‘যদি আত্মহত্যা করি, এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের’
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাজ্জাদের সংবাদ সম্মেলন । ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা আবেদন চেয়ে সাড়া না পাওয়ায় আত্মহত্যার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। আর আত্মহননের প্ররোচণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তোলার কথা বলেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের সঙ্গে ফার্মেসি বিভাগের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ছিল গত ৫ নভেম্বর। মাঠে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের খেলোয়াড় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। সেটি পৌঁছায় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে। ৫ নভেম্বরের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে ব্যক্তিগতভাবে নেন ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি মৃধা। তিনি ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল নিয়ে ক্রমাগত সাজ্জাদকে হুমকি দিয়ে আসছেন। সবশেষ হত্যার হুমকি দেন।
বিষয়টি লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে নিরাপত্তা চেয়েছেন সাজ্জাদ; তবে আমলে নেয়নি প্রশাসন। ফলস্বরূপ অভিযুক্ত রনি মৃধা এখনো হুমকি-ধামকি ও শাসিয়ে যাচ্ছেন সাজ্জাদকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সাজ্জাদ।
সংবাদ সম্মেলনে সাজ্জাদ বলেন, “যদি আত্মহত্যা করি তবে এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। গত ১১ দিন ধরে আমি ঠিকভাবে ঘুমাতে পারছি না। ভয় আর হতাশার মধ্যে দিন কাটছে। যারা আমাকে বেধড়ক মারধর করলো, তারা ক্যাম্পাসে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলবে। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারি। যদি কখনো আত্মহত্যা করি, এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।”
এ সময় হত্যার শিকার বা আত্মহত্যা করলে মরদেহ যেন পরিবারের কাছে পাঠানো হয় সেই আহ্বানও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৫ নভেম্বর মাঠের দ্বন্দ্ব আবাসিক হল পর্যন্ত টেনে নেন রনি মৃধা। ওইদিন রাতে সাজ্জাদের হলে দলবল নিয়ে তাকে মারধর করেন। এতেও আক্রোশ মেটেনি তার। পরদিন আবারও সাজ্জাদের হলে গিয়ে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করতে গেলে সেটি ঠেকাতে গিয়ে চোখে গুরুতর আঘাত পান সাজ্জাদ। মারধরে আহত সাজ্জাদকে ভর্তি করা হয় গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে।
হাসপাতাল থেকে ফিরে এ ঘটনার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন সাজ্জাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ এমদাদুল হক নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। পরদিন ৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ডিন মো. হাসিবুর রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের পর আবারও হম্বিতম্বি শুরু করেন রনি মৃধা। গত ১১ নভেম্বর দুপুরে দুই সহযোগীকে নিয়ে সাজ্জাদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এ সময় তদন্ত কমিটিকে তাদের শেখানো কথাবার্তা বলতে চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় সাজ্জাদ ও জাহিদ নামে দুজনকে হত্যার হুমকি দেন তারা।
ঘটনার রেশ বাড়তে থাকে। সঙ্গে বাড়তে থাকে সাজ্জাদের নিরাপত্তাহীনতা আর ভয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিশ্রুতিতেই আটকে থাকে। নিরাপত্তাহীনতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোয় গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনে বসেন সাজ্জাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রাধ্যক্ষের আশ্বাসে চার ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে অনশন ভাঙেন তিনি।
প্রশাসনের এই আশ্বাসেও কোনো কাজ না হওয়ায় মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসে আত্মহননের হুঁশিয়ারি দিলেন সাজ্জাদ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান গনমাধ্যমকে বলেন, “সাজ্জাদ হোসেনের সংবাদ সম্মেলন ও আত্মহত্যার হুমকির বিষয়ে অবগত নই। তার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। সব কিছু যাচাই-বাছাই করতে একটু সময় লাগে। দুয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাব। এরপর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”