১৪ বছরের নবীন কিশোর

লেখা ও ছবি : পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জনসংযোগ অফিসার মো. বাবুল হোসেন
এই বয়সে পা রাখলো ভবিষ্যতে পাবনাসহ বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের বিশ্ববিদ্যালয়। নাম তার ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’। গতকাল জন্মদিনটি পালন করেছেন তারা। এখন পাঁচ হাজার ছাত্র, ছাত্রীর বিরাট ক্যাম্পাস তাদের। শুরুটি সকাল নয়টায়। বরাবরের নিয়মে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ সমবেত গানের মাধ্যমে। এরপর স্বাধীনতা আন্দোলনগুলোতে শহীদদের স্মরণে গড়া ‘শহীদ মিনার’ ও ‘স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
তারপর সব আনন্দময় যাত্রার শোভাযাত্রা। তবে তাদের জন্মদিনের আনন্দ শোভাযাত্রাটির মূল শোভা ছিলেন দুজন নারী। একজন বাংলাদেশের গর্ব, পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনকারী গবেষক দলের অন্যতম প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের কৃতি অধ্যাপক, ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’জয়ী গবেষক ও অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। আরেকজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রথম নারী ব্লু-তাদের সফলতম খেলোয়াড় ও এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশের নির্বাচিত সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নামকরা অধ্যাপক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন। তার নয়টি বই আছে। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস.এম. মোস্তফা কামাল খান এবং ড. হাফিজা খাতুনের স্বামী শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ বিভাগের সাবেক ডিন, ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং খুলনার প্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় চুয়াডাঙ্গার ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এফসিইউবি)’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, বিখ্যাত লেখক ও এই ক্যাম্পাসের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ, পাঁচটি অনুষদের ডিন, ২১টি বিভাগের প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব ছাত্র, ছাত্রী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে প্রধান সড়কগুলোতে শোভাযাত্রা করেছেন।
এরপর ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের আনন্দ আলোচনা। প্রধান অতিথি ড. হাসিনা খান, সভাপতি ড. হাফিজা খাতুন, বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. এস.এম. মোস্তফা কামাল খান, সম্মানিত অতিথি ড. হজরত আলী ও ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ। বাকিরা সবাই অতিথি।
বাংলাদেশের পাটচাষীদের ভাগ্য বদলে দেওয়া অধ্যাপক ড. মাকসুদুল আলমের দলের অন্যতম প্রধান গবেষক প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. হাসিনা খান তার আলোচনায় বলেছেন, ‘কোনো ভালো কাজই কারো জীবনে সংগ্রাম ছাড়া অর্জন সম্ভব হয় না।’ নিজের জীবন ও সামনে বসে থাকা অধ্যাপক, ছাত্রী, নারী অভিভাবকদের তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আরো এগিয়ে আসতে হবে।’
স্বাধীনতা পুরস্কার জয়ী বাংলাদেশের এই কৃতি গবেষক বলেছেন, ‘আমাদের সবার জীবনে ভালো কোনো কিছু পেতে হলে প্রত্যেককেই সৎ, নির্লোভ, মিতব্যয়ী ও পরোপকারী হতে হবে। জীবনের ক্ষতিকর বিষয়গুলোকে প্রতিহত করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়ম ও শৃংখলা মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।’
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন সভাপতির ভাষণে বলেছেন, ‘আমাদের সবাইকে একত্রে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি কাজে একাগ্রতা ও প্রকৃত ইচ্ছা থাকতে হবে। প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যেতে হবে ও অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। কেননা, সম্মান করলে সম্মান ফিরে আসে। মনের মধ্যে এই বাসনাগুলো রাখতে হবে। প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, কাজের মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব হবে ও কাজের স্বীকৃতিতে আগ্রহ এবং ভালোবাসা বাড়ে।’ ভিসি ম্যাম তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী ও অধ্যাপকরা সবাই নানা দিকে অবদান রাখছেন। তাদেরকে আরো বেশি করে অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে।’
তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনুষদ, বিভাগগুলোর পরিসর বাড়ানো হবে ও প্রাণ রসায়নের বিভাগ চালু করা হবে।’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম. মোস্তফা কামাল খান তার ভাষণে বলেছেন,‘ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কেও শিক্ষা, গবেষণা এবং কর্মবাজার উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে। মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।’
অধ্যাপক ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ বলেছেন, ‘আপনারা শিক্ষার্থীদের আনন্দের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।’ তিনি অধ্যাপকদের জানিয়েছেন, ‘প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি সহশিক্ষা কর্মকান্ডে ছাত্র, ছাত্রীদের মনোযোগী করে তুলতে হবে।’
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫ জুন ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলার বিখ্যাত কবি বন্দে আলী মিয়ার নামে ‘কবি বন্দে আলী মিয়া মুক্তমঞ্চ’ চালু করেছে।
এই খবরগুলো প্রদান করে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসার মো. বাবুল হোসেন লিখেছেন, ‘আমরা বৃক্ষরোপন ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করেছি।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘পরিবেশ দিবসে জন্ম বলে আমাদের এই দিবসের গুরুত্ব আলোচনা বাড়তি পাওনা এবং অন্যতম সুখের বিষয় হয়েছে। আমরা গাছ রোপণের মাধ্যমে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘ছাত্র, ছাত্রীরা ফ্ল্যাশ মব করেছে।’‘তারা ২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম, অবদান, অর্জন, সাফল্য জেনেছে, অবদান রেখেছেন এবং অত্যন্ত খুশি হয়েছে।’
বাবুল হোসেন আরো লিখেছেন, ‘ফুটবল ও ভলিবলের পুরস্কার বিতরণ, বর্তমান ও নবীনদের নাচ, গান আবৃত্তি, অভিনয় হয়েছে।’
এরপর বিখ্যাত বাংলা গানের দল জলের গানের সুপারহিট পরিবেশনা।
ছবি : জাতীয় সঙ্গীত, কবি বন্দে আলী মিয়া মুক্তমঞ্চ, শোভাযাত্রা ও জলের গান।
ওএস।
