৩ বছরে ২৯ হাজার ফ্রিল্যান্সার বানাবে সরকার, পাবে দৈনিক ভাতা
ছবি সংগৃহিত
ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশে থেকেই বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেন তরুণরা কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যে আগামী তিন বছরে প্রায় ২৯ হাজার তরুণ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করবে সরকার। এই প্রশিক্ষণ নিতে কোনো টাকাপয়সাও দেয়া লাগবে না সরকারকে, উল্টো দৈনিক মোট ৫০০ টাকা করে ভাতা পাবেন তরুণরা।
‘দেশের ৪৮টি জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প’ নামের নতুন এই প্রকল্পে সরকারের খরচ হবে ৩০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মেয়াদ। সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় একনেক সভায় সব মিলিয়ে ১০টি প্রকল্প উঠতে পারে অনুমোদনের জন্য।
প্রশিক্ষণ পাওয়া যাবে যেভাবে
এই প্রশিক্ষণ দিতে প্রতিটি জেলায় ২৫টি কম্পিউটার ও হাইস্পিড ইন্টারনেট-সংবলিত দুটি ল্যাব স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ল্যাবে ২৫ জন করে প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। প্রতি জেলায় একেক ব্যাচে ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ সুযোগ পেতে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষেরা আবেদন করতে পারবেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর প্রশিক্ষণার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তিন মাসের এই প্রশিক্ষণকালে প্রত্যেকে দৈনিক ২০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। আর খাবারের জন্য দৈনিক ৩০০ টাকা হারে দেওয়া হবে। এভাবে সারা দেশে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৮০০ জন ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হবে, যাদের অর্ধেকই হবেন নারী।
আড়াই বছর আগে ১৬ জেলার জন্য এমন আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। নতুন প্রকল্পটি পাস হলে দেশের সব জেলাতেই ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুবিধা বিস্তৃত হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রশিক্ষণে কী কী থাকবে
পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশিক্ষণার্থীদের দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে হাতে কলমে ৮টি বিষয় শেখানো হবে।
তিনি বলেন, “ফ্রিল্যান্সিং সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনলাইনে তাদের কাজ করতে করা। এজন্য প্রথমেই ইংরেজিতে যোগাযোগ করার মতো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাই এই প্রশিক্ষণে ফ্রিল্যান্সিংয়ের উপযুক্ত একটি বেসিক ইংরেজি শেখানোর কোর্স থাকবে।
“এছাড়াও কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয়, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণার্থীদের সফট স্কিল ট্রেইনিং দেওয়া হবে।”
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে ২০২২ সালের জুন থেকে ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য দেশের ১৬ জেলায় একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ৪৭ কোটি ৫০ রাখ টাকায় এসব প্রকল্পে মোট ৬ হাজার ৪০০ জনকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগামী জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রশিক্ষণ নেওয়া ৮১৩ জন বা ৬৪ শতাংশ ইতোমধ্যেই উপার্জনে যুক্ত হয়েছেন। ২১ শতাংশ বিভিন্ন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা ৪ লাখ ৭ হাজার ডলার আয় করেছেন।