সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১০ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রত্যয় ও আত্মপরিচয়ের দিন

স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতি বছর অমর একুশের শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২-এর ভাষা শহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সাথে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাঁথা। ৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল।

রক্তরাঙা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তের প্লাবনের মধ্য দিয়ে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবময় আসনে আসীন। শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবি সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে ফেব্রুয়ারি এদেশের মানুষকে শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে মহত্তর স্বাধীনতার চেতনা।

প্রকৃতপক্ষে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৪৮-এর ১১ মার্চ। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’গ্রন্থে’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, ‘আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হল। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম।’ (পৃষ্ঠা-৯১, ৯২)। ৪৮-এর ১১ মার্চ অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। সেদিন যারা মাতৃভাষার দাবিতে রাজপথে সংগ্রাম করে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং জনাব শামসুল হক ছিলেন তাদের অন্যতম। মার্চের ১১ থেকে ১৫-এই পাঁচদিন কারারুদ্ধ ছিলেন নেতারা। পাঁচদিনের কারাজীবনের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘দেওয়ালের বাইরেই মুসলিম গার্লস স্কুল। যে পাঁচ দিন আমরা জেলে ছিলাম সকাল দশটায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত, আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটু ক্লান্তও হত না। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই,’ ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’-নানা ধরনের স্লোগান। এই সময় শামসুল হক সাহেবকে আমি বললাম, হক সাহেব ওই দেখুন, আমাদের বোনেরা বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে পারবে না। হক সাহেব আমাকে বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ, মুজিব’।’ (পৃষ্ঠা-৯৩, ৯৪)।

বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবিশ্বাস্য আত্মপ্রত্যয় ছিল! তখন কে জানতো যে, ’৪৮-এর এই ১১ মার্চের পথ ধরেই ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটবে! কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন! কারণ তিনি দূরদর্শী নেতা ছিলেন, লক্ষ্য স্থির করে কর্মসূচি নির্ধারণ করতেন। যেদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি, একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে। আর তাই ধাপে ধাপে সমগ্র জাতিকে প্রস্তুত করেছেন চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য।

৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন আমতলায় ছাত্রসভা। নুরুল আমীন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি। ছাত্রসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙল। সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী গুলি ছুঁড়লে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন। আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। কারাগারেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘মাতৃভাষার অপমান কোনো জাতি সহ্য করতে পারে না। পাকিস্তানের জনগণের শতকরা ছাপ্পান্ন জন বাংলা ভাষাভাষী হয়েও শুধুমাত্র বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা বাঙালিরা করতে চায় নাই। তারা চেয়েছে বাংলার সাথে উর্দুকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক, তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু বাঙালির এই উদারতাটাই অনেকে দুর্বলতা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।’ (পৃষ্ঠা-১৯৮)।

৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন দেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছিল। গ্রামে গ্রামে মিছিল হতো। সেই মিছিলে স্কুলের ছাত্রদের ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। মনে আছে তখনকার স্লোগান, ‘শহীদ স্মৃতি অমর হউক,’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘আমার ভাষা তোমার ভাষা, বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা’।

৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ৬৯-এর গণআন্দোলনের সর্বব্যাপী গণবিস্ফোরণ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারিতে। সেদিনও খুলনায় পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। ৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ১১ দফার দাবিতে যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম একুশে ফেব্রুয়ারি তা পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে বাংলার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ মানুষকে দমাতে সরকার সান্ধ্য আইন জারি করে। আমরা সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করি। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনা ’৬৯-এর গণআন্দোলনের বাঁধভাঙা জোয়ারে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আমাদের আহ্বানে বিগত ১৭ বছরের সমস্ত দৃষ্টান্ত ভঙ্গ করে ঢাকা নগরের অধিবাসীগণ অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্যের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং প্রশাসনের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি উত্থাপন করে। একটি সুন্দর, নিষ্কলুষ, নির্যাতন-নিপীড়নহীন শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে ১১ দফার ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে এক মোহনায় শামিল করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেদিনের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল।

দিনটি ছিল শুক্রবার। ৬৯-এর গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে প্রথম সরকারি ছুটি আদায় করেছিলাম। সেদিনের একুশে ফেব্রুয়ারিতে কালো পতাকা উত্তোলন, আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, প্রভাত ফেরী, শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মসূচি শুরু হয়। শহীদ দিবস উপলক্ষে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শহীদ মিনারের পাদদেশে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়।

৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারিকে মহান ভাষা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য ধারা হিসেবে চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম আজ একনায়কত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গে মিশে গেছে। ছাত্র-জনতা শ্রমিক কৃষকের জনপ্রিয় ১১ দফার সংগ্রাম আজ তাই মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্য অনুসরণ করছে।

৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রাম কেবলমাত্র বাংলা ভাষার সংগ্রাম ছিল না। এ সংগ্রাম ছিল সারাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ও বাংলা ভাষীদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস।’ শহীদ আসাদ, মতিউর, মকবুল, রুস্তম, আলমগীর, আনোয়ারা, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. শামসুজ্জোহাসহ ১১ দফা আন্দোলনের ৩৯ জন বীর শহীদ ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারের সার্থক উত্তরসূরী। বিকাল ৩টায় পল্টন ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভা তো নয়, যেন জনসমুদ্র। জনসমাবেশের তুলনায় সেদিনের পল্টন ময়দানের আয়তন কম মনে হয়েছে। চতুর্দিক থেকে মানুষের ঢল নেমেছিল। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা সমাবেশ থেকে সরকারের উদ্দেশে চরমপত্র ঘোষণা করে সমস্বরে বলেছিলেন, ‘আগামী ৩রা মার্চের পূর্বে দেশবাসীর সার্বিক অধিকার কায়েম, আইয়ুব সরকারের পদত্যাগ, রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলা প্রত্যাহার, ১১ দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, সংবাদপত্র ও বাক-স্বাধীনতার উপর হতে সর্বপ্রকার বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে।’ সেদিনের একুশে ফেব্রুয়ারিতে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় সভাপতির ভাষণে যা বলেছিলাম দৈনিক ইত্তেফাকের পাতা থেকে পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে দিচ্ছি- ‘একুশে ফেব্রুয়ারি এই দিনটি আত্মপ্রত্যয়ের দিন, আত্মপরিচয় দেওয়া ও নেওয়ার দিন। ১৭ বৎসর পূর্বে এই দিনটি ছিল শুধু মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামের দিন। আজ ১৯৬৯ সালে এই দিনটি জনগণের সার্বিক মুক্তি সংগ্রামের দিন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষা, রবীন্দ্র সঙ্গীত ইত্যাদি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল হতে নূতনতর যেসব বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে সেসব বিতর্ক ও এদের উত্থাপকদের সতর্ক করে বলছি, বাংলাদেশে জন্মজন্মান্তর বাস করেও যারা বাংলা ভাষায় কথা বলতে শিখে নাই, তাদের স্বরূপ আজ উদঘাটিত। এই শ্রেণির লোকেরা বেঈমান। বাংলায় বেঈমানের কোনো স্থান হবে না এবং স্বাধিকারের সর্বাত্মক সংগ্রাম নিয়ে যদি তারা চিরন্তন পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ঘুঁটি চালানোর প্রয়াস পান তবে আত্মরক্ষার পুরাতন প্রথা পরিত্যাগ করে প্রতি আক্রমণের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলার অন্যতম বন্দী শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছি, এই মামলায় বন্দী আর কারো গায়ে যদি একটি আঁচড়ও লাগে তবে দেশব্যাপী দাবানল জ্বলে উঠবে। আর নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলছি, শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তাকে কেউ যেন নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার না করেন।’

স্বৈরশাসকের প্রতি চরমপত্র ঘোষণার পর সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে আইয়ুব খান নতি স্বীকার করে ঘোষণা করেন, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না এবং এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়। ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং ২৩ তারিখ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞ চিত্তে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

এরপর ’৫২ ও ’৬৯-এর রক্ত স্নাত পথ বেয়ে আসে ’৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি। ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তখন নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সে-সব ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মিনারের পবিত্র বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর (আমার হাতে ছিল হ্যান্ডমাইক) বলেছিলেন, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জননী জন্মভূমির বীর শহীদদের স্মরণে শপথ নিয়ে বলছি যে, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলার স্বাধিকার আদায় করব। যে ষড়যন্ত্রকারী দুশমনের দল ১৯৫২ সাল হতে শুরু করে বারবার বাংলার ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিককে হত্যা করেছে। যারা ২৩ বছর ধরে বাঙালির রক্ত-মাংস শুষে খেয়েছে, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন বানচালের জন্য, বাঙালিদের চিরতরে গোলাম করে রাখার জন্য তারা আজও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদের আত্মা আজ বাংলার ঘরে ঘরে ফরিয়াদ করে ফিরছে, বলছে, বাঙালি তুমি কাপুরুষ হইও না। স্বাধিকার আদায় করো। আমিও আজ এই শহীদ বেদী হতে বাংলার জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, প্রস্তুত হও, দরকার হয় রক্ত দিবো। কিন্তু স্বাধিকারের দাবির প্রশ্নে কোনো আপোষ নাই।’ অমর একুশে পালনে শহীদ মিনারে ব্যক্ত করা জাতির জনকের এই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি।

একুশে ফেব্রুয়ারি যুগে যুগে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। বিশেষ করে ৫২, ৬৯ এবং ৭১-এর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন। একুশের চেতনার পতাকা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একের পর এক লক্ষ্যপূরণ করছে। সফলভাবে করোনাসহ সবধরণের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সমগ্র বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জনহিতকর এ সব সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। মহান একুশের চেতনায় জাগ্রত বাংলার মানুষ অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের আর্থসামাজিক বিকাশ বেগবান রাখবে—এই হোক এবারের একুশের অঙ্গীকার।

তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ

আরএ/

Header Ad
Header Ad

চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রশিবিরের হামলা

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরেবাংলা হলের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রদলের অন্তত চারজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে ছাত্রশিবির এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন ওমর ফারুক সাগর, রেদোয়ান ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ কাইফ ও মোরশেদুল ইসলাম। তারা বর্তমানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক সাগর বলেন, “চট্টগ্রাম কলেজে আজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। আমন্ত্রণ পেয়ে আমরা সেখানে যাই। কিন্তু শেরেবাংলা হলের সামনে পৌঁছানোর পর ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা আচমকা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ছাত্রদল নেতা ফারুক চট্টগ্রাম কলেজে থাকতে পারবে না।’ এরপর আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।”

তিনি আরও বলেন, "হামলাকারীরা শিবির নেতা শামীম আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন কর্মী নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। তারা আমাদের মারধর করে এবং কলেজে ছাত্রদলের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করার হুমকি দেয়। বিষয়টি আমরা চকবাজার থানার ওসি ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি। তারা যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি তানভীর হোসেন জুয়েল। তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। তাই আমরা কোনো গ্যাদারিং করিনি এবং কলেজের বাইরে সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখেছি, ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ফরম বিতরণ করছিল। তাদের কোনো কলেজ ড্রেস বা আইডি কার্ড ছিল না। তখন কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের বাধা দেয় এবং জানায় যে এখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। তখনই উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু এটি রাজনৈতিক হামলা নয়। যদি ছাত্রশিবির হামলা করত, তাহলে তাদের নাম ও পদ-পদবি প্রকাশ করা হোক।”

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমার কাছে বিচার দিয়েছে যে, তারা লিফলেট বিতরণ করার সময় কিছু ছেলে এসে তাদের টানাহেঁচড়া করেছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি তাদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেছি। তারা জানিয়েছে, বার্ষিক ক্রীড়ার সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এসে জটলা করছিল এবং তারা বহিরাগত। এরপর আমি উভয়পক্ষকে কিছুক্ষণ কাউন্সেলিং করেছি।”

এই ঘটনায় কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে পরবর্তী কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।

Header Ad
Header Ad

সেমিফাইনালের পথে ভারত, কোহলির সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের হার

বিরাট কোহলি। ছবি: সংগৃহীত

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে জয় পেয়েছে ভারত। বিরাট কোহলির দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ২৪২ রানের লক্ষ্য সহজেই পার করেছে রোহিত শর্মার দল।

টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। ভারতীয় বোলারদের দাপটে ব্যাটিংয়ে সুবিধা করতে পারেনি বাবর আজমের দল। সৌদ শাকিলের ৬২, মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৪২ এবং খুশদিল শাহের ৩৮ রানের ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান ২৪১ রান সংগ্রহ করে। ভারতের পক্ষে কুলদীপ যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া ও মোহাম্মদ শামির বোলিং ছিল প্রশংসনীয়।

২৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল ভালো শুরু করেন। উদ্বোধনী জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৩১ রান যোগ করেন তারা। তবে পঞ্চম ওভারে শাহিন আফ্রিদির দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরে যান রোহিত শর্মা। এরপর ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি এবং শুবমান গিলের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়েন। ৫২ বলে ৪৬ রান করে গিল আউট হলে কোহলির সঙ্গী হন শ্রেয়াস আইয়ার।

কোহলি ও আইয়ারের ১১৪ রানের জুটি ভারতের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেন আইয়ার। তবে ৫৬ রানে খুশদিল শাহের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। অন্যদিকে কোহলি ছিলেন অবিচল। ৪২.৩ ওভারে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান। তিনি ১১১ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংসে বাবর আজম ও ইমাম-উল-হক ধীরে শুরু করলেও বড় ইনিংস গড়তে পারেননি। বাবর ২৬ বলে ২৩ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। অন্যদিকে রান আউট হয়ে ২৬ বলে মাত্র ১০ রান করে ফেরেন ইমাম। এরপর রিজওয়ান ও শাকিল ১০৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে শক্ত অবস্থানে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অক্ষর প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়ে ৭৭ বলে ৪৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন রিজওয়ান।

রিজওয়ান ফিরে গেলে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে। ৬২ রান করে শাকিলও বিদায় নেন। এরপর শেষ দিকে খুশদিল শাহ ৩৯ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে দলের সংগ্রহ ২৪১ রানে নিয়ে যান। ভারতের বোলারদের মধ্যে কুলদীপ, শামি ও হার্দিক পান্ডিয়া গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন।

বিরাট কোহলির অসাধারণ ব্যাটিং ও দলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল ভারত।

Header Ad
Header Ad

নাহিদের পদত্যাগ নিয়ে যা জানা গেল

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি এখনও পদত্যাগ করেননি। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে, সন্ধ্যায় তার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, "আমি পদত্যাগ করিনি। যে খবর ছড়িয়েছে, সেটা গুজব।"

এর আগে, গত মঙ্গলবার নাহিদ ইসলাম জানিয়েছিলেন, উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ এবং নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদানের বিষয়ে তিনি সপ্তাহের শেষ দিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রশিবিরের হামলা
সেমিফাইনালের পথে ভারত, কোহলির সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের হার
নাহিদের পদত্যাগ নিয়ে যা জানা গেল
দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে সড়কে প্রাণ গেল মায়ের
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে!
জীবন থাকতে কোনো স্থানীয় নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না: ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক
২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা, সরকারি ছুটি নিয়ে যা জানা গেল!
ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন, ছাত্রদলের নিন্দা
ভারতে ৫ বছর ধরে নিকটজনদের কাছে ধর্ষণের শিকার কিশোরী
ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফর ও স্টারলিংক চালুর আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টার
পাঁচ দফা দাবিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, একাডেমিক শাটডাউন ও লংমার্চের ঘোষণা
নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি সময়সীমা নির্ধারণ: সিইসি
নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অভিনেতা আজাদ, আহত মা ও স্ত্রী
আহতদের চিকিৎসা বন্ধে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিলো
এস আলম পরিবারের ৮,১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের নির্দেশ
প্রথমবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি বাণিজ্য চালু
৪ ডিআইজিকে বাধ্যতামূলক অবসর, জানা গেল নাম
পুলিশ প্রজাতন্ত্রের স্বাধীন কর্মচারী, কোনো দলের নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ধর্ষণের প্রতিবাদে আসাদ গেটে ছাত্র-জনতার সড়ক অবরোধ
স্ত্রীর সামনে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২