রাজধানীতে প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার
ঢাকায় প্রতারণার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা অভিনব উপায়ে লাখ লাখ টাকার ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য হাতিয়ে পালিয়ে যান। তারা কখনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, কখনো ঊর্ধ্বতন কর্মকতা, আবার কখনো ঠিকাদার সেজে কোনো দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য কেনেন। এরপর কৌশলে সেসব পণ্য নিয়ে পালিয়ে যান।
সোমবার (২০ ফ্রেব্রুয়ারি) মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ মহসীন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন, ফখরুজ্জামান তপু ভূইয়া, মো. মোবারক হোসেন, মো. খোকন মিয়া এবং মো. মুশফিকুর রহমান মুন্সি।
পুলিশ জানায়, দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঘুরে ঘুরে তারা এমন প্রতারণা করেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি এভাবেই ২৫টি ফ্যান নিয়ে পালিয়ে যান তারা। পরে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি অভিযানে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে মিরপুর মডেল থানা।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইবনে সিনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেজে ইলেক্ট্রো মার্ট নামের একটি দোকান থেকে ২৫টি কনকা সিলিং ফ্যান কেনেন।
পরে, ফ্যানের টাকা চাইলে ক্যাশ নেই উল্লেখ করে একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের স্বাক্ষরের সঙ্গে চেকে করা স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই, এমনকি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নামের সঙ্গে মিল নেই। এদিকে এই সুযোগে ফ্যান নিয়ে পালিয়ে যান ফখরুজ্জামান ও তার চক্র। পরে, থানায় অভিযোগ করলে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের একটি দল গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
তিনি বলেন, ‘ফখরুজ্জামান ও তার চক্রের প্রতারণার মূল হাতিয়ার ছিল পরের জায়গা এবং পরের ভবন। তারা প্রথমে যেকোনো একটি নির্মাণাধীন ভবন রেকি করেন। পরে সুযোগ বুঝে নিজেদেরকে সে ভবন নির্মাণের ঠিকাদার পরিচয় দেন। ভবন নির্মাণে ক্যাবল প্রয়োজন বলে পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে ক্যাবল কিনে আনেন। এরপর ক্যাশ টাকা নেই বলে তাদেরকে চেক দেন। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় অ্যাকাউন্টে টাকা নেই! সেখানে দেওয়া স্বাক্ষরও ভুয়া!
এদিকে এই ফাঁকে সেই ক্যাবল নিয়ে পালিয়ে যান ফখরুজ্জামান ও তার চক্র। এইভাবে এই চক্র গোপালগঞ্জ থেকে প্রায় সোয়া লাখ টাকার, মৌলভীবাজার থেকে প্রায় এক লাখ টাকার, কিশোরগঞ্জ থেকে প্রায় এক লাখ টাকার, সুনামগঞ্জ থেকে সোয়া লাখ টাকার, মিরপুর থেকে প্রায় ৭৫ হাজার টাকার পণ্য নিয়ে পালিয়ে যান।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন আরো বলেন, তার নাম ফখরুজ্জামান তপু ভূইয়া। কিন্তু তার চেকে নাম ইকবাল হোসেন! ভুয়া নাম দিয়েই ব্যাংকে একাউন্ট খোলেন তিনি। পণ্য কেনার পর সেই একাউন্টেরই চেক দেন তিনি! কিন্তু ব্যাংকে দেখা যায় ইস্যুকৃত চেকে সেই স্বাক্ষরও ভুয়া!
পুলিশ জানায়, ফখরুজ্জামান একজন প্রতারক। কিন্তু তিনি কখনো সাজেন ঠিকাদার, আবার কখনো সাজেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান! ঠিকাদার সেজে নির্মাণাধীন ভবনের জন্য ক্যাবল কেনার নামে প্রতারণা করেন।
ওসি মহসীন আরও বলেন, ফখরুজ্জামান ছিলেন প্রবাসী। তিনি সৌদি আরব থাকতেন। সেখানেই চাকরি করতেন। আয়ও ভালো ছিল। কিন্তু আইপিএল জুয়ায় তার দুর্দিন নেমে আসে। আইপিএল অনলাইন জুয়ায় ১০ লক্ষাধিক টাকা খোয়ানোর পর দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর হয়ে যান প্রতারক।
কেএম/এমএমএ/