রাবিতে ‘শীত আগমনী উৎসব’ সোমবার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) চারুকলা অনুষদে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘শীত আগমনী উৎসব-১৪২৯’। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবের মূল আকর্ষণ ঢেঁকির ডামি, কারুকার্যে সজ্জিত সূর্যমুখী ফুলের বাগান, অতিথি পাখি সজ্জিত বটগাছ এবং পদ্ম পুকুর তৈরিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যস্ততা দেখা যায়।
এর আগে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন একাডেমিক ভবনের ৩০৮ নম্বর কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে রুম্মান অভি বলেন, বাঙালি জাতির শিল্প ও সংস্কৃতিসত্ত্বার ধারক-বাহক হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদে বরাবরই বৈচিত্র্যময় ঋতুবরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো এবছর আমরা চারুকলা অনুষদের তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত প্রয়াসে আগামী ১২ ডিসেম্বর চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশে ‘শীত আগমনী উৎসব-১৪২৯’ আয়োজন করতে যাচ্ছি। আর এবারের উৎসবের মূল আকর্ষণে থাকবে ঢেঁকির ডামি, কারুকার্যে সজ্জিত সূর্যমুখী ফুলের বাগান, অতিথি পাখি সজ্জিত বটগাছ এবং পদ্ম পুকুর।
তিনি বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ঢেঁকির সম্পর্ক অতি প্রাচীন। এককালে ঢেঁকিতে ধান ভানার পর প্রাপ্ত চাল ভিজিয়ে ঢেঁকির মাধ্যমেই গুঁড়ো করে আটা তৈরি করা হতো। আর সেই আটা দিয়ে বানানো হতো শীতের পিঠাপুলি। যদিও কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলায় এখন আর ঢেঁকির প্রচলন নেই। আমরা এবারের উৎসবে তাই ঢেঁকির ডামির মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের কাছে আমাদের সেই প্রাচীন সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাই।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ঝরা পাতার শীতে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তুলতে এদেশের খালে-বিলে ফোটে লাল পদ্ম, আর সেই খাল-বিলে দিনভর চলে অতিথি পাখির জলকেলি। পাশাপাশি শীতকালে সৌন্দর্যের পরশ বুলিয়ে শিল্পী মনে দ্যোতনা জাগায় হলুদ সূর্যমুখী। আমরা মূলত পদ্ম পুকুর, অতিথি পাখি এবং সূর্যমুখী ফুলের মাধ্যমে চারুকলা প্রাঙ্গণে এদেশের শীতকালীন আবহটিকে উপস্থাপন করতে চাই। এ ছাড়া এই উৎসবকে ঘিরে চারুকলা প্রধান ফটক থেকে শুরু করে চারুকলা মুক্তমঞ্চসহ পুরো প্রাঙ্গণকে শিল্পীর রঙ তুলির ছোঁয়ায় সাজানো হবে বর্ণিল সাজে। পাশাপাশি অনুষদ প্রাঙ্গণে বসবে হরেক রকমের ৬টি পিঠার স্টল।
তিনি আরও বলেন, দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করা হবে ১২ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায়। প্রথম পর্বে থাকবে- ‘শীত আগমনী উৎসব-১৪২৯’ এর উদ্বোধনী, আলোচনা সভা, চারুকলা অনুষদের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ এবং আনন্দ র্যালি। দ্বিতীয় পর্বে দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত থাকবে সাংস্কৃতিক আয়োজন।
উৎসবের প্রথম পর্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর। এ ছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক, ছাত্র উপদেষ্টাসহ চারুকলা অনুষদের তিন বিভাগের সভাপতি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী।
সংবাদ সম্মেলনে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা বরাবরই বিভিন্ন উৎসবের মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও শিক্ষার্থীরা রাবি চারুকলায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত শীত আগমনী উৎসবে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা সবাইকে একটি সুন্দর আয়োজন উপহার দিবে। তিনি সবাইকে উৎসবে আসার আমন্ত্রণ জানান।
এসময় চারুকলা অনুষদের তিন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসজি