আমাদের সামস্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে
রপ্তানি আয় নয় মাসে বেড়েছে ১২ শতাংশ এবং আমাদের রেমিট্যান্সও প্রায় আট মাস পরে দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করল মার্চ মাসে। আমি এটিকে বর্তমান রিজার্ভের অবস্থার প্রেক্ষিতে ইতিবাচক মনে করছি। তারপরও রিজার্ভের উপরে চাপ এখনো অব্যাহত আছে। সেজন্য আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে রিজার্ভ অথবা প্রবৃদ্ধির মাত্রা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। তাহলে সামস্টিক ব্যবস্থাপনা অথবা রেমিট্যান্সের মাত্রা যে আমদানি সক্ষমতা বৃদ্ধি সেটির একটি ইতিবাচক অবদান থাকবে।
একই সঙ্গে আইএমএফের যে পরামর্শ আছে সেগুলোর দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। যেমন বিনিময় হারকে বাজারমুখী করা এবং আমাদের সুদের হারকে বাজারমুখী করা। একই সঙ্গে আমাদের ঋণ খেলাপি কমানো। অনেকগুলো ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বৃদ্ধি করে ট্যাক্স জিডিপির হার বাড়ানো, এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ যেগুলো আছে সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়, সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের যে চলমান মূল্যস্ফীতি আছে সেটি কীভাবে আমরা সামাল দেব— সেদিকটিতে আমাদের নজর দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির যে ধারাটি ছিল সেটি অনেকটাই স্থিমিত হয়ে আসছে। অনেক পণ্যের মূল্য কমছে। সেটি কীভাবে আমরা ভোক্তা স্তরে পৌঁছাতে পারি সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের আমদানি স্তর থেকে ভোক্তাস্তর এবং উৎপাদক স্তর থেকে ভোক্তা স্তরে যাতে আমাদের ব্যয় ভার কমাতে পারি, মধ্যস্বত্বভোগী যারা আছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, সিন্ডিকেশন যাতে না হয়, এ সব জায়গাগুলোতে আমাদের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, আমাদের কম্পিটিশন কমিশন এদের আরও সক্রিয় হতে হবে। এখন রমজানের সময় প্রান্তিক মানুষের জন্য ফ্যামিলি কার্ড অনুযায়ী বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিতরণ করার কথা ছিল, সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। ওএমএস সম্প্রসারণ করতে হবে। খাদ্য মজুদ ভালো আছে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। নিম্নমধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষের মধ্যে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের ক্রয় ক্ষমতার অবনতি হয়েছে, সেটি তারা সামাল দিতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে কর্ম সংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সেটি আরও ভালো করতে হবে এবং সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ যাতে করে আমাদের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বাড়াতে পারি। বিভিন্ন ধরনের কর খেলাপি আছে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সরকারি ব্যয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সঠিকভাবে করতে হবে। এখন আমাদের মূলত যে জায়গাগুলোতে মানুষের জনকল্যাণ নিহিত আছে, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা সেগুলোতে আমাদের বেশি জোর দিতে হবে। নতুন করে অবকাঠামোতে বিনিয়োগ আরও বেশ কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখতে হবে। যাতে করে আমরা অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করতে পারি। একই সঙ্গে আমাদের বাজেটের যে ঘাটতি আছে সেটি যেন বেশি বড় না হয় যায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
সব ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের নজর দিতে হবে এবং সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যেন রাজস্ব আহরণ বাড়াতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। আমাদের অনাহূত ব্যয় হ্রাস করতে হবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। এগুলোর দিকে আমাদের নজর দিতে হবে, আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা যাতে করে আমাদের কম আয়ের মানুষদের সমস্যা না হয়। খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদির দিকে নজর দিতে হবে। এই জায়গাগুলোতে সামস্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা, মূদ্রা ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা তিনটি ক্ষেত্রেই খুব ভালোভাবে আমাদের নজর দিতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান: অধ্যাপক ও সম্মানীয় ফেলো, সিপিডি
আরএ/