‘র ক্যানভাস বার’ এর ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি
রাজধানীর গুলশানে ‘র ক্যানভাস বার’ এ অভিযান চালিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। অভিযানে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে সংস্থাটি। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) এনবিআর-এর ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর এসব তথ্য জানায়।
‘র ক্যানভাস রেস্টুরেন্ট এন্ড বার’ ৪১১, আর এম সেন্টার (৪র্থ তলা), ১০১ গুলশান এভিনিউ, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২ এ অবস্থিত। এর নিবন্ধন নং- ০০২৮৪৭০০৯-০১০১। প্রতিষ্ঠানটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে বারে মদ ও মদ জাতীয় দ্রব্য এবং রেস্টুরেন্টে খাবারের সেবা প্রদান করে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত সেবা বিক্রি গোপন করে চালান ব্যতিত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘ দিন যাবৎ সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার উপ-পরিচালক জনাব তানভীর আহমেদ এর নেতৃত্বে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হয়। উপস্থিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীগণ মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি এবং মাদক সংক্রান্ত রেজিস্টার হতে মাদক দ্রব্যের মজুদের পরিমাণ নির্ণয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এছাড়া মাদক সংক্রান্ত রেজিস্টারে উল্লেখিত মজুদের পরিমাণের সহিত ওয়্যারহাউজ এবং দুটি কাউন্টারে রক্ষিত দেশি-বিদেশি মাদক দ্রব্যের তথ্য যাচাই করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুকায়িত অবস্থায় জব্দ করা হয়। এসব তথ্যের সাথে ভ্যাট দলিলাদির সাথে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।
প্রতিষ্ঠানটির মার্চ ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী ৬ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৮২১ টাকার বিক্রয় মূল্য (সম্পূরকশুল্ক এবং মূসকসহ) যার উপর ৭৯,৫৭,৯৩৩ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গুলশান ভ্যাট সার্কেল-৪ এ দাখিলপত্রের মাধ্যমে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৯ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে ৭৪ লাখ ৮ হাজার ৩১৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া যায়। এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ৮৭ হাজার ৬৮৯ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়মূল্যের উপর ৮৮ লাখ ৪২ হাজার ১৪৮ টাকা সম্পূরক শুল্ক প্রযোজ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গুলশান সার্কেল-৪ এ দাখিলপত্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৯০ হাজার ১৩৫ টাকা সম্পুরক শুল্ক পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে ৮৬ লাখ ৫২ হাজার ১৩ টাকা সম্পুরক শুল্ক ফাঁকির তথ্যও পাওয়া যায়। এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ১ লাখ ১ হাজার ৬৩২ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য।
এছাড়া, সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটির রেজিষ্ট্রার অনুসারে কম মদ ও মদজাতীয় পণ্য মজুদ থাকায় এক্ষেত্রে ভ্যাট বাবদ ৩৭ হাজার ৪০৪ টাকা এবং সম্পুরক শুল্ক বাবদ ৪১ হাজার ৫৬০ টাকা প্রযোজ্য হবে।
তদন্ত অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাট এর পরিমাণ ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৮ টাকা, সম্পুরক শুল্ক বাবদ ৮৮ লাখ ৮৩হাজার ৭০৮ টাকা এবং সুদ বাবদ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩২১ টাকাসহ সর্বমোট ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৭ টাকা সরকারি রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।
এছাড়া ভ্যাট আইনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে হাতে লেখা কাঁচা চালান ইস্যু করতে দেখা যায়। ইএফডি স্থাপন করা সত্ত্বেও ক্রেতাদের মূসক-৬.৪ দেওয়া হয়নি। এটি ভ্যাট আইনের লঙ্ঘনজনিত অপরাধ।
উল্লেখ্য, বারে যে কোন খাবারের উপর ১৫% ভ্যাট ও ২০% হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য।
সোমবার এসংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে উদঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায় ও অনিয়ম সংঘটনের দায়ে আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে মামলাটি সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে। একইসাথে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরো মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
/এএস