে ধরে রাখা হয়েছিল।’ তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘এই মেক্সিকোতে মোট ৬৮টি আদিবাসী ভাষা আছে। এই ভাষাগুলো আবার ৩শ ৬৪টি উপভাষাতে রূপান্তরিত হয়েছে। সামান্য যে কটি আদিবাসী মেক্সিকানদের ভাষা আছে, সেগুলোও হারিয়ে যাবার বিপদ মোকাবেলা করছে। তবে তাদের সবার মধ্যে সবচেয়ে বিপদে আছে আইয়াপানেকো উপজাতিদের ভাষাটি। বাইরের মানুষদের আরোপ করা তাদের এই আইয়াপানেকো নামটিও।’
এই আদিবাসী ভাষায় সবশেষ পুরোপুরি কথা বলতে পারা দুজন-মানুয়েল সেগোভিয়া ও ইসিগ্রো বেলাফকেফ জানালেন, তাদের মাতৃভাষার আসল নাম ‘নুমতে ওতে’। তার অথ হলো, ‘সত্যিকারের কন্ঠ।’ তারা এই ভাষাটির বিভিন্ন রূপান্তরে কথা বলতে পারেন, সেগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করতে অস্বীকার করেছেন দুজনে মিলে। কেননা, তাদের সম্পক ভালো নয়। ২০১১ সালে তাদের এই ভাষার অভিধানটি বেরুনোর কথা ছিল। সেখানে তাদের মাধ্যমে ভাষাটির ভাষান্তরগুলোও থাকবে বলা হয়েছে। ‘দি আইয়াপানেকো ডিশনারি’ তৈরি করতে করতে পেরেছেন ড্যানিয়েল সাসলাক।
আরো আশার কথা, মেক্সিকোতে সরকারিভাবে ‘দি ন্যাশনাল ইনডিজেনাস ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট’ আছে। তারাও শেষবারের মতো উদ্যোগ নিয়েছেন, দুজন শেষ ভাষাভাষীর মাধ্যমে ক্লাসগুলো নিয়ে তাদের জ্ঞানকে স্থানীয়দের মধ্যে যারা এই ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের কাছে পৌঁছানোর। ভাষাটিকে নিয়ে এর আগের উদ্যোগগুলো অথ বরাদ্দের অভাবে ও অনুৎসাহে বিপযন্ত হয়ে গিয়েছে। তবে অভিযোগ করে সেগোভিয়া জানালেন, ‘আমি নিজে পেন্সিল ও আমার নোটবুকগুলো নিয়ে এসেছিলাম। ক্লাসগুলো লোকে লোকারণ্য আকারে শুরু হয়েছিল এবং এরপর লোকেরা আসা বন্ধ করে দিয়েছেন।’
সাসলাক বলেছেন, ‘ভাষাটি বিশেষ দিক থেকে ধনী’, সেটিকে তিনি বলেছেন, “ইঙ্গিতের দিক থেকে। তারা এগুলো পেয়েছেন তাদের চারপাশের প্রকৃতি থেকে। সেগুলো থেকে উদ্দীপ্ত হয়ে তারা এই ইঙ্গিতপূণ আচরণগুলো করতে, করতে সেগুলোকে ভাষার অপরিহায অংশ হিসেবে নিয়ে এসেছে। তাদের এই ইঙ্গিত পূণ আচরণগুলো ভাষার শব্দেও আছে, যেমন ‘কোলো-গোলো-নাই।’ এর মানে হলো, ‘টাকির মতো গরগর করে।’ টাকি হলো এক জাতের মুরগি।”
২০১৪ সাল থেকে তারা কথা বলা শুরু করেছেন। এর পেছনে আছে দারুণ একটি ব্যবসায়িক কৌশল। জামান টেলিকম বহুজাতিক ও বিরাট কম্পানি ভোডাফোনের সাহায্যে তাদের ভাষাটিকে নিরাপদ ও রক্ষা করতে দুজনের মধ্যে কথা বলার একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হলো। ভোডাফোন তাদের আবার কথা বলতে রাজি করাতে পেরেছিল। ভোডাফোনের জন্য মেক্সিকোতে ও নানা দেশে বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছে বিজ্ঞাপন এজেন্সি ইয়ং ভন ম্যাট। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, দুজনের ফাটল পূরণ করে তাদের যুদ্ধটি মেটাবেন ও ভাষাটিকে বাঁচাবেন। তারা একে, অন্যের সঙ্গে মোবাইলে আলাপ করছেন এই বিজ্ঞাপন প্রচারণা চালিয়েছে মোবাইল কম্পানিটি। এই বিশেষ প্রচারণার নাম দিয়েছিলেন তারা ‘ভোডাফোন ফাস্টস’। বিজ্ঞাপনটি দেখানো শুরু হলো ২০১৪ সালেই। এরপর ইয়ং ভন ম্যাটের মাধ্যমে একটি প্রচারাভিযানেও পৌঁছালো শেষ ভাষাভাষী দুজনের কাজ। লোকেরা অনলাইন থেকে তাদের ভাষাটির শব্দগুলোকে নিজেদের ভাষায় গ্রহণ করতে লাগলেন, যেগুলো এখন মৃত। তাদের দুজনকে নিয়ে ভোডাফোন একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। আইয়াপেনেকো ভাষা নিয়ে তৈরি। এখন অবশ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না। আগে তাতে প্রবেশ করে দর্শনাথী ও ভাষাটি নিয়ে আগ্রহী এবং ভাষা চর্চাকারীরা ভাষাটির বিভিন্ন শব্দগুলোকে গ্রহণ ও শিখতে পারতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যবহার করা লাইক ও শেয়ারের মতো শব্দগুলোর আইয়াপেনেকোতে উচ্চারণ জানতে ও গ্রহণ করতে পারতেন। তাতে ভিডিও ছিল। তাদের নামে একটি স্কুল গড়ে দিয়েছেন মোবাইল কম্পানি। সেখানে তারা শিশুদের নিজেদের মাতৃভাষা শেখান। তৈরি হয়েছে সরকারিভাবে বই।
ড্যানিয়েল সাসলাক কেন তারা এই বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন জানার জন্য দুজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তারা বলেছেন, আমাদের সত্যিকারের গল্পে বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির কোনো আগ্রহ ছিল না। বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের জন্য তারা তাদের টাকা দিয়েছেন বলে কাজ করেছেন দুজনে। একটি বিদ্যালয় ভবনের গায়েও তাদের ছবি একে বিজ্ঞাপন করেছেন তারা।
এই ভাষাটি নিয়ে পড়ালেখা করেছেন ভাষাতাত্বিক জনাথন রেঙ্গল। তিনি এই উদ্যোগের বিপক্ষে। জানিয়েছেন, ‘ভুল বিষয়গুলোকে প্রচার করবে না এই বিজ্ঞাপনগুলো, অন্য ভাষাগুলোকে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। বলেছেন, আপিয়াপানেকো প্রবাদগুলো তৈরি করতে লাখ, লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। এই কাজগুলো তাদের জন্য যাদের এই ভাষা বা কোনো ভাষার প্রতিই কোনো আগ্রহ নেই।’
এরপরের উদ্যোগ তাদের নিয়ে হয়েছে একটি এক রুমের শ্রেণীকক্ষ। কক্ষটি তাদের নামে রাখা ও নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ২০১৪ সাল থেকে এই পুরোনো দুই বন্ধু তাদের প্রাচীন ভাষাটি শিশু কিশোরদের শিখিয়েছেন। তবে এত সব উদ্যোগের ফলে এখন এই ভাষাটির মোট ১৬ জন কথা বলার মতো মানুষ আছেন। এই তথ্যটি জানিয়েছেন সাসলাক ও রেঙ্গল।
তবে নিয়মিতভাবে অবশ্য কেউই ভাষাটিকে বাড়িতে ব্যবহার করতে শিখছেন না। যারা এই ভাষা শিখছেন, তারা সবাই নিরাপদে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন। শহরের অনেক তরুণকে এখন এই ভাষাটি শেখানো শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের উৎসবে আইয়াপানোকোর ভাষাটিকে উচ্চারণ প্রতিযোগিতা হিসেবে রাখা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনির্য়া অঙ্গরাজ্যের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতাত্বিক অধ্যাপক জেমস ফক্সও বিমানে উড়ে গিয়েছেন তাবাসকো অঙ্গরাজ্যে তাদের কাছে এই ভাষার একটি অভিধান তৈরি করতে।
ভাষাটির মধ্যে অনন্য সৌন্দর্য আছে বলে জানালেন রেঙ্গল, “যেমন তাদের একটি শব্দ আছে, স্প্যানিশে উচ্চারণ করতে হয় ‘চুকেমবুনিয়ে’। মানে হলো, ‘বজ্রদেবতার বাড়িটি’। এভাবেই তারা ‘মেঘকে’ ডাকেন। খুব কাব্যিকভাবে।”
(ইন্টারনেট থেকে অনুবাদ)