তারা মোটেও বাঙালি ছিলেন না : এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন
আজ ৩ নভেম্বর, ‘জেলহত্যা দিবস’ উপলক্ষে সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দীন সিনেট ভবনে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলে নিহত জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ. এম. কামরুজ্জামানের ছেলে ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন।
সভাপতিত্ব করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান ও অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম।
শুরুতেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের মন্ত্রী ও জাতীয় চার নেতার পূণ্যস্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেছেন তারা।
এরপর মূল কার্যক্রম।
জাতীয় চারনেতার অবদান, তাদের হত্যার কারণসহ ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরে প্রবন্ধ পাঠ করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. দুলালচন্দ্র বিশ্বাস।
তিনি বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারসহ হত্যা করা হয়েছে। পরপরই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পরিকল্পনা এঁটেছেন খন্দকার মোশতাক আহমদ ও তার দল।’
অধ্যাপক ড. দুলালচন্দ্র বিশ্বাস আরো বলেছেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অমর চার নেতাকে জেলখানাতে মেরে ফেলার দিন ‘জেলহত্যা দিবস’ নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। এ কারণেই দিনটি নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়। কেবল আমরা ইতিহাস আলোচনা করেছি কিন্তু তাৎপর্যগুলো কী, রাষ্ট্রকাঠামোতে প্রভাব কতোটুকু-তা নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা পরিলক্ষিত হয় না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করার চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছি। প্রতিহত করতে না পারলে জাতির এই মহান সন্তানেরা তাদের কীর্তিসহ একদিন হারিয়ে যাবে। আমাদের কারিকুলামে এই ধরনের পাঠ্যসূচি ছিল প্রায় ৪০ বছর কিন্তু বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে আসল ইতিহাসগুলো তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি তার বক্তব্যের শেষে ‘জাতীয় চার নেতার কীর্তি আরো বেশি করে জনগণকে জানানো হোক’-এ প্রত্যাশা করেন।
বহুদিন হয়ে গেলেও তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্যে ততটা অগ্রগতি না হওয়ায় আশাহত হয়েছেন বিশেষ অতিথি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। আবার ক্ষমতায় এসেই তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শুরু করার জন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি।
অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম. সুলতান-উল-ইসলাম জানান, ‘আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করতে চাই, বাঙালি জাতি তাদের এই বীর সন্তানদের কোনোদিন ভুলবে না। কারণ, তারাই এই জাতির মুক্তিদাতা ছিলেন। তাদের কারো আদর্শই মুছে যাবার নয়। তারা যে পথ দেখিয়েছেন আজ আবার প্রমাণিত হয়েছে-সেই পথই সত্য। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তারা দিক-নির্দেশনা ও সাহসের প্রতীক হিসেবে বেঁচে থাকবেন। তাদের মাধ্যমে আগামীর তরুণ প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে যুগ, যুগ।’
প্রধান অতিথি শহীদ এ.এইচ. এম. কামরুজ্জামানের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন প্রতিবারের মতো এবারও এই দিনটিকে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করার জন্য তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কারণ আলোচনা করেছেন।
তার পিতাসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার বিশদ বর্ণনা করেছেন।
শহীদ এ.এইচ. এম. কামরুজ্জামানের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন তার পিতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমার বাবাকে আমি পাটিতে বসে কাঁসার বাটিতে খাবার খেতে দেখেছি।’
এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন ব্যাথাতুর হৃদয়ে জানিয়েছেন, ‘আজ অসংখ্য মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ফুলে, ফুলে ভরে উঠেছে আমার পিতা ও তার সহযাত্রীদের সমাধিগুলো। যে দেশের মানুষ এত উদার, তারা সে দেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগী মুক্তিযুদ্ধের নায়ক জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করতে পারে-মানা কত কঠিন? আমাকে বলতেই হয়, যারা এ কাজ করেছেন তারা মোটেও বাঙালি ছিলেন না।’
এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটনের দাবি, ‘যারা এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছেন, তারা যাই হোন না কেন, তাদেরকে চিহ্নিত ও বিচার করা হোক।’
‘জেলহত্যা দিবস’ আলোচনা সভার সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার সমাপনী বক্তব্যে দিনটিকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি করেছেন। দেশের প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে জাতীয় চার নেতার জীবনী ও অবদান অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার আরো বলেছেন, ‘এই উদযাপন কতটা কার্যকর হচ্ছে, এখন আমাদের দেখার বিষয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের শহীদ এ.এইচ. এম. কামরুজ্জামানের অবদানের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে তার সুযোগ্য পুত্র খায়রুজ্জামান লিটন ভালো মানুষের রাজনীতি করে যাচ্ছেন। আমরা চাই, তিনি সামনের দিকে আরো এগিয়ে যাবেন।’
অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার শেষে বলেন,‘যেকোনো রেঁনেসায় যারা অগ্রণী ভুমিকা রাখেন, তাদেরকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়। তারই শিকার বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা। আমরা আজকের দিনে তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাদের আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’
লেখা ও ছবি : মাহমুদুল হাসান।
ওএফএস।