ঢাকায় সিটি করপোরেশনের ২৩৫টি খেলার মাঠ আছে, প্রয়োজন ২০০৪টি
ঢাকার শহুরে আধুনিক জীবনের যান্ত্রিকতায় শিশুদের ওপর যেসব শারীরিক এবং মানসিক চাপ তৈরি হয়, সেগুলোর ক্ষতিকর দিক জানানো, সমাধানের উপায় আলোচনা এবং সুস্থ, চাপমুক্ত শৈশব একটি শিশুকে কতটা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে-এই মানবিক অতি জরুরী বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন ইনডোর চেইন প্লে-গ্রাউন্ড বাবুল্যান্ডের সমিনারে আলোচকরা।
২২ অক্টোবর, ২০২২ বাবুল্যান্ডের বাড্ডা শাখায় সেমিনারটি হয়েছে।
‘বাবুল্যান্ড’ দেশের সবচেয়ে বড় ইনডোর চেইন প্লে-গ্রাউন্ড। শাখাগুলোর মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার শিশুকে ঢাকায় পরিসেবা দিয়ে আসছে।
তাদের সেমিনারের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘বর্তমান সময়ে শিশুদের যথাযথ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের গুরুত্ব’।
ঢাকার চেইন শিশুতোষ ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ড বাবুল্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইশনাদ চৌধুরী জানিয়েছেন ‘ঢাকা শহরে মাত্র ২শ ৯৪ একর খেলার মাঠ রয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ১ হাজার ৮শ ৭৬ একর। ফলে ঢাকায় প্রয়োজনের তুলতায় মাত্র ১৬% খেলার খোলা মাঠ আছে। ফলস্বরূপ, প্রতিদিন ৭৭% শিশু পর্যাপ্ত শারীরিক ও মানসিক কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন হৃদরোগ, এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বয়ে আনছে।’
বাবুল্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইশনাদ চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণ করতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে সমাজকে সহায়তায় আমাদের এই উদ্যোগ।’
প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনামুল হক বলেন, “শিশুদের সেবা এবং সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে আমরা ‘বাবুল্যান্ড সায়েন্স’ তৈরি করেছি। শাখাগুলোতে আরো রয়েছেন ‘হ্যাপি হেল্পার’। যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা বৃদ্ধিতে আমরা প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করি। নিয়মিত সুপার ফান ইভেন্ট, ভালো অভ্যাস গড়ার চর্চা, অ্যাক্টিভিটি ক্লাস ইত্যাদি আয়োজন করা হয়।’
সেমিনারে আলোচকরা উল্লেখ করেছেন, বর্তমান জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) জরিপ মতে, ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ২শ ৩৫টি ছোট, বড়, মাঝারি খেলার মাঠ রয়েছে। যেখানে প্রয়োজন ২ হাজার ৪শটি।
খেলার জায়গার অভাব ঘুচাতে শিশুরা উদ্বেগজনক হারে মোবাইল ও স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। যা তাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উই আর সোশ্যাল’ ও ‘হুট স্যুট’ তথ্য মতে, ঢাকার শিশুরা প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় ইন্টারনেটে সময় কাটাচ্ছে। অল্প বয়স থেকে এমন বিঘ্নিত মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ পরবর্তীতে কিশোরদের মধ্যে তৈরি করতে পারে হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা।
সেমিনারে বক্তাদের তথ্যবহুল আলোচনার মধ্য দিয়ে উল্লেখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও শিশুদের সুস্থ বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো অন্যান্য বিভিন্ন দিক, যেমন-নগরকেন্দ্রিকতা, যানজট, শব্দদূষণ, অপরাধের হার বৃদ্ধি ও শিশুদের নিরাপত্তার অভাব প্রতীয়মান হয়েছে।
সবুজ ঘাসের মাঠ, গাছপালা ও মুক্ত বাতাসের স্বাধীনতায় এই সময়টিতে শিশুদের একটু, একটু করে বেড়ে ওঠার কথা কিন্তু ইট-কাঠের দালানে ঠাসা আধুনিক শহরগুলোতে এমন সবুজের মাঠ আর মুক্ত বাতাস দূর্লভ হয়ে পড়েছে। এই দেশের অধিকাংশ শিশুর যথাযথ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে হয় না। বাবুল্যান্ড আয়োজিত সেমিনারের আলোচনায় তুলে ধরে আলোচকরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পরিত্রাণের উপায় অনুসন্ধানগুলোতে সকলকে আহ্বান জানান।
এই বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নততর ভবিষ্যৎ গঠনে সকলের অংশগ্রহণ কামনার মধ্য দিয়ে বাবুল্যান্ডের সেমিনার শেষ হয়েছে।
বাবুল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কোম্পানির অংশীজন, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়িক অংশীদার, সম্পৃক্ত ভেন্ডর ও গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
ওএফএস।