দেশে ব্যবসার পরিবেশ থাকলে আগ্রহী হবে বিনিয়োগকারীরা
পৃথিবী জুড়ে একটি অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। আমি মনে করি, প্রথমত আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভারসাম্য ঠিক রাখা দরকার। অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা বিষয়ে যত কথা বলা হোক না কেন আসলে বাস্তবতা ঠিক সেরকম নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দেশের শেয়ার বাজারে কিছু লিস্টেড বিদেশি কোম্পানি আছে। এসব কোম্পানি যদি তাদের মুনাফা না পায় তারা এখানে কেন আসবে? আরও একটি দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশে সবচেয়ে কম ফরেন কারেন্সি ইনভেস্টমেন্ট হয় । কাজেই সবকিছু মিলিয়ে আমাদের ইকোনোমিক অবস্থা কিন্তু ভাল বলা যাবে না। সেটি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশের সম্ভাবনার গল্পগুলো তুলে ধরতে হবে অর্থাৎ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে হবে।
তবে আমি মনে করি যে, আমাদের পলিসি তৈরিতেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আগে নিজের ঘর ঠিক করতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, ব্যবসা বান্ধব কাগজে কলমে যথেষ্ট আছে কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। আমাদের দেশে বড় ব্যবসায়ীরা ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেটিই যথেষ্ট নয়। কারণ আমাদের এখানে সুষ্ঠু নীতিমালা নেই। তাছাড়া এখানে ঘন ঘন নীতি বদল হয়। যে কারণে বিদেশিরা অসন্তুষ্ট হয় এবং বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না। এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি এলে আরেকটি তাকে অনুসরণ করে।
সে অর্থে আমি মনে করি যে, আমাদের এখানে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নেই। আমাদের পথে পথে দুর্নীতি। তাছাড়া এখানে ব্যবসার সংস্কৃতিও ক্ষতিকারক। কারণ ব্যবসা যারা করবেন, তাদের সে বিষয়ে জ্ঞান নেই। আজকাল ব্যবসার নামে সবই চাঁদাবাজি চলে। চাঁদাবাজিই হয়ে গেছে বড় ব্যবসার অনুষঙ্গ এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে এগুলো করা হচ্ছে। যে কারণে এদেশে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে ।
এখন বলতে হবে দুর্যোগগুলো সারা বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডলার বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থ পাচার যদি কিছুটা রোধ করা যেত সেটি হলেও আমাদের এতটা চাপের মধ্যে থাকতে হত না। কথা হচ্ছে যদি সুস্থিরতা না আসে, সেখানে কিন্তু বিপদ আমাদের তাড়া করবে। বিশ্বাসের ঘাটতি হলে আরও বেশি অসুবিধা হবে। অর্থনীতি ও ম্যানেজমেন্টের মধ্য দিয়ে যদি বিশ্বাসের ঘাটতি শুরু হয়ে যায়, তখন তাড়াহুড়ো হতে থাকবে। চারিদিকে নাই নাই দুর্যোগ আসছে। তখন খুব ক্ষতি হয়ে যায়।
বাংলাদেশের প্রকল্প যেগুলো সম্পন্ন হওয়ার পথে, সেগুলো সম্পন্ন করে ফেলা উচিত। এমন কিছু ঘটে নাই যে লোড নেওয়া উচিত। আইএমএফ থেকে লোন নিতে গেলে আইএমএফ অনেকগুলো শর্ত দেয়, বাংলাদেশ সরকারের জন্য সেটি এতটা সহজ হবে না। বাংলাদেশ অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিচ্ছে। তখন ঘাটতি বাজেট বাড়তে থাকে, তখন বিদেশ থেকে ঋণ নেয়, ভেতর থেকেও ঋণ নেয়। বিদেশ থেকে ঋণ নিলে সেটি সমস্যা সৃষ্টি করে বেশি। চলতি হিসেবে ঘাটতি যেন ধারাবাহিকভাবে না চলে, এটি দেখতে হবে। আমরা যতটা এক্সপোর্ট করতে পারি ততটা যদি ইমপোর্ট করতে পারি তাহলে ঠিক আছে । এর বাইরে গেলে আমরা বিপদে পড়ব ।
কাজেই আমি মনে করি, আমাদের মেধায় মননে অনেক বেশি পরিশুদ্ধ হতে হবে। কাজেই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ কোনোভাবেই ফলপ্রসূ হবে না। দেশে ব্যবসার পরিবেশ থাকলে এমনিতেই ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।
আবু আহমেদ: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরএ/