গরু ও ছাগলের মাংসে মিলেছে যক্ষ্মার জীবাণু
লেখা ও ছবি : রাকিবুল হাসান, প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে গরু ও ছাগলের মাংস নিয়মিত খান প্রায় সব মানুষ। বিজ্ঞানীদেরও মতে, প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণে এই খাদ্যগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়।
তবে গরু ও ছাগলের বাজারে বিক্রি করা মাংসে সম্প্রতি যক্ষ্মা রোগের জীবাণু উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
তারা গবেষণার পর জানিয়েছেন, ‘উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করলে মাংসে তেমন কোন ঝুঁকি থাকবে না।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ও এই গবেষক দলের প্রধান ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কসাইদের কাটার সময় ২ হাজার ৫শটি গরু ও ছাগলের শরীরের নমুনা সংগ্রহ আমাদের গবেষণাগারে দীর্ঘসময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। এই পরীক্ষায় আমরা শতকরা ৩ ভাগ গরু ও ১৫ ভাগ ছাগলের মাংসে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু পেয়েছি।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান বলেছেন, “গরুর মাংসে যক্ষ্মারে জীবাণুটি হচ্ছে ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াম বোভিস’।”
তিনি জানিয়েছেন, “ছাগলের মাংসে ‘মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকুলোসিস’, ‘সিউডোটিউবারকুলোসিস’সহ কয়েকটি ধরণের যক্ষ্মা রোগের জীবাণু শনাক্ত করা গিয়েছে।”
দলের প্রধান গবেষক জানান, ‘গরু ও ছাগলের মাংসে উপস্থিত যক্ষ্মার জীবাণুতে মানুষের শরীর আক্রমণের শিকার হবার ঝুঁকি রয়েছে।’
‘তবে সাধারণ মানুষের চেয়ে চিড়িয়াখানা, কসাইখানা, ডেইরি ফার্মে কর্মরতদের এই পশুগুলোর মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে।’
‘তারপরও এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’ বলেছেন প্রধান গবেষক।
অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান সতর্কতা সম্পর্কে বলেছেন, “কাঁচা মাংস হাত দিয়ে ধরলে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। কাঁচা মাংস কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না।’
‘উচ্চ তাপমাত্রায় যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ধ্বংস হয়। ফলে মাংসগুলো ভালোভাবে চুলার সর্বোচ্চ তাপে সিদ্ধ করে রান্নার পর খেতে হবে।’
‘যারা সরারসি মাংসগুলো কাটা, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত, তাদেরকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
‘গরু ও ছাগলসহ যেকোনো পশু জবাইয়ের আগে পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে রোগব্যাধি পরীক্ষা করে ছাড়পত্র নিতে হবে’-পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এই বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘যারা মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন বা কাজ করেন, তাদের জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
‘উচ্চ তাপমাত্রায় যেকোনো হালাল মাংস রান্না করলে তেমন কোন ঝুঁকি থাকে না।’
ওএস।