জবি শিক্ষার্থীদের হাফ পাস মানছে না সদরঘাটগামী বাসগুলো
ঢাকার বিভিন্ন রুট হতে চলাচলকারী সদরঘাট গামী সকল বাসে সপ্তাহে সাত দিনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের জন্যে হাফ ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা তোয়াক্কা করছে না এসব নিয়মকে।
প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই আদায় করছে মূল ভাড়া ৷ শিক্ষার্থীরা নিয়ম অনুযায়ী আইডি কার্ড প্রদর্শন করার পরেও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবকেই দোষারোপ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়া রাখার জন্য অনুরোধ করলে নানা কারণ দেখিয়ে হাফ ভাড়া নিতে চান না বাসের হেল্পাররা। ছুটির দিনের অজুহাত কিংবা আইডি কার্ড দেখানো সত্ত্বেও নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের ঘটনা ঘটছে বার বার। ছেলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হাফ ভাড়া নিলেও নারী শিক্ষার্থীদের কাছে হাফ ভাড়া নিতেই চান না বাস সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার কিংবা ছুটির দিন হাফ ভাড়া রাখার ব্যাপারে হেল্পাররা অনেকটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলেন ‘শুক্রবারে কোনো হাফ ভাড়া নাই, এডা সরকারের নিয়ম, আমগো নিয়ম না।’
আরও পড়ুন: সব সময়ই বাসে হাফ ভাড়া সুবিধা পাবে জবি শিক্ষার্থীরা
অথচ গতবছরের ৩০ অক্টোবর প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বাসমালিকদের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের জন্যে সার্বক্ষণিক হাফ পাশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
কিন্তু বৈঠকের ৫ মাসের মাথায় এসেই হাফ-পাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রায়ই উত্তপ্ত বাক্য প্রয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে বাস সংশ্লিষ্টদেরর বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রায়ই এ রকম সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার পর সাময়িক সমাধান করলেও স্থায়ী সমাধানে তাদের কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। বাংলার শিক্ষার্থী মাহবুবা জানান, শুক্রবারে আমি হাফ ভাড়া দিতে চাইলে তারা হাফ ভাড় নিতে চায় না। বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। বলে এসব নিয়ম আমরা জানি না।
সাভার পরিবহন বাসে যাতায়াত করা তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, ক্লাস তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলে আমি ভার্সিটি বাসের জন্য জন্য অপেক্ষা না করে সাভার পরিবহনেই বাসায় যাই। কিন্তু একা থাকার কারণে প্রায় সময়ই আমার সঙ্গে কন্ট্রাকটরের কথা কাটাকাটি হয়। অনেক সময় একা থাকার ফলে আমাকে বাধ্য হয়েই পুরো ভাড়া দিতে হয়৷ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব তারা যেন সংশ্লিষ্ট সকল বাসে নির্দেশনাগুলো বিজ্ঞপ্তি আকারে টানানোর নির্দেশ দেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাভার পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মালিক সমিতি আমাদেরকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি আকারে কিছু জানায়নি। তারপর আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছুটির দিনগুলো ছাড়া হাফ ভাড়া নিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের স্টাফদের অনেকেই না জানার কারণে মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। সেটা আবার তাৎক্ষণিক সমাধান হয়ে যায়।’
আজমেরী পরিবহনের স্টাফ হামিদুর রহমান বলেন, ‘সার্বক্ষণিক হাফ পাস এমন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমরা জানি না, তারপরও শুক্রবার ছাড়া অন্য দিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা হাফ ভাড়া নিয়ে থাকি ‘
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা সদরঘাটগামী সকল বাসের মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে তারা যেন এই বিষয়টি তাদের বাসের ড্রাইভার এবং কর্মচারীদেরকে জানিয়ে দেয়। তারপরও যদি কোনো বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়ার পরিবর্তে মূল ভাড়া নেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থী যেন বাসের নাম এবং নাম্বারসহ আমাদের নিকট অভিযোগ করে। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’
এমএমএ/