‘হাওয়া’ নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশার চাপ আমাদের ভেতর সংক্রমিত হচ্ছে: চঞ্চল চৌধুরী
নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত সিনেমা ‘হাওয়া’। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত এ সিনেমাটি রাজধানীসহ দেশের ২৪টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে শুক্রবার (২৯ জুলাই)। ইতোমধ্যেই এই সিনেমার গান ও ট্রেলার প্রকাশের পর অন্যরকম আলোচনা তৈরি হয়েছে। সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন চঞ্চল চৌধুরী।
ঢাকাপ্রকাশ: যেহেতু গভীর সমুদ্রে চিত্রায়িত হয়েছে ‘হাওয়া’। তাই এতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
চঞ্চল চৌধুরী: এখানে কাজ করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। সমতলে শুটিং করা আর সমুদ্রের গভীরে শুটিং করা এক বিষয় নয়। কারণ সমুদ্রে শুটিং করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে। এগুলো মাথায় নিয়ে, মোকাবিলা করেই শুটিং করতে হয়েছে। শুটিং করতে গিয়ে নানা ধরনের বিপত্তি ঘটেছে। এটা কিন্তু পাড়ের কাছাকাছি শুটিং হয়নি। একদম গভীর সমুদ্রে শুটিং হয়েছে। সেন্টমার্টিন থেকে দুই ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে যেখানে গেলে কূলকিনারা দেখা যায় না, সেখানে শুটিং হয়েছে। পুরো শুটিং হয়েছে নৌকায়। ৪৫ দিন শুটিং করেছি আমরা। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে ৪-৫ দিন শুটিং থেমে ছিল। এ ছাড়া বাকি দিন কাজ করতে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে কাজটি করতে গিয়ে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাদের। সবাইকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। বিশেষ করে ওই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সমুদ্রের মাঝখানে থাকা, প্রচণ্ড রোদে পুড়ে, গরমে, খরায় সেই সঙ্গে আবার ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে যুদ্ধ করা, বিশাল বিশাল ঢেউ। সবকিছু মিলিয়েই খুব চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ ছিল।
ঢাকাপ্রকাশ: গান ও ট্রেলার প্রকাশের পর ‘হাওয়া’ সিনেমা নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশা এখন তুঙ্গে। সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শকদের প্রত্যাশা কি পূরণ করতে পারবে?
চঞ্চল চৌধুরী: প্রত্যাশার চাপটা একটু বেশি হয়ে গেছে। দর্শকদের প্রত্যাশার চাপ আবার আমাদের ভেতর সংক্রমিত হচ্ছে। কারণ নিজের কাজ ভালো হয়েছে এটা আমি কখনো বলি না। এটা বলার অভ্যাসও আমার নাই। তবে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। দর্শকদের প্রত্যাশা কতটুকু মিটবে সেটা জানি না। তবে ‘হাওয়া’ সিনেমাটি দেখে দর্শকরা হতাশ হবেন না এটা আমি বলতে পারি।
ঢাকাপ্রকাশ: চঞ্চল চৌধুরী যখন যে সিনেমায় কাজ করেন পুরো আলোটাই তার উপর থাকে। অর্থাৎ দর্শকদের চোখ ও আলোচনা তাকে ঘিরেই হয়। এই সিনেমার ক্ষেত্রেও কি তাই?
চঞ্চল চৌধুরী: না, এখানে আমি হয়তো প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছি। অন্য যে চরিত্রগুলো আছে সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। লিড ক্যারেক্টারটা আমিই করেছি। তবে অন্য চরিত্রগুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- নারী চরিত্র একটি, সেটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকাপ্রকাশ: ‘হাওয়া’ সিনেমার টিকিট নিয়ে চারদিকে হাহাকার চলছে। হলগুলোতে আগামী কয়েকদিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। দর্শকদের মাঝেও সিনেমাটি নিয়ে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। এটা কেমন লাগছে?
চঞ্চল চৌধুরী: এটা আমার জন্য আলাদা একটা ভালো লাগা। সবচেয়ে ভালো লাগা যেটা সেটা হচ্ছে, সিনেমার সুদিন যদি ফিরে আসে ‘হাওয়া’র হাত ধরে তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। তবে একটা কথা হচ্ছে হাওয়ার মতো দু-একটা সিনেমা দিয়ে তো সিনেমার সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। হাওয়ার পরে আরও ভালো ভালো, বড় বড় ডিরেক্টর, শিল্পীদের সিনেমা আসতে হবে। বছরে তিন চারটা ভালো সিনেমা মুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে হবে।
‘পরাণ’ সিনেমাটি ভালো যাচ্ছে। যদিও আমি ব্যস্ততার কারণে সিনেমাটি দেখতে পারিনি। এ সিনেমার মাধ্যমে দর্শক হলে ফিরতে শুরু করেছে। সেই জায়গা থেকে ‘হাওয়া’ দিয়ে যদি দর্শক চূড়ান্তভাবে হলে ফিরতে শুরু করে, তবে এটা আমাদের জন্য হবে অত্যন্ত আনন্দের। কিন্তু পরের সিনেমার ক্ষেত্রেও এ ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। আর দর্শকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ তারা ‘হাওয়া’ সিনেমার গান, ট্রেলার যেভাবে সানন্দে গ্রহণ করেছেন এবং সিনেমাটি নিয়ে তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা যাই বলি, আমি মনে করি এটা আমাদের বাংলা সিনেমার জন্য অনেক ইতিবাচক।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার অভিনীত সব সিনেমা নিয়েই অন্যরকম আলোচনা হয়। ‘হাওয়া’ কি আপনার অভিনীত পূর্বের সিনেমাগুলোর রেকর্ড ভাঙতে পারবে?
চঞ্চল চৌধুরী: এটাতো আমি বলতে পারি না। রিলিজের পর দর্শক ভালো বলতে পারবে। এটা আমার মুখ দিয়ে বলা উচিতও নয়। আমার কাজ হচ্ছে ঠিক মতো অভিনয়টা করা। সেটা আমি চেষ্টা করি ভালো গল্পের ও ভালো পরিচালকের সিনেমায় কাজ করতে। এটা হচ্ছে আমার সিদ্ধান্ত। আমি যার তার সঙ্গে যেকোনো ধরনের গল্পে বা চরিত্রে অভিনয় করি না। আমি প্রজেক্ট বাছাই করার ক্ষেত্রে অনেক সময় নেই। আর প্রজেক্ট বাছাই করতে গিয়ে অনেক লোভ সংবরণ করতে হয়। কারণ আমি জানি আমি বছরে দশটা সিনেমায় চাইলে অভিনয় করতে পারব। সেখান থেকে অনেক টাকাও রোজগার করতে হয়তো পারব। কিন্তু সেটা না করে দুই, তিন বছরে একটা সিনেমায় অভিনয় করি। তার মানে আমাকে অর্থনৈতিক লোভটাও সংবরণ করতে হয়। নিজের প্রতি একনিষ্ট ও সৎ থাকতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দর্শকদের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা আছে। এত বছর ধরে কাজ করছি। দর্শকদের তো আমার সিনেমায় প্রতি একটু আলাদা প্রত্যাশা আছে। সেই জায়গা থেকে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমাকে চেষ্টা করতে হয়। সেটা পূরণ করতে পারব কিনা জানি না। তবে আমার চেষ্টাটা আমি করি।
ঢাকাপ্রকাশ: ‘হাওয়া’ দর্শক কেনো দেখবে?
চঞ্চল চৌধুরী: ‘হাওয়া’র পোস্টার, ট্রেলার, গান প্রকাশের পর দর্শকদের মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সেই আগ্রহের জায়গা থেকেই ‘হাওয়া’ দেখবে তারা। আর দর্শক বুঝতেই পারছে অ্যাটলিস্ট খারাপ কিছু হয়নি। সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা যদি মনে করেন সিনেমা শিল্পের উন্নতি চায়, সিনেমা শিল্পটা আবার ঘুরে দাঁড়াক, তাহলে সেই দায়বদ্ধতা থেকেই দর্শক হলে এসে সিনেমাটি দেখবে।
ঢাকাপ্রকাশ: এ সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে আপনাকে অনেক বেশি পান খেতে হয়েছে। পান খাওয়ার অভ্যাস কি এখনো আছে?
চঞ্চল চৌধুরী: এটা চরিত্রের জন্যই করতে হয়েছে। চরিত্রের লুকের জন্য দাঁতটা যাতে কালো হয় এজন্য পান খেতে হয়েছে।
আর শুটিংয়ের সময় হঠাৎ করেই পান খেলে তো দাঁত কালো হয় না। তাই দাঁত কালো করার জন্য নিয়মিত পান খেতে হয়েছে। একমাস এটা একটা অভ্যাসও হয়ে গিয়েছিল। শুটিং থেকে আসার পরই সেই অভ্যাস আর নেই। তবে ডাবিংয়ের সময় আবার পান খেতে হয়েছে।
এএম/এমএমএ/