বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যা: বিচারের দাবি সহপাঠীদের
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করেছেন তার পিতা ও তার সহপাঠীরা। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবিও জানান তারা।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বুয়েটের শহীদ মিনারে ফারদিনের জানাজার পর এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বুয়েট ছাত্র ফারদিন নুর পরশ হত্যাকাণ্ডে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের বন্ধু ফারদিন নুর পরশ, পুরকৌশল বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র, গত ৪ নভেম্বর-শুক্রবার আনুমানিক রাত ১১:৩০টার দিকে নিখোঁজ হন। উল্লেখ্য যে, পরবর্তী দিন (৫ নভেম্বর) ফারদিনের সেশনাল কুইজ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত থাকে এবং আমরা তার ক্লাসমেটরা ফারদিনের ব্যাপারে তার পরিবারকে অবহিত করি এবং বুয়েট প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে জানানো হয়। ওইদিনই পরিবারের পক্ষ থেকে রামপুরা থানায় জিডি করা হয়।’
সর্বশেষ গতকাল (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা আনুমানিক ৫:৩০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ভাষ্য হতে স্পষ্ট যে এটা একটা হত্যাকাণ্ড।
আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। িএই ব্যাপারে প্রশাসন এবং মিডিয়াসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।
ফারদিন একজন ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত মেধাবী এবং নির্ঝঞ্ঝাট একজন মানুষ ছিল। এরই মধ্যে আমরা কয়েকটি প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যবিশিষ্ট সংবাদ দেখেছি, যা অপ্রত্যাশিত। চলমান তদন্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা সকলকে অনুরোধ করছি এ ধরনের ভুল তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতেন।
ফারদিনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকায় হলেও তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া শান্তিবাগে।
ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন বলেন, কে বা কারা হত্যা করেছে সে সম্পর্কে আমাদের ধরণা নেই। আমার শত্রু আছে বলে আমি মনে করি না। আমি কারো কোনো ক্ষতি করিনি। আমি সাংবাদিকতা করেছি, এমন কোনো রিপোর্ট করিনি যাতে কেউ আহত হতে পারে। আমি ফিচার ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতাম, ইতিবাচক চিন্তা করতাম। দেশের ইতিবাচক ব্যাপারগুলো উপস্থাপন করতাম।
তিনি আরও বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার ছেলেকে কেউ হত্যা করে থাকতে পারে। তার মরদেহ পচে ফুলে গেছে। আমার ধারণা, তাকে শুক্রবার হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তার ব্যবহৃত ফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ সঙ্গেই পাওয়া গেছে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, আমি দেখতে চাই ওর মুভমেন্ট। যেসব ভিডিও ফুটেজ আছে সেগুলো খুঁজে বের করা হোক। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ে বের হয়ে আসবে কার কার সঙ্গে ফারদিনের যোগাযোগ ছিল। আমি এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, সোমবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর বনানী ঘাট থেকে নিখোঁজ ফারদিন নুর পলাশ নামে ওই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথায় ও বুকে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরা থেকে নিখোঁজ হন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন। পরদিন তার বাবা নূরউদ্দিন রানা রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি জিডি করেন। পরে সন্তানের খোঁজ চেয়ে ফেসবুকে একটি পোস্টও করেন নূরউদ্দিন রানা। সেখানে তিনি বলেন, ফারদিন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাতে নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে শেষবার রামপুরা ব্রিজ এলাকায় দেখা যায়। ওইদিন রাত পৌনে ১১ থেকে ১২টার মধ্যে ফারদিন সেখানে অবস্থান করছিলেন। এরপর তার বুয়েটের হল কিংবা বাসায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তিনি ফেরেনি।
এমএমএ/