চলে গেলেন ব্রিটিশ তারকা ডেভিড ওয়ার্নার
কিংবদন্তী ব্রিটিশ অভিনয়শিল্পী ও হলিউডের ‘দি ওমেন’ এবং ‘টাইটানিক’র মতো সুপারহিট ছবির সুদক্ষ অভিনেতা ডেভিড ওয়ার্নার আর নেই। ২৪ জুলাই ৮০ বছর বয়সে চলে গেলেন তিনি।
ওয়ার্নার মারা গিয়েছেন ডেনভিল হিলের একটি যত্নকেন্দ্রে। বিনোদন জগতের মানুষদের একটি ঠিকানা। সেখানে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার মধ্যে মারা গেলেন। বিবিসির প্রথম প্রকাশিত খবরটি অভিনেতার পরিবারও নিশ্চিত করেছে-‘বিপর্যস্ত হৃদয়ে’। এই বিশ্বখ্যাত সংবাদ মাধ্যমের খবরের সঙ্গেও প্রকাশিত হয়েছে। পরিবার জানিয়েছে, ‘১৮ মাসের বেশি বা এক বছর ছয়টি মাস ধরে তিনি তার রোগের চিকিৎসায়ও অংশগ্রহণ করেছেন চারিত্রিক আত্মমর্যাদা এবং প্রশংসনীয় গুণাবলীতে।’
এরপর বলেছেন, ‘তার অভাব আমাদের ভেতরে প্রবলভাবে অনুভূত হবে। পরিবার ও বন্ধুরা এবং যারা তাকে দেখেছেন, চলেছেন ও আলো-আঁধারের ভুবনে তাকে চিনেছেন, একজন স্বহৃদয়, মহানুভব, সহানুভূতিশীল-সঙ্গী, বাবা, মানুষ হিসেবে; যার উত্তরাধিকার আছে অসাধারণ কাজের, যিনি বছরের বছর বছর ধরে কাজের মাধ্যমে লাখ, লাখ ভক্তের হৃদয় ছুঁয়ে থাকবেন, আমাদের হৃদয় তার জন্য ভেঙে গিয়েছে।’
তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন হ্যারিয়েট। এখন বেঁচে আছেন স্ত্রী লিসা বাওয়ারম্যান। ছেলে আছে লাকি। পুত্রবধু সারাহ।
১৯৪১ সালের ২৯ জুলাই জন্মেছেন ডেভিড ওয়ার্নার ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টারের ল্যাংকাশায়ারে। তার বাবা ছিলেন একটি সেবিকাদের থাকার বাড়ির মালিক। তিনি রাশিয়া থেকে ব্রিটেনে অভিবাসী একজন পুরুষ। তার সৎ মা ছিলেন। তবে ছেলেবেলা থেকে অভিনয়ের পোকা ছিল ওয়ার্নারের মাথায়। ফলে পড়ালেখা করেছেন বিখ্যাত ব্রিটিশ রাজকীয় নাট্য বিদ্যালয়-‘দি রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট’-এ। ১৯৬১ সালের স্নাতক ডেভিড ওয়ার্নার।
প্রথম সবার নজর কাড়লেন ওয়ার্নার উচ্চ প্রশংসায় তার প্রধান চরিত্রটির জন্য, এটিই প্রথম, বিখ্যাত ছবি ‘মর্গান : অ্যা সুইটেবল কেস ফর ট্রিটমেন্ট’। ১৯৬৬ সালের, ওয়ার্নার ছিলেন নায়ক আর নায়িকা ভেনেসা রেডগ্রেইভ। তিনি বেঁচে, ৮৫। অস্কার জয়ী নায়িকা। তাদের প্রথম ছবিটি ওয়ার্নারকে বাফটা (দি ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড)-এ মনোনীত করেছিল প্রথমবারেই। তবে তিনি ভালোবাসতেন অভিনয়। ফলে দারুণ সুদর্শন হয়েও একাধারে সিনেমা, মঞ্চ ও টিভিতে অভিনয় করে গিয়েছেন। পুরস্কার নয়, মানুষের ভালোবাসাই তার আকাংখিত ছিল।
কয়েকবার অনেকগুলো ভালো পুরস্কারে নাম লেখালেও অনেক দেরীতে ১৯৮১ সালে অ্যামি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছেন সেরা সহ-অভিনেতার। একজন রোমান সিনেটর বা প্রাচীন রোমের নগর রাষ্ট্রের সংসদ সদস্য হিসেবে তার অনবদ্য অভিনয় চিরকালের জন্য তোলা আছে এবিসির মিনি সিরিজ ‘মাসাদা’তে। জায়গাটি এখন ইসরাইলে। দুর্গনগর, জুদিয়ান মরুভূমির মধ্যে। তবে তার অনেক আগেই বিখ্যাত এই অভিনেতা মানুষের ভালোবাসা ও তুমুল অভিনয় শৈলী প্রদর্শন করে চলেছেন। ১৯৭০ সালে বেরিয়েছে তার ‘দি ওম্যান’। ছবিটি এখনো সেরা। এটি সেই সুবিখ্যাত, টান, টান উত্তেজনার ও সেবা প্রকাশনীর অনবদ্য ‘অশুভ সংকেত’। ডেমিয়েন থর্নের বিপক্ষে খ্রিস্টান পাদ্রীদের লড়াইয়ের কাহিনী। ‘দি ওম্যান’ ছবিতে একজন সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। সেই থেকে সিনেমাভক্তদের কাছে সবসময় প্রিয় চরিত্র। ঠিক ২৭ বছর আবার তুমুল এই অভিনেতা সিনেমার দর্শকদের সারা বিশ্বেই চমকে দিলেন জেমস ক্যামেরনের ‘টাইটানিক’-এ। ভালোবাসার এই গল্পে তিনিও আছেন দারুণভাবে।
তার অন্য বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে আছে টাইম ব্যানডিটস (১৯৮১), দি ফেঞ্চ লেফটেন্যান্ট’স উইম্যান (১৯৮১), থর্ন (১৯৮২) ও দি ম্যান উইথ টু ব্রেইনস (১৯৮৩)। স্মরণীয় অভিনয় করেছেন ছবিগুলোতে ডেভিড ওয়ার্নার।
টিভি সিরিজেও কাজ করেছেন ভালোবেসে। নিজের নামটি লিখে রেখেছেন চিরকালের জন্য ‘পেনি ড্রেডফুল’, ‘রিপার স্ট্রিট’, ‘ডক্টর হু অ্যান্ড টুইন পিকস’ সিরিজে একের পর এক পর্বে।
মার্কিন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক জর্জ সি. স্কটের নামে টিভি চ্যানেল জর্জ সি. স্কট টিভিতে চার্লস ডিকেন্সের ‘অ্যা ক্রিসমাস ক্যারল’ থেকে বানানো বব ক্যাচিট চরিত্রটিতে দারুণ করেছেন তিনি।
শেষের দিকে অন্যতম চরিত্র হলো- ডিজনির ২০১৮ সালে ‘মেরি পপিনস রিটার্ন’ নামের রিমেক ছবিতে কাজ।
স্ট্রার ট্র্যাক সিরিজের কয়েকটি ছবিতেও কাজ করেছেন বব ওয়ার্নার।
ওএস।