বায়ুদূষণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত
বায়ুদূষণে বাংলাদেশ শীর্ষে। কথাটি খুবই দুঃখজনক। বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তার মানে কিন্তু বিষয়টি এমন নয় যে এই দূষণ হঠাৎ করে আপনাকে মেরে ফেলবে। এটি ধীরে ধীরে আপনার জীবনীশক্তি ক্ষয় করে ফেলবে।
ঢাকা শহরের মানুষের স্বাভাবিক আচরণ বদলে গেছে বায়ু ও শব্দদূষণের কারণে। মানুষের মধ্যে উচ্চ স্বরে কথা বলা, অল্পতেই মেজাজ হারানো বা ক্ষেপে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয় শব্দদূষণ থেকে। একইভাবে বায়ুদূষণের মতো অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পরিবেশ অধিদপ্তর—কিন্তু সেই অর্থে এরা কেউ কখনোই কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমি অন্তত দেখিনি।
বায়ুদূষণের মতো শব্দদূষণ অর্থাৎ পরিবেশদূষণ ঢাকার মানুষের জন্য খুবই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হাইড্রোলিক হর্ন। এই হর্ন কিন্তু বেশি ব্যবহার করেন ‘কর্তাব্যক্তিরা’। একটা হাত তুলে এসব হর্ন বাজাতে বাধা দেওয়ার মতো কেউ যেন নেই। এই যে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে শব্দদূষণকে প্রণোদিত করা হচ্ছে, তা বড় ক্ষতি বয়ে আনছে। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কর্ণপাত করছেন না। হর্নের শব্দ শুনতে শুনতে হয়তো তারা এসব শোনার মতো অবস্থায় নেই।
একবার আমরা শব্দদূষণ ও কানের ক্ষমতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলাম। সেই সময় আমরা ঢাকার ফার্মগেট ও তেজগাঁওয়ের চারটি স্কুলে পর্যালোচনা করি। আমরা দেখতে পাই, যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে বা রিকশায় করে আসে, তাহলে অধিকাংশ শিশুর মাথা ধরে যায়।
চিকিৎসকেরা মনে করেন, এর মূল কারণ শব্দদূষণ। আরও দেখা যায়, ঢাকার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুসের সক্ষমতা কম। এর কারণও বায়ুদূষণ।
বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মাধ্যমে একটা বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরি করা হচ্ছে। এটা কিন্তু ভয়াবহ ঘটনা। আমি মনে করি, চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর, ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশন মিলে দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ট্রাফিক পুলিশের উচিত, অন্তত নিজেদের সদস্যদের স্বার্থে শব্দদূষণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া।
ঢাকার দূষণের চিত্র বিশ্বের অন্য বড় শহরগুলোর চেয়ে আলাদা। যানবাহনের ধোঁয়া এজন্য বড় বিষয় হলেও নির্মাণকাজ এবং রাস্তা কাটার কারণে প্রচুর ধুলো-বালি হয়। এ ছাড়া শহরের চারপাশে ইট ভাটার কারণেও পরিবেশের দূষণ বাড়ছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বায়ুদূষণ হয়ে উঠে আকাশচুম্বী।
ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ দিনের পর দিন যে খারাপের দিকে যাচ্ছে, সেকথা সবার জানা। কিন্তু এ পরিস্থিতির শিগগিরই কোনো উন্নতি হবে এমন আশা করতে পারছেন না নগরের বাসিন্দারা। ফলশ্রুতিতে ঢাকা শহর দিন দিন নগরবাসীদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ইকবাল হাবিব: স্থপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক
এসএন