বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সারাদেশে দায়ের হওয়া একের পর এক মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার নিয়ে বিতর্ক ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এখন থেকে এসব মামলায় কাউকে গ্রেফতারের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে, এবং গ্রেফতারের জন্য উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত প্রমাণ পেশ করাও হবে বাধ্যতামূলক।
গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রুজু করা মামলাগুলোর অধিকাংশেই এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অত্যাধিক। এসব মামলায় আসামি গ্রেফতারের আগে তদন্তে প্রাপ্ত প্রমাণ যেমন—ভিকটিম, বাদী, প্রত্যক্ষদর্শী, ভিডিও, অডিও, স্থিরচিত্র, মোবাইল কললিস্ট (সিডিআর) ইত্যাদি সংগ্রহ করে, তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করতে হবে। অনুমোদন ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।
শনিবার (১২ এপ্রিল) গণমাধ্যমে এই বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, “কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড়া না পান—সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।”
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক হারে মামলা দায়ের করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই একেকটি মামলায় হাজারের বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি—এমন তথ্য উঠে এসেছে প্রাথমিক অনুসন্ধানে।
এই ধরনের মামলায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, এমনকি ব্যক্তি বিরোধ বা প্রতিপক্ষতার জেরে নাম জুড়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। আসামি করার বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন বা “মামলা বাণিজ্য”-এর কথাও উঠে এসেছে বিভিন্ন মহলের বক্তব্যে।
এর আগেও, পুলিশ সদরদপ্তর থেকে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর একটি সার্কুলারে বলা হয়েছিল, সঠিক তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও গ্রেফতার করা যাবে না। এমনকি প্রাথমিক তদন্তে কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা না থাকলে, তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথাও বলা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও বারবার জানানো হয়েছে—“মামলা হলেই গ্রেফতার করতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।”