দারুণ এক ফার্মেসি বিভাগ
রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে পাশ করে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী সাফল্যের সঙ্গে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাকরি করছেন। এই বিভাগের প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছেন। বাকি ২০ ভাগ দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। যেহেতু ফার্মাকোলজি, বায়ো-টেকনোলজি, বায়ো-ইনফরমেটিকস, নিউরো-সায়েন্স, জেনেটিকস-ইনফরমেশনসহ অনেক বিষয়েই উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। অথচ প্রতিনিয়ত কঠিন হচ্ছে চাকরির বাজার। এখন দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের হার প্রায় অর্ধেক বা ৪৭ শতাংশ।
২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে বাংলাদেশের বরেণ্য দানবীর ও শিক্ষা উদ্যোক্তা রণদা প্রসাদ সাহার নামে তার পরিবার অলাভজনক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা হলো-২৫, সুলতান গিয়াস উদ্দিন রোড, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পাশে, শীতলক্ষ্যা, নারায়ণগঞ্জ। তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরুতেই ৬টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফার্মেসি অন্যতম। এই ফামেসি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল (বিএফসি) স্বীকৃত প্রদান করেছেন। ফার্মেসি কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত সঠিক রাখা হয়েছে ও তাদের নিয়মে কোর্সগুলোর গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। মেধাবী শিক্ষকদের সমন্বয়ে বিভাগটি এগিয়ে চলছে।
বাংলাদেশের বিকশিত ওষুধ শিল্পের জন্য ফামেসি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ১শ ৬০টি দেশে আমাদের তৈরি ঔষধ রপ্তানি করা হচ্ছে। উৎপাদন ও বিপননে প্রায় ৩শ ৫০টি ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় সব কারখানাতেই দক্ষ ফার্মাসিস্টদের বিপুল চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা আছে। এই চাকরি বাজারের উপযুক্ত করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলছেন তারা। যাতে রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কাজ করতে পারেন ও বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন।
ফার্মেসি শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক ল্যাব বা গবেষণাগার থাকা অন্যতম প্রধান শর্ত। ফলে কাযকর তত্বীয় বিষয়গুলোর পাশাপাশি ছাত্র, ছাত্রীদের হাতে-কলমে শেখানোর জন্য রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি বিভাগের ৮টি ল্যাবরেটরি আছে।
রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাদের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র, ছাত্রীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব মেডিসিন গার্ডেন। সেখানে ওষুধি গাছগুলো সম্পর্কে বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে হাতে-কলমে পাঠ দেওয়া হয়। কোন ঔষধ তেরিতে কোন গাছ ব্যবহৃত হয়, কোন রোগের জন্য কোন গাছ উপকারী শেখানো হয়। ফামেসি বিভাগের গবেষণার জন্য আরো রয়েছে ‘অ্যানিমেল হাউজ’।
রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’র অন্যতম প্রতিষ্ঠান। এই ট্রাস্টের অধীনে কুমুদিনী ফার্মা আছে। কুমুদিনী ফামাসিউটিক্যালস লিমিটেডে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের ফার্মেসি বিভাগের পাশ করা ছাত্র, ছাত্রীদের চাকরি দেওয়া হয়। এছাড়াও ফার্মেসি থেকে পাশ করে একজন ডিগ্রিধারী শিক্ষাথীর সাধারণত ওষুধের মার্কেটিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে চাকরির সুযোগ বেশি থাকে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ, বিসিসিআই, আইসিডিডিআরবি’র মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, মডেল ফার্মেসিগুলোতে বিপুল চাকরির সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল তাদের অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়ে ভর্তির জন্য আলাদা যোগ্যতা নির্ধারণ করেছেন। ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান থেকে এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষা মিলিয়ে জিপিএ ৬.৫ পেতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসিতে চতুর্থ বিষয় বাদে আলাদাভাবে জিপিএ ৩.০ লাভ করে উত্তীর্ণ হতে হবে।
রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বলে স্বল্প খরচে মানসম্মন্ন শিক্ষা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়ে পড়তে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় করতে হয়। তবে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদান করে রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ প্রায় অর্ধেক খরচে।
এই ফার্মেসি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রিয়া দাস বলেন, ‘আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা ছাত্র, ছাত্রীদের দক্ষ করে গড়ে তুলছেন। তারা যত্ন নিয়ে আমাদের হাতে-কলমে শেখাতেন। ল্যাবগুলোতে কাজ করায় অগ্রাধিকার দিতেন। তাই চাকরি বাজার আমদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কুমুদিনী ফার্মায় চাকুরির ব্যবস্থা করা হয়।’
ফার্মেসি বিভাগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিভাগীয় প্রধান ড. মো. তরিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদান করে চলেছে। এই বিভাগ থেকে পাশ করে বের হওয়া প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী সাফল্যের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। অনেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফার্মেসির পড়ালেখায় সঠিক মেধা প্রয়োগ ও কঠোর পরিশমের মানসিকতা থাকলে সাফল্য আসবেই।’
ওএস।