রাশিয়াকে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ দেখানো উচিত
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আজ বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমরা জানি যে, রাশিয়া অন্যায়ভাবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করেছে। এই যুদ্ধটি আমি বলব, স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্যায় একটি আক্রমণ। আমার মতে অপ্রয়োজনীয় একটি আক্রমণ। বড় দেশগুলো যদি এই ধরনের আক্রমণে অবস্থান নেয়, সেটি যেকোনো শক্তিশালী দেশই হোক, অন্যদেশের সীমানা অতিক্রম করে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে সেটি খুবই অন্যায়।
আমরা দেখেছি ইউক্রেনীয়রা নিজেদের দেশ রক্ষার জন্য লড়াই করছে। তারা আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের পক্ষে সমর্থনও পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বও তাদের সমর্থন দিচ্ছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় হলো ইউক্রেনের জনগণের মনোবল। রাশিয়ার সৈন্যদের সরলপথ ও বিমানপথে প্রচুর পরিমাণে আক্রমণ, বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়া, বিভিন্ন শহরের উপর বোমা ফেলা, এতকিছুর পরও কিন্তু ইউক্রেনের মানুষের মধ্যে আমরা প্রবল প্রতিরোধের চেহারা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ কারণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার জয়ের সম্ভাবনা নেই। রাশিয়ার মধ্যেও যে এটির উপলব্ধি নেই তা ঠিক নয়। গত সেপ্টেম্বরে পুতিনের বিরুদ্ধাচরণ করে প্রায় পাঁচ লক্ষ তরুণ দেশ থেকে চলে গেছে। কারণ তারা যুদ্ধে যেতে আগ্রহী নয়। এটিতো একটি মানবিক বিপর্যয়। মানুষ মারা যাচ্ছে কিন্তু কেন মরছে? তারা কি কোনো ভালো উদ্দেশে মারা যাচ্ছে? তারা বিভ্রান্ত হয়ে অকারণে মরছে।
আমি মনে করি যে, সামরিকভাবে রাশিয়া দুর্বল দেশ নয় বরং আমি বলব অন্যতম বড় শক্তি । একইভাবে বিগত একবছরে দেখা গেছে, রাশিয়া ইউক্রেনকে সামরিকভাবে পরাজিত করেছে সেটি সফল হয়নি। সেই বাস্তবতায় একটি বিষয় স্পষ্ট, সেটি হচ্ছে সামরিকভাবে এই সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা কম। সমাধান সম্ভব কূটনৈতিকভাবে সমাধানের মধ্য দিয়ে। সেই জায়াগাটিতে কতটা সফলতা অর্জিত হবে আমি জানিনা। তবে উদ্যোগটিকে আমি স্বাগত জানাই। আমি আশা প্রকাশ করি যে, ইউক্রেন ও রাশা চীনের উদ্যোগটির প্রতি তারা মনযোগ দেবে।
ইউক্রেন ও রাশা হচ্ছে পরস্পর প্রতিবেশী দেশ। কাজেই শত্রুতার কাঠামোর মধ্যে না গিয়ে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণের মধ্য দিয়েও যদি তারা থাকতে পারত, সেটিই হত উত্তম ব্যবস্থা। সেই জায়গাটিতে যদি তারা আসতে পারত, তাদের সেই উপলব্ধিটুকু যদি হত, তাহলে হয়ত আমরা যুদ্ধ মুক্ত একটি পৃথিবীর যে স্বপ্ন দেখি, সেটি পূরণ করা সম্ভব হত।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনও কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানবতার পক্ষে নিজের অবস্থান জানিয়েই কথাটি বলেছেন। কারণ যুদ্ধ কখনো শান্তি বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। আমরা দেখছি, সারা পৃথিবীতেই এর প্রভাব পড়ছে। আমরা ছোট দেশ হিসেবেও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমি একইসঙ্গে মনে করি, আমাদেরও যদি যুদ্ধ নয় শান্তির পক্ষে কথা বলার সুযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে আমাদের কথা বলা উচিত।
এম. হুমায়ুন কবির: সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরএ/