অর্থনৈতিক ভারসাম্য সুরক্ষায় গঠনমূলক পদক্ষেপ জরুরি
আমি মনে করি যে, নতুন বছরের অর্থনীতিতে ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে গত বছরের একটি প্রভাব থাকবে। আমাদের জন্য লক্ষণীয় বিষয় হলো পুরানো বছরের যে ঘাটতি অথবা সমস্যা ছিল তার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না সেটি দেখা। সেই কারণগুলোর দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখব, কারণগুলোর সহসা কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে জ্বালানি সংকট যুক্ত হয়েছে, সেখানেও রাজনৈতিক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ডলারের যে উচ্চমূল্য সেটি আগামীতেও থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এসবের তড়িৎ সমাধান আশা করা যায় না।
অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে যে কারণগুলো ছিল, সেটি কিছুটা প্রশমিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন— বাড়তি ব্যয় কমিয়ে আনা, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা করা, অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় কমানো ইত্যাদি।
অন্যদিকে, অর্থের অপচয়, ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া, দুর্নীতি সেগুলো কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। রেমিট্যান্সের প্রবাহের ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জটি রয়ে গেছে। রপ্তানিক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো গেলে অর্থনীতি হয়তো জুন অবধি কিছুটা পরিবর্তন হবে। তবে খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হবে সেটি আশা করা যায় না।
জুলাই থেকে ডিসেম্বর অব্দি জ্বালানিখাতে যদি বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসে, বিশেষ করে শীত পরবর্তী সময়কালে ইউরোপে জ্বালানি বাজারে যদি পরিবর্তন আসে, ডলার যদি কিছুটা কম মূল্যমান হয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ যদি কিছুটা ইতিবাচক হয়, এ সমস্ত অনেকগুলো যদি নিয়ে হয়তো দ্বিতীয়ার্ধে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তার সঙ্গে যুক্ত হবে আমাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। সেক্ষেত্রে সীমিত পর্যায়ে এক ধরনের অস্থিরতা থাকতে পারে। তবে বড় রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না।
আমি মনে করি, নির্বাচন অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। অর্থাৎ এ বছর অর্থনীতিতে নির্বাচন একটি ভূমিকা রাখবে। সবকিছু মিলিয়ে যেটি মনে হয়, ২০২৩ বছরটি ২০২২ সালের অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই হয়তো যাবে। সেটি শুধু বাংলাদেশ কেন্দ্রিক হবে তা নয়, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তারাও বিভিন্নভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইএমএফের কাছে থেকে ঋণ সহায়তার উদ্যোগটি এখন প্রায় শেষের পর্যায়ে, সেখানে যে সমস্ত শর্তাদি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পরিপালন করলে আমার ধারণা বছর শেষে আমরা তার একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাব।
একইভাবে অন্যান্য উৎসগুলো থেকে যদি ঋণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে, বিশ্বব্যাংকসহ প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর, এশিয়ান ব্যাংক থেকে তার ঋণপ্রাপ্তি, সেক্ষেত্রে হয়তো আমাদের বিনিয়োগ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এবং রিজার্ভের ক্ষেত্রে যদি একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে আসা যায়, সেটিও অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক হবে বলে আমি মনে করি। মোট কথা এ বছরটিও আমাদের জন্য একটি নিম্ন ভারসাম্যের মধ্যদিয়েই হয়তো অধিকাংশ সময় কাটাতে হতে পারে। আমাদের অর্থনৈতিক যে প্রবৃদ্ধি সেটি হয়তো বজায় রাখা একটু কষ্টকর হবে। সেদিকটি নজরে রেখেই আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলো সাজানো উচিত।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: সিপিডির গবেষণা পরিচালক
আরএ/