মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনায় নজরদারি দরকার
প্রথমত স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে অনেক পরিকল্পনা ও অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গণপরিবহনভিত্তিক প্রথম পরিকল্পিত পদক্ষেপ হলো— মেট্রোরেল।
আমরা সবসময় বলে এসেছি, সম্পদের স্বল্পতা, স্থানাভাব ও অতি জনঘনত্ব এই তিনটির যুগোপযোগী অবস্থায় গণপরিবহনভিত্তিক অবদান বিশেষ করে ঢাকার ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই। তারমানে আমাদের যতটুকু সড়ক রয়েছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার গণপরিবহন ভিত্তিতে অথবা গণপরিবহনের প্রাধান্যে তৈরি করা, পদচারি বান্ধবতা তৈরি করা অথবা উচ্চ প্রযুক্তির বিনিয়োগে মেট্রোরেল অথবা ইলেকট্রিক অথবা আন্ডারগ্রাউন্ড পাতাল রেলের মাধ্যমে করা। সেই অর্থে এটি একটি বিরাট উত্তরণ। কিন্তু যেকোনো রাষ্ট্রে তার যে অর্থনৈতিক অবস্থা সেখানে আমরা যদি টেকসই উন্নয়নের কথা বলি, তাহলে আমার অর্থনৈতিক সামর্থ্য অনুযায়ী যে সমস্ত বিকল্প অনেক কম খরচে অনেক বেশি মানুষকে বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, সেই বিকল্পগুলো আগে চালিত করতে হয়।
মেট্রোরেল ঢাকাকে সামগ্রিক গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার দুয়ার উন্মোচন করেছে। কারণ এটি একটি নিরাপদ এবং যুতসই আধুনিক বাহন। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় সব বাধা ডিঙিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে আরেক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর যদি ইলেকট্রিক বাস নামে, পাশাপাশি প্রশস্ত ফুটপাত চালু হয়, তাহলে তা মানুষের জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার হবে। মেট্রোরেল চালুর পর তার উপযোগিতাও নিশ্চিত করতে হবে।
এরসঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে একটি কঠোর রাজনৈতিক মনোভাব তৈরি করতে হবে। শহরগুলোকে বাসের জন্য অবমুক্ত আর ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য কঠিন করে তুলতে হবে।এটি ঠিক মেট্রোরেল চালু হওয়ায় বাস মালিকরা হোঁচট খাবেন। তারা সেবা বাড়াতে বাধ্য হবেন। যৌক্তিক ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করবেন। এতে নগর পরিবহনের নৈরাজ্য মারাত্মকভাবে কমে আসবে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ছয় মাসের মাথায় দেশের যোগাযোগ খাতে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে মেট্রোরেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ২০০৫ সালে ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তখন থেকেই ঢাকার গণপরিবহনের একটি স্বপ্নের উপকরণ বাড়তে থাকে। এটি বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রেন, চলবে সফটওয়্যারে।
আমরা ২০০৫ সাল থেকে বলেছি, গণপরিবহন ছাড়া এই নগরীর মুক্তি নেই। গণপরিবহনের বদলে প্রাইভেটকার কিংবা ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নির্ভর যান দিয়ে নগরের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে মেট্রোরেল প্রথম আধুনিক প্রযুক্তির একটি গণপরিবহন এই নগরীতে উদ্বোধন হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে আমরা স্বীকার করে নিয়েছি, আমরা আসলে গণপরিবহনের দিকে যাত্রা শুরু করে দিয়েছি। যে কারণে মেট্রোরেল উদ্বোধনের দিনটি কাগজে-কলমে মাইলফলক হিসেবে লেখা থাকবে। ওই দিনে আমরা চিন্তার একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের দিকে গেছি। সেটা হচ্ছে, ব্যক্তিগত গাড়ির উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যে উন্নয়ন চিন্তা করেছিলাম, সেটা থেকে সরে আসতে শুরু করেছি। আমরা সত্যিকার অর্থে সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে মেট্রোরেল চালু করেছি।
ইকবাল হাবিব: নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি
আরএ/