গুচ্ছের ৪০ শতাংশ পরীক্ষার্থী ঢাকায় কেন?
শনিবার (৩০ জুলাই) 'এ' ইউনিটের পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতক ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। 'এ' ইউনিটের পরীক্ষায় শুধুমাত্র ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে অংশ নিচ্ছে ৪০ শতাংশ ভর্তিচ্ছু।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয় কমিটি সূত্রে জানা যায়, 'এ' ইউনিটের পরীক্ষায় আবেদন করেছেন প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার পরীক্ষার্থী। সারা দেশে গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো একটিকে কেন্দ্র হিসেবে পছন্দ করার সুযোগ ছিল আবেদনকারীদের। যার মধ্যে ঢাকায় কেন্দ্র পছন্দ করেছেন প্রায় ৬৫ হাজার ভর্তিচ্ছু। যা মোট আবেদনকারীর ৪০ শতাংশ।
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবার ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কেন্দ্র বসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, হোম ইকোনোমিকস, ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নটরডেম কলেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘবে ২০১৯ সালে শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। মূলত একজন শিক্ষার্থী যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি বিষয়ে ভর্তি হতে অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়েই দেশময় ছোটাছুটি করে বেড়ানো ও এ সময়ে পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের হয়রানি, অর্থ ও সময় ব্যয় সবকিছুর সমাধানে শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। ফলে সারা দেশে কেন্দ্র থাকার পরও পরীক্ষার্থীরা কেন ঢাকামুখী প্রশ্ন থেকেই যায়।
কোচিং বাণিজ্য, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ঢাকার কলেজগুলোর মান ও সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত না হওয়াকে ঢাকামুখী হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা। তবে এতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না মানতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।
ঝিনাইদহের তনিমা হাদি অংশ নিচ্ছেন এবারের গুচ্ছ পরীক্ষায়। পার্শ্ববর্তী দুই জেলা যশোর ও কুষ্টিয়ায় কেন্দ্র থাকলেও তিনি পছন্দ দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, '৩০ জুলাই গুচ্ছের পরীক্ষার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা রয়েছে ২ আগস্ট। জাহাঙ্গীরনগরের পরীক্ষার সময় যেতে অসুবিধা হতে পারে বিধায় গুচ্ছের কেন্দ্র ঢাকায় দিয়েছি। আগে ভাগে ঢাকা চলে যাব যেন যাওয়ার সময় কোনো অসুবিধা না হয়।'
নীলফামারী থেকে ছোট ভাইকে নিয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় এসেছেন তৌফিকুর রহমান। তিনি বলেন, 'ছোট ভাইকে ঢাকায় কোচিং করিয়েছি। এ ছাড়া গুচ্ছের পর জাবির পরীক্ষা রয়েছে। এ কারণে ঢাকাকে কেন্দ্র হিসেবে পছন্দ করেছি।'
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শাহনাজ পারভীন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কোচিং নির্ভরতা রয়েছে এখনো। যাদের বড় অংশই ঢাকায় বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। এটা একটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে ঢাকামুখী হওয়ার ক্ষেত্রে। এর বাইরেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা যেমন- কুমিল্লা, ময়মনসিংহের শিক্ষার্থীরাও ঢাকায় কেন্দ্র পছন্দ করছে।'
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০১৯ সালের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, 'কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ ঢাকায় আসে, তাদের কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকে। আবার কেউ নিজেদের মতো করে বাসা ঠিক করে। অনেক শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শেষে ঢাকার বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হন। এরা ঢাকায় পরীক্ষা দিবে স্বাভাবিক।'
তবে ভর্তিচ্ছুরা ঢাকামুখী থাকলেও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়া শতভাগ সফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষার্থীরা যেখানেই কেন্দ্র পছন্দ করুক তাদের সারা দেশে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে না। ফলে অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছুদের হয়রানি ও ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকুল আরেফিন বলেন, 'গতবার আমরা ৫টি কেন্দ্র পছন্দের সুযোগ রেখেছিলাম। ফলে অনেকেরই দূরে সিট পড়েছিল। তবে এবার আমরা একটা কেন্দ্র পছন্দের সুযোগ রাখি। যে যেখানে পছন্দ পরীক্ষা দিবে। মূল কেন্দ্রে জায়গা না হলে, পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। আমরা আশাবাদী সার্বিকভাবে গুচ্ছ পরীক্ষা সফল হবে।
গুচ্ছের টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. নাছিম আখতার বলেন, 'আমরা এবার শিক্ষার্থীদের যেখানে পছন্দ সেখানেই পরীক্ষা দেওয়ায় সুযোগ দিয়েছি। গতবার কেন্দ্রের জায়গা সংকুলান করতে কিছু শিক্ষার্থীকে তাদের ৫টি পছন্দের যেকোনোটি দেওয়া হয়েছিল। এবার তা করা হয়নি। এত পরীক্ষার্থী ঢাকায় যাওয়ায় চাপ হবে স্বাভাবিক, সেক্ষেত্রে যদি ভোগান্তি হয় ও তারা যদি স্বেচ্ছায় ভোগান্তি নেয় এটা তাদের বিষয়। আমাদের পক্ষ থেকে ভোগান্তি লাঘবে আমরা শতভাগ সফল। অন্তত আগের মতো শিক্ষার্থীদের সারা দেশে পরীক্ষা দিতে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় করতে হচ্ছে না।'
এসজি/