চাকরি নিয়ে মিথ্যা বলাই বিপ্লবের স্বভাব
বিপ্লব কুমার দাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক ছাত্র। পাশ করে গিয়েছেন। তবে কদিন আগের ৪০তম বিসিএসে নিয়োগ লাভ করেছেন বলে দাবী করেছেন ও নিজেকে পুলিশের এএসপি হিসেবে বলতে শুরু করেছেন। তিনি এই তথ্য ফেইসবুকে দিয়েছেন ও তাকে নিয়ে পত্রিকাতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এরপর থেকে গোপালগঞ্জের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তার বিভাগের ছাত্র, ছাত্রীরা প্রশ্ন তোলা শুরু করেন। তারা এই প্রতিবেদক ঢাকা প্রকাশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সফিকুল আহসান ইমনকে জানিয়েছেন, এর আগেও বিপ্লব কুমার দাস ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের চাকরি পেয়েছেন বলে নানা সময়ে জানিয়েছেন। ফেইসবুকে দিয়েছেন।
তার সঙ্গে যারা লেখাপড়া করেছেন তারা এই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে বা তার খোঁজ নিতে গেলে বিপ্লব খারাপ ব্যবহার নিয়মিত করেছেন। তারা তার কাছে চাকরি নয়, বিসিএস পরীক্ষার অ্যাডমিট কাড বা প্রবেশপত্র দেখতে চেয়েছেন। তখনোও তিনি খারাপ ব্যবহার করেছেন।
ফলে বিপ্লবের কোনো সরকারী ভালো নিয়োগ হলেই তাতে টেকার খবরটি তাদের কাছে ও বিভাগের অনেকের কাছে ওপেন সিক্রেট। তারা তার সম্পর্কে এখন আর কোনো ভালো মন্তব্য ও ধারণা করতে পারেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন প্রথম ব্যাচের ছাত্র চঞ্চল দাস বলেছেন, “দেশসেরা চিটার, বাটপারের নাম বলতে গেলে করলে বিপ্লব কুমার দাসকে ‘বস’ মানতে হবে৷ আরে ভাই, যে বিসিএসের প্রিলিতেই টেকে না কোনোবার, সে কীভাবে ক্যাডার হয়? তাও আবার স্বাস্থ্য, মানসিক পরীক্ষা দিয়ে অত্যন্ত কঠিন পুলিশ ক্যাডার? পড়ার সময় থেকেই তো বিপ্লব বাটপারি করে চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে বলত। এরপর অনেক চাকরি পেয়েছে-এনএসআইতে আছে, অডিটর হয়েছে। পরে কেন করছে না-এই প্রশ্নের জবাবে বলত, জয়েন করেছে। এরপর ছেড়ে দিয়েছে। তারপর তো এবার তার বন্ধুরা তাকে বিসিএসের অ্যাডমিট কার্ড দেখাতে বললো। সে বলেছে, মানহানির মামলা করবে।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন-‘এমন সংবেদনশীল খবর আগে থেকে যাছাই না করে প্রকাশ করলে বিপ্লবের মতো অনেক ভুয়াকে নিয়ে লিখতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবারের বিসিএসে নিয়োগ পেয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারে শাহ আলম সজল। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এই বিপ্লবকে আমি চিনি না। একটি ফেসবুক পোস্টে তার সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সে বিসিএস টিকেছে জেনে খুশি হয়েছি। পরে অভিযোগ দেখে খুব খারাপ লেগেছে।’
‘এরপর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম বিসিএস ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রুপে যারা টিকেছেন, তাদের মধ্যে তার নামটিও খুঁজে পাইনি। আরো শুনেছি, কোনো লাইভেই তাকে নিয়ে আসা যায় না। তাহলে তো সে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। আমাদের ছাত্র, ছাত্রীদের সঙ্গে অন্যায় করছে। আমাদের সুনামহানির জন্য তাকে জবাবদিহি করা প্রয়োজন। এমন ঘটনা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত লজ্জ্বার।’
সাবেক ছাত্র বিপ্লব কুমার দাসের চাকরি বিষয়ক প্রতারণা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সরাফত আলী বলেছেন, ‘এই বিষয়ে আমি এখনো জানি না। তবে বিপ্লব কুমার দাস যদি বিসিএসের মতো একটি ভাইটাল নিয়োগ প্রক্রিয়া ও টিকে যাবার মতো মিথ্য কথা বলে তাহলে তার বিপক্ষে আমাদের জড়ালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ছাত্র, ছাত্রীদের কাছে অভিযুক্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামহানির বিষয়ে কথা বলতে গেলে এই প্রতিবেদককে বিপ্লব কুমার দাস বলেছেন, ‘আমি অ্যাডমিট কার্ড সময় হলেই দেব। এখন নয়, দুই-একদিন পর দিচ্ছি। এখন কাজে ব্যস্ত আছি, পড়ছি।’ এরপর অনেকবার চেষ্টার পরেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
ওএস।