অভিযুক্ত বশেমুরবিপ্রবি’র বিখ্যাত প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম এবং কবর যেখানে, শেখ হাসিনার দাদা বাড়ি, সেই গোপালগঞ্জে বাবার নামে মেয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গড়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)’। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমান। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে জোর করে একদল স্থানীয় সন্ত্রাসীর গণধর্ষণের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। তিনি রাতের বেলাতেই গোপালগঞ্জ সদর থানায় কয়েকজন ছাত্র ও সাংবাদিককে নিয়ে গিয়েছেন। বসে থেকেছেন ও মামলা করেছেন। এরপর থেকে তিনি সেই মামলায় প্রধান ভূমিকা রেখে চলেছেন ছাত্র, ছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ধরণের সংকট ও সমস্যার মোকাবেলায় তিনি থাকেন সবার আগে। তবে বিখ্যাত এই প্রক্টর ও আইন অনুষদের ডিন নিজেকে বাঁচাতে পারেননি অন্যায় থেকে।
ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, “আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)’র আইন অনুষদের ডিন ও প্রক্টর ড. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে নাম্বার টেম্পারিং, পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র সরবরাহ ও শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ক্যাম্পাসের বাইরে অনুমতি ছাড়া নেওয়াসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রায় তিন বছর পার হতে চললেও মেলেটি কোনো তদন্ত রিপোর্ট।”
“বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস আদেশ সূত্রে জানা যায়, আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. মিল্টন শেখ তার খাতা পুর্ণ:মূল্যায়ন আবেদন ও ড. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে নাম্বার টেম্পারিংসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। মিল্টন শেখ তার অভিযোগ পত্রে জানান, আমি বশেমুরবিপ্রবির ল’ ২০১৫-’১৬ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী। শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় আমিসহ অনেকেই নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থেকে ভালো পড়ালেখা করেও কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারিনি। অথচ যারা প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন এবং প্রথম শ্রেণী প্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত ক্লাস না করে, কিছু অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে ভাল ফলাফল অর্জন করেছে এবং উপস্থিতি ও ভাইভায় সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপ্ত হয়েছেন।”
এই অভিযোগপত্রে তিনি আরও জানান, ‘কথিত আছে তৎকালীন ল’ বিভাগের শিক্ষক রাজিউর রহমান, মুনসুরা খানমসহ অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে উক্ত শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক থাকায় পরীক্ষার সময় কিছু অনৈতিক সুযোগ সুবিধা লেনদেন হয়েছে।’
এ প্রেক্ষিতে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে যথার্থ মূল্যায়ন ও অভিযোগ নিরসনের জন্য তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড মো. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক ড. মো. বশির উদ্দিন সভাপতি, একই বিভাগের মো. রকিবুল ইসলামকে সদস্য সচিব, গণিতের তরিকুল ইসলাম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মো. এমদাদুল হক সদস্য থাকেন। তাদের কমিটিকে ১৫টি কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।’
‘ছাত্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত অন্য নোটিশে ড রাজিউর রহমানকে বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকার আদেশ প্রদান করা হয়।’
“নোটিশে ড. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনি অনার্স কোর্সেও শিক্ষার্থীদের কোটারি করে অনৈতিক শিক্ষা দিয়ে নষ্ট করে যাচ্ছেন ও অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ অনৈতিক এমন কোন কাজ নাই, যা আপনি করেন নাই’।”
এছাড়াও নোটিশে ‘নিজের শিক্ষকের ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়ে মার্ক বাড়িয়ে প্রথম স্থান পাইয়ে দেওয়া’র অভিযোগ করা হয় আইন অনুষদের ডিন ও প্রক্টর ড. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে।
মিল্টন শেখ এবার এই সাংবাদিককে বলেছেন, ‘৪ বছর আগে এই সমস্যার সমাধান হলে আমারই উপকার হত। সঙ্গে, সঙ্গে যখন বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম, তখন যদি অ্যাকটিভ থাকতেন, আমার হয়তো পরীক্ষাও দেওয়া লাগতো না। আমি সেবার অ্যাডভোকেটশিপ পরীক্ষা দিতে পারতাম বার কাউন্সিলে কিন্তু কোনটিই আমি পারিনি। সর্বশেষ তারা আমার কাছে মাফ চেয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার তো যা লস হবার হয়েই গিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সে সময় অনেকে অনেক কিছু করতে চেয়েছেন কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। এখন শুধু, শুধু আগাছা নাড়া হবে। আমি অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমান সম্পর্কে জানি। তখন যখন কিছু করতে পারেননি, এখন তো তার কেউ কিছু করতে পারবেন না।’
তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে ড মো. বশির উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রীকে যৌন নিযাতনের আন্দোলন ও নতুন প্রশাসন গঠনের এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত ছিল। পরবর্তীতেও কোন আলোচনা হয়নি।’
সদস্য-সচিব রকিবুল ইসলাম বলেছেন, ‘সে সময় ভিসি বিরোধী আন্দোলনে যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই টালমাটাল অবস্থা ছিল। কোনো কিছুই সঠিকভাবে হচ্ছিল না বলে এই সংকট হয়ে থাকতে পারে। তারপর নতুন উপাচায প্রশাসন এলো। তারপর ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল- এসবে চাপা পড়ে গিয়েছে।’
অভিযুক্ত আইন অনুষদের ডিন ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. রাজিউর রহমান বলেছেন, ‘এ অভিযোগগুলো তো জানা নেই আমার। আমি দেখিনি কখনো। আমি বা কেউই তো অবগত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ও অবগত নয়।’
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুরাদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার কাছে এই বিষয়ে কোনো তদন্ত রিপোর্ট আসেনি।’
ওএফএস।