উত্তপ্ত লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক, তদন্ত কমিটি গঠন
শিক্ষকদের অশ্লীল আচরণ ও অনিয়মিত পাঠদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকের পদত্যাগ দাবীতে ফুঁসে উঠেছে ছাত্র/ছাত্রীরা। এ ঘটনায় পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানা যায়। কমিটির সদস্যরা হলেন, ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর মো. আবু দারদা মালী, সিভিল বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম ও কম্পিউটার বিভাগের ইনস্ট্রাক্টর মো. মারুফ হোসেন।
আজ শনিবার বিকেলে ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর মো. আবু দারদা মালী তদন্ত কমিটির গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদানের পর পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় এখনো তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। খুব শীঘ্রই করবেন বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তবে কমিটির অন্য দুই সদস্যকে ফোন দিয়েও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত (৭ মার্চ) ক্লাস বর্জন করে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। এসময় এক শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: জহিরুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা বিভিন্ন অযুহাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে অশ্লীল আচরণ করেন। এ বিষয়ে বারবার জানানো হলেও অধ্যক্ষ কোন পদক্ষেপ নেননি।
স্মারকলিপিতে আগামী (১৫ মার্চ) এর মধ্যে সমস্যার সমাধান না করলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয় ফুঁসে উঠা শিক্ষার্থীরা। এর আগে (১৯ ফেব্রুয়ারী) বিভিন্ন দাবীতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তখন অধ্যক্ষ তাদের দাবী পুরণের আশ্বাস দিলে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। কিন্তু পরর্বতীতে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতেও শ্লোগান দেয়।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, গত (২ মার্চ) বুধবার ৪র্থ পর্বের ১ম শিফটের প্যাক্টিকাল পরীক্ষা চলছিলো। এসময় হঠাৎ করে কম্পিউটার বিভাগের চীপ ইনস্ট্রাক্টর (টেক) আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ মুসফিকুর রহমান শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা দেখাদেখি করে লেখো, তোমাদের মা-বাবার (অশ্লীল ভাষা...) সমস্যা ছিলো। তাই তোমরা এমন করো। জন্ম থেকেই তোরা হারাম হয়ে এসেছিস। তোদের বাবা-মা'র রক্ত হারাম। এছাড়া মেয়েদের বাসঘরের গোপনীয়তা নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক আন্দোলনরত একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিষ্ঠানে এসেছি পড়ালেখার পাশাপাশি নৈতিকতা ও শিষ্টাচার শিখতে। কিন্তু ওনার আপত্তিকর এসব মন্তব্যে শিক্ষার্থীদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত। তারা ক্ষুব্ধ। এজন্য আমরা এই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছি পাশাপাশি তার অব্যহতি ও শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষকে আগামী (১৫ মার্চ) পর্যন্ত সময় দিয়েছি। যদি তিনি নির্দিষ্ঠ সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করেন তাহলে আমরা ক্লাস বর্জন করে কঠোর আন্দোলন করবো এবং অধ্যক্ষেরও পদত্যাগ দাবি করবো।
তারা আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত ক্লাস হয়না, শিক্ষা উপকরণ ঘাটতি অথচ প্রতি বছর টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়, শিক্ষকরা ক্লাসে আসে না, প্যাক্টিকেল ক্লাস হয়না বললেই চলে, টয়লেট ও শ্রেণী কক্ষ ময়লা আবর্জনা থাকে, পরিস্কার থাকে না, শিক্ষকদের হাতে মার্কস থাকায় অনিয়মের প্রতিবাদ করতে পারে না ছাত্ররা।
অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মুসফিকুর রহমান জানান, একটি পক্ষ আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সকালেই ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। আমি সমস্যার সমাধান করবো। তবে স্মারকলিপিটি সাংবাদিকদের দেখানো সম্ভব নয়।
এএজেড