জবির ছাত্রী হলের সামনে মাদকের আড্ডা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের কাছেই। হলটির সামনে সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় অবৈধভাবে লেগুনা আর রিকশা রাখার প্রতিযোগিতা। রাত আরেকটু বাড়লেই হলের প্রবেশ মুখেই বসে মাদকের আড্ডা। বিশেষ করে পরিবহনসংশ্লিষ্ট লোকজন ও বাহাদুরশাহ পার্কের উদ্বাস্তুরা মিলে গাঁজার আসর বসান। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ে আসরের পরিসরও।
হলের একাধিক শিক্ষার্থী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরই মধ্যে ভুক্তভোগী এক নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়ে একটি আবেদন করেন। এরপরেই সামনে আসে সেখানে অবৈধ লেগুনা- রিকশাস্ট্যান্ড ও মাদকের আসরের বিষয়টি। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রীদের পক্ষে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রী বাড়ৈ ভিসি বরাবর রিকশা ও লেগুনাস্ট্যান্ড সরানোর দাবিতে একটি আবেদন জানান।
আবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার পথে আমাদের হলের সামনে থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের ফটক পর্যন্ত অবৈধভাবে অগণিত রিকশা ও লেগুনাস্ট্যান্ড করা থাকে। এ যানবাহনগুলোতে অবস্থান করে বিকৃত মস্তিষ্কের নেশাখোর যুবকরা।
আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে তারা আমাদের বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। যা আমাদের প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করে স্বাভাবিক জীবন চরমভাবে ব্যাহত করে। যার ফলে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। অবৈধ রিকশা ও লেগুনাস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও আমাদের জীবনের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে আবেদনে উপাচার্যের নিকট আহ্বান জানান ছাত্রীরা।
এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, ছাত্রী হলের গেটের সামনে থেকে প্রায় ৫০ মিটার জায়গাজুড়ে রিকশা ও ভ্যান রাখা হয়েছে। দিনের বেলাতেই সেখানে এলাকার বখাটেদের জটলা দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের হলে রাত ৯টার আগেই প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু হলের জানালা দিয়েই এখানে জটলা ও গাঁজার আসর দেখা যায়। মাঝে মাঝেই তারা পরস্পর মারামারি কিংবা চিৎকার করলে হলের কক্ষ থেকেই আমরা শুনতে পাই। এটা নিয়ে আমরা বেশ আতঙ্কে থাকি।
দিনের বেলা একই পথে বাংলাবাজার সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদেরও। লায়লা মুস্তারিন নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ে। তাদের ক্লাস চলাকালীন আমিসহ কিছু অভিভাবক বাইরে অবস্থান করি। কিন্তু এখানে বেশকিছু টোকাইয়ের কারণে মাঝে মাঝেই হয়রানির শিকার হতে হয়। মাঝে মাঝে এরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। কিন্তু অভিযোগ জানানোর মতো কাউকে পাইনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার তাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। রাত হলেই তারা এখানে এসে আড্ডা দেয় ও মাদক সেবন করে। তবে হলের মেয়েরা হলে ফেরার পরেই হয়তো আড্ডা বসে থাকে। আমরা দ্রুতই হলের গেটের সামনে সিসি ক্যামেরা এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাল্ব লাগাব, যাতে কেউ এখানে এসে আর আড্ডা দিতে না পারে বা অনৈতিক কোনো কাজ করতে না পারে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ছাত্রী হলের চৌহদ্দির মধ্যে যত্রতত্র রিকশা-ভ্যান রাখা ও সেখানে অনৈতিক কাজকর্ম যারা করে, তাদের বিরুদ্ধে আমি অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাতে আমরা নিয়মিত টহল দেই। ধরা পড়লে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসএন
