বৈশ্বিক ক্রান্তিকাল এবং আমাদের করণীয়
দেশের অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন ধরনের ঘাত প্রতিঘাত দেখতে পাচ্ছি। এদিকে ডলারের দাম পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আমাদের বিনিময় হারেরও বড় ধরনের পতন হয়েছে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমদানিকৃত দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ যেসব পণ্য উৎপাদন করা হয় সেটি সরবরাহ ও চাহিদার ক্ষেত্রে পার্থক্যের কারণে সেগুলোর মূল্যবৃদ্ধিও আমরা দেখতে পাচ্ছি । রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার অথবা রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হার কমে যাচ্ছে অর্থাৎ নেতিবাচক হয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিফলন ঘটছে রিজার্ভের উপরে। আইএমএফ এর ঋণ রিজার্ভ বৃদ্ধিতে কিছুটা ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে সেটি যথেষ্ট পরিমাণে নয়। কাজেই সবদিক থেকেই আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি চাপ থাকবে।
আমরা জানি, যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বব্যাপী বাজার ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং এ সব কিছু মিলিয়েই আমরা গতবছরটি শেষ করেছি অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে রাশিয়া নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে তাদের বিভিন্ন ধরনের চুক্তি থেকে। ফলে এর একটি নেতিবাচক চিহ্ন যেমন আছে এবং সেটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকেও থাকবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ আমদানি করার ক্ষেত্রে শুধু মূল্য নয়, প্রাপ্যতারও সমস্যা হতে পারে। রিজার্ভের ক্ষেত্রে আমদানি করার যে সক্ষমতা সেটিও যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এখন আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি। সেখানে আমাদের ভর্তুকি প্রত্যাহার করা্, প্রণোদনা পুনর্বিন্যাস করা ইত্যাদি চাপগুলো থেকে যাবে।
অন্যদিকে, দ্রব্যের মূল্যস্ফীতির চাপে বিশেষ করে যারা স্থির আয়ের মানুষ আছে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। কেবলমাত্র স্বল্প আয়ের মানুষ না, মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার উপরেও যথেষ্ট চাপ পড়েছে। বিভিন্ন পেশার কম আয়ের মানুষ যাদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতাধীন নিয়ে স্বল্প মূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যেটি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এটি আমাদের আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে।
আমরা যেন রাজস্ব আহরণ বাড়াতে পারি সেই চেষ্টা আমাদের থাকতে হবে। আমাদের অনাহুত ব্যয় হ্রাস করতে হবে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে এবং বাস্তবতার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। যাতে করে আমাদের সামাজিক অর্থাৎ কম আয়ের মানুষদের সমস্যা না হয়, সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদির দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। এই জায়গাগুলোতে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এই তিনটি ক্ষেত্রেই খুব ভালোভাবে আমাদের নজর দিতে হবে। অর্থাৎ ঝুঁকিগুলো যেন বড় কোনো বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসতে না পারে এবং ঝুকিগুলো সামাল দিয়েই আমরা যেন অর্থনীতিকে পুনরায় শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে আসতে পারি।
আমাদের যে বিনিয়োগ হয়েছে, সেগুলো যাতে সময়মত সঠিক ও সাশ্রয়ীভাবে সম্পন্ন করতে পারি। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করে, স্বল্পআয়ের মানুষ যারা আছেন তাদের সামাজিক সুরক্ষাদান করে আমাদের নিরপত্তা বলয় শক্তিশালী করতে হবে। মোটকথা, আমরা যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি সেটি খুব সহসা দূর হবে না। তবে গঠনমূলক কার্যপ্রণালী, সঠিক দিক নির্দেশনা, সুশাসন ও সমন্বয়ের মাধ্যমেই আমাদের এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান: অধ্যাপক ও সম্মানীয় ফেলো, সিপিডি
আরএ/