ছেলেকে দেখতে এসে যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

তাবলিগ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে ছিলেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল ওয়াহেদ মণ্ডল (৭০)। ছদ্মনামে তাবলিগ দলের সঙ্গে নিয়মিত স্থান পরিবর্তন করতেন তিনি। পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করতেন অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম।
দীর্ঘ নজরদারির পর অবশেষে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ওয়াহেদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মুগদা থানাধীন মান্ডা এলাকায় ছেলের বাসায় দেখা করতে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেনেন্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার ওয়াহেদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭টি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আব্দুল ওয়াহেদ সংগঠনের গাইবান্ধা সদরের সদস্যসচিব ছিলেন।
র্যাব জানায়, তার বাবা আব্দুল জব্বারও একই মামলার মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। জব্বার গাইবান্ধা সদর এলাকার শান্তি কমিটি এবং সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। পিতার যোগসাজসে আব্দুল ওয়াহেদ ও তার ভাই দুজনেই শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালায়।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৯ সালে গাইবান্ধা নিম্ন আদালতে আব্দুল ওয়াহেদসহ ৫ জনকে আসামি করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একটি মামলা দায়ের করেন আব্দুর রউফ। পরে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলে আব্দুল ওয়াহেদসহ অন্যান্য আসামিরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকেন। ২০১৬ সালে জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এবং পরবর্তী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হলে আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তী তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় দুই আসামি আব্দুর জব্বার ও রঞ্জু মিয়া মারা যায়। আরও দুইজন আসামি জাছিজার রহমান ও মোন্তাজ আলী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং সাভার এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। এরপর তিনি একটি তাবলিগ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় তাবলিগ করে আত্মগোপনে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত তাবলিগ দলের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতেন। এসময় তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অন্যের রেজিস্ট্রেশন করা সিম দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করতেন।
আত্মগোপনে থাকাকালীন ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন ওয়াহেদ। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এসজি
