মৌকে নিয়ে লোকমান যাচ্ছেন কোরিয়ায় মূকাভিনয়ে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়ে ওঠা ও পারফরমেন্সের মাধ্যমে আলো ছড়ানো মূকাভিনেতা মীর লোকমান। তার হাতে ২০১১ সালের ২৭ ফেরুয়ারি জন্ম নিয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন (ডুমা)। এখন তাদের ১১ বছর। কর্মগুণে অত্যন্ত পরিচিত সংগঠন। 'না বলা কথাগুলো না বলেই হোক বলা’ অনন্য শ্লোগানে খুব নিবেদিত এই ছেলেটির সংগঠন।
অন্যদের শিখিয়ে রুটি, রুজির ব্যবস্থা করতে লোকমান ২০১৯ সালে তৈরি করেছেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মূকাভিনয় শেখার জন্য আইএমএম (ইনস্টিটিউট অব মাইম অ্যন্ড মুভমেন্ট)।
তার নেতৃত্বে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনেক জেলায় পরিচিতদের মাধ্যমে মাইমের বহু কর্মশালা ও প্রদর্শনী করেছে ডুমা এবং আইএমএম।
পাশের দেশ ভারত, দূরের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও এশিয়া-ইউরোপের আর্মেনিয়ায় মূকাভিনয় প্রদর্শনী করেছেন পরিচিতদের মাধ্যমে, কাজের গুণে।
এভাবে ৭শর বেশি মূকাভিনয় করেছেন লোকমান ও তার বন্ধুরা।
মীর লোকমানের বিশ্বাস-“মাইম’ নিছক বিনোদন মাধ্যম নয়। শক্তিশালী প্রাচীন এক শিল্পমাধ্যম। অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি ও চলাফেরার মাধ্যমেই বলা কাহিনী। অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক-আজকের দুুনিয়ায়ও অত্যাচারী-শোষকের বিপক্ষে লড়াইয়ের শক্তিশালী হাতিয়ার, সমাজ পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।’
লোকমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক ছাত্র। ফলে এই শিল্পমাধ্যমে তিনি অত্যন্ত যোগ্য অ্যাকাডেমিক। এর বাদেও লোকমানের প্রতিটি মাইমই গল্পনির্ভর। সবই সমসাময়িক ও প্রাসঙ্গিক। তারা সমাজের অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। মাইমের নির্বাক ভাষায়।
আইএমএম (ইনস্টিটিউট অব মাইম অ্যন্ড মুভমেন্ট)তে লোকমানের সঙ্গী পরিচালক মৌসুমী মৌ ও মাহবুব আলম।
এ মাসের শেষ তিনটি দিন, ২৯ থেকে ৩১ জুলাই লোকমান ও মৌ থাকবেন দক্ষিণ কোরিয়াতে। তারা খুকখাং-কনে যাবেন। কাউন্টিটির এখন নাম খুকখাং। এখানেই বসবে ‘৩১তম একক অভিনয় উৎসব ২০২২’।
আন্তর্জাতিক উৎসবটিতে নারী ও পুরুষের দল মৌ-লোকমান তিনটি প্রদর্শনীতে করবেন মূকাভিনয়ে।
সেগুলো হলো ভিন্ন ভিন্ন গল্প-‘রং, রক্ত ও একটি চিৎকার’ ‘জীবন : যেখানে যেমন’ ও ‘অস্বীকৃতি’। তিনটি মিলিয়ে আবার একটিই মৌলিক কাহিনী। মোট ৩০ মিনিটের। গল্পনির্ভর নির্বাক নাটকগুলোর আয়োজন হবে দুটি ভিন্ন উৎসব মঞ্চে।
যাচ্ছেন বলে খুব খুশি তরুণ মুকাভিনেতা মীর লোকমান। বলেছেন, ‘আমাদের ছাড়াও ভারত, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মাইম শিল্পীরা অংশ নেবেন এই আয়োজনে। আমরা অনেক কিছু শিখতে, জানতে ও কাজে লাগাতে পারবো ভবিষ্যতে।’
পাঁচটি দেশের দারুণ সব মূকাভিনেতা ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ নানা দেশের দর্শকদের সামনে নির্বাক লোকমান ও তার বন্ধু মৌ’র ‘রং, রক্ত ও একটি চিৎকার’ হলো, বহু ত্যাগ ও জীবনের বিনিময় এবং মুক্তিযুদ্ধের রক্ত রাঙা পথে পাওয়া আমাদের লাল-সবুজ পতাকা পাওয়ার কাহিনী। লোকমানের মনের মতো করে গড়া গল্প।
‘জীবন : যেখানে যেমন’ এক পথশিশুর জীবন ও বাস্তবতা এবং স্বপ্ন। এমন তো হাজার ঘোরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। লোকমানের চেনা গল্প ও নির্দেশনা।
‘অস্বীকৃতি’ নারীর প্রতি বর্বরতার করুণ ইতিহাস। নির্দেশক শাহরিয়ার শাওন। তবে তিনি যাচ্ছেন না দক্ষিণ কোরিয়াতে। গুছিয়ে দিয়েছেন সব। অভিনয় করবেন লোকমান। বাকি কাজে মৌ। মূকাভিনয়ের তিনটি প্রদর্শনীরই আবহ গীত, প্রপস, আলোক নির্দেশনা প্রাচ্যনাটের সাবেক ছাত্রী মৌসুমী মৌ’র। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশস নামের অত্যন্ত ভালো বিভাগটির সাবেক ছাত্রী। তাদের ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন (ডুমা)’র সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রথম আলো বন্ধুসভার অন্যতম কর্মী। অভিনেত্রী, মাইম আর্টিস্ট ও উপস্থাপিকা। উপস্থাপনায় নিয়মিত। মাইমে আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন এই শিল্পী।
লোকমান জানিয়েছেন, ‘আমাদের তিনটি প্রযোজনাই আধুনিক। গল্পগুলো নতুন, চিরকালীনও বটে। আধুনিক প্রপস, সেট ও আলোর ব্যবহার আছে। করেছে মৌ দারুণ। অনেকবারের প্রযোজনাগুলো নতুন দেশের নব মানুষদের সামনে নতুন ভাবে প্রদর্শন করব। মূকাভিনয়ে শিল্পিত অন্য বাংলাদেশকে তুলে ধরব দক্ষিণ কোরিয়াতে।’
ওএস।