সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

স্মৃতির পাতায় ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান

জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯ এর ২৪ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। প্রত্যেক মানুষের জীবনে উজ্জ্বলতম দিন আছে। আমার জীবনেও কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা আছে। ৬৯ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কালপর্ব। এই পর্বে আইয়ুবের লৌহ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে বাংলার ছাত্রসমাজ ৬৯-এর ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। জাতীয় জীবনে জানুয়ারি মাস ফিরে এলে ৬৯-এর গণআন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনগুলো স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। জীবনের সেই সোনালী দিনগুলির প্রতিটি মুহূর্তের কথা মনে পড়ে। অনেক সময় ভাবি, কী করে এটি সম্ভব হয়েছিল!

৬৬-৬৭ তে আমি ইকবাল হল (শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের সহসভাপতি এবং ৬৭-৬৮ তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ তথা ডাকসুর সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সূতিকাগার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৬০-এর দশকের গুরুত্ব অনন্য। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ৪৮ ও ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা ও ৬৯-এর ১১ দফা আন্দোলন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা দেন আমি তখন ইকবাল হলের সহসভাপতি। ইকবাল হলের সহসভাপতির কক্ষ ছিল ৩১৩ নম্বর। এই কক্ষে প্রায়শই অবস্থান করতেন শ্রদ্ধেয় নেতা মণি ভাই, সিরাজ ভাই এবং রাজ্জাক ভাই। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দেওয়ার পর আমাদের বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ অর্থাৎ এই ৬ দফার সিঁড়ি বেয়ে তিনি স্বাধীনতায় পৌঁছবেন।

বিচক্ষণ নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাজনীতি করেছেন। স্বাধীনতার লক্ষ্য সামনে নিয়েই ৪৮-এ ছাত্রলীগ ও ৪৯-এ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করে মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বীজ রোপণ করে ৬ দফায় বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার জাতির সামনে পেশ করেন। ৬ দফা দেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় বঙ্গবন্ধুর নামে ১০টি মামলা দায়ের করা হয়। প্রতিটি মামলায় জামিন পেলেও নারায়ণগঞ্জ থেকে সভা করে ঢাকায় ফেরার পর ‘পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনে’ তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ডাকে ৭ জুন সর্বাত্মক হরতালে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ৬৮-এর ১৮ জানুয়ারি জেল থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেলেও পুনরায় জেলগেটেই গ্রেফতার করে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে আমরা জানতাম না প্রিয়নেতা কোথায় কেমন আছেন। ৬৮-এর ১৯ জুন আগরতলা মামলার বিচার শুরু হলে আমরা বুঝতে পারি আইয়ুব খান রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ তুলে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে মৃত্যদণ্ড দেবে। আইয়ুব খান প্রদত্ত মামলার নামই ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য।’ আমরা ছাত্রসমাজ এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলি।

স্মৃতিকথা লিখতে বসে মনে পড়ছে, ডাকসুসহ ৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ঐতিহাসিক ১১ দফার ভিত্তিতে ৬৯-এর ৪ জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠার কথা। মনে পড়ে ১১ দফা আন্দোলনের প্রণেতা-ছাত্রলীগ সভাপতি প্রয়াত আব্দুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) সভাপতি প্রয়াত সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক ও সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দোহা, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল্লাহ এবং এনএসএফ-এর একাংশের সভাপতি প্রয়াত ইব্রাহিম খলিল ও সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম মুন্সীর কথা। ছাত্রনেতাদের প্রত্যেকেই ছিলেন খ্যাতিমান। আমি ডাকসু ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করি। আমার সঙ্গে ছিলেন ডাকসু জিএস নাজিম কামরান চৌধুরী।

৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১১ দফা প্রণয়নের পর এটাই প্রথম কর্মসূচি। ডাকসু ভিপি হিসেবে আমার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গভর্নর মোনায়েম খান ১৪৪ ধারা জারি করেন। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব ছিল সিদ্ধান্ত দেওয়ার ১৪৪ ধারা ভাঙবো কি ভাঙবো না। উপস্থিত ছাত্রদের চোখেমুখে ছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দৃঢ়তা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে শ’পাঁচেক ছাত্র নিয়ে রাজপথে এলাম। পুলিশ বাহিনী আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে। ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রউফ ঘটনাস্থালে আহত হন। আমরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসি। পরদিন ১৮ জানুয়ারি পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘট কর্মসূচি দেই। ১৮ জানুয়ারি বটতলায় জমায়েত। যথারীতি আমি সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট ছিল বিধায় সকালে বটতলায় ছাত্র জমায়েতের পর খণ্ড খণ্ড মিছিল এবং সহস্র কণ্ঠের উচ্চারণ, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই, আইয়ুব খানের পতন চাই।’ গতকালের চেয়ে আজকের সমাবেশ বড়। সেদিনও ১৪৪ ধারা বলবৎ ছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজপথে নেমে এলাম। দাঙ্গা পুলিশ লাঠিচার্জ আর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ফিরে এলাম ক্যাম্পাসে। কর্মসূচি নেওয়া হলো ১৯ জানুয়ারি আমরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল করবো এবং ১৪৪ ধারা ভাঙবো। সেদিন ছিল রবিবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। কিন্তু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছিল। আমরা মিছিল শুরু করি। শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ। কিন্তু কিছুই মানছে না ছাত্ররা। শঙ্কাহীন প্রতিটি ছাত্রের মুখ। গত দু’দিনের চেয়ে মিছিল আরও বড়। পুলিশ গুলি চালালো। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুল হক, বাড়ি দিনাজপুর, গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে রাজপথে। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি শহীদ হন। পুলিশের নির্যাতন ও গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি সোমবার আবার বটতলায় সমাবেশের কর্মসূচি দেই। ২০ জানুয়ারি ৬৯-এর গণআন্দোলনের মাইলফলক। এদিন ১১ দফা দাবিতে ঢাকাসহ প্রদেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। যখন সভাপতির ভাষণ দিচ্ছি তখন মিল-কারখানা, অফিস-আদালত থেকে দলে দলে মানুষ আসছে বটতলা প্রাঙ্গণে। সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে সেদিন বলেছিলাম, ‘যতদিন আগরতলা মামলার ষাড়যন্ত্রিক কার্যকলাপ ধ্বংস করে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্ত করতে না পারবো, ততদিন আন্দোলন চলবে। স্বৈরশাসক আইয়ুব-মোনায়েম শাহীর পতন না ঘটিয়ে বাংলার ছাত্রসমাজ ঘরে ফিরবে না।

পুনরায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা দিলাম। লক্ষ মানুষের মিছিল নেমে এলো রাজপথে। কোথায় গেল ১৪৪ ধারা! আমরা ছিলাম মিছিলের মাঝখানে। মিছিল যখন আগের কলাভবন বর্তমান মেডিকেল কলেজের সামনে ঠিক তখনই গুলি শুরু হয়। আমি, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী ও আসাদুজ্জামান (শহীদ) একসাথে ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য করে এক পুলিশ ইন্সপেক্টর গুলি ছোঁড়ে। গুলি লাগে আসাদুজ্জামানের বুকে। সাথে সাথে ঢলে পড়ে আসাদ। আসাদকে ধরাধরি করে মেডিকেল কলেজের দিকে নেওয়ার পথে আমাদের হাতের উপরেই সে মৃত্যুবরণ করে। একজন শহীদের শেষ নিশ্বাস স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। মৃত্যু এতো কাছে হাতের উপর!

মেডিকেলের সিঁড়িতে আসাদের লাশ রাখা হয়। তার গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত শার্টটি সংগ্রামের পতাকা করে আমরা আসাদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ নিয়ে সমস্বরে বলি, ‘আসাদ তুমি চলে গেছ। তুমি আর ফিরে আসবে না আমাদের কাছে। তোমার রক্ত ছুঁয়ে শপথ করছি, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মায়ের কোলে ফিরে যাবো না।’

এরপর ছুটে গেলাম শহীদ মিনার চত্বরে। আসাদের মত্যুর খবর ঘোষণা করলাম শোকার্ত জনতার মাঝে। আসাদের রক্তাক্ত শার্ট সামনে রেখে সমাবেশের উদ্দেশে বললাম, ‘আসাদের এই রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না’ এবং ২১ জানুয়ারি পল্টনে আসাদের গায়েবানা জানাজা ও ১২টা পর্যন্ত হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করি। আমাদের সত্তা ও অস্তিত্ব আসাদের রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হলো। শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া শোক মিছিল মুহূর্তেই লক্ষ মানুষের বিক্ষোভ মিছিলে পরিণত হলো। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শোক মিছিল যখন ৩ নেতার সমাধির কাছে তখন সেনাসদস্যরা মাইকে বলছে, ‘ডোন্ট ক্রস, ডেঞ্জার-ডেঞ্জার, ডোন্ট ক্রস!’ কিন্তু শোক মিছিল ক্ষোভে উত্তাল। ‘ডেঞ্জার’ শব্দের কোনো মূল্যই নেই মিছিলের কাছে। মিছিল নির্ভয়ে এগিয়ে গেল।

২১ জানুয়ারি পূর্বঘোষিত হরতাল কর্মসূচি পালিত হলো। চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামলো পল্টন ময়দানে। মাইক, মঞ্চ কিছুই ছিল না। পল্টনে চারাগাছের ইটের বেষ্টনীর উপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে হলো। বক্তৃতার পর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করি।

২২ জানুয়ারি শোক মিছিল, কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন। ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মশাল মিছিল, পরে কালো পতাকাসহ শোক মিছিল। ২৪ জানুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল। ২২ জানুয়ারি ঢাকা নগরীতে এমন কোনো লোক দেখিনি যার বুকে কালো ব্যাজ নেই। বাড়িতে, অফিসে সর্বত্রই কালো পতাকা উড়ছে। একমাত্র ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া ঘৃণা প্রকাশের এই প্রতীকী প্রতিবাদ ছিল সর্বত্র। ২৩ জানুয়ারি শহরের সমস্ত অলিগলি থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয় মশাল মিছিল। সমগ্র ঢাকা পরিণত হয় মশালের নগরীতে। ২৪ জানুয়ারি সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। সর্বত্র মানুষের একই প্রশ্ন, ‘শেখ মুজিব কবে মুক্তি পাবে?’ ‘কবে আগরতলা মামলা তুলে নেওয়া হবে?’

হরতালের পর সমগ্র জনপদ গণঅভ্যুত্থানের প্রবল বিস্ফোরণে প্রকম্পিত, অগ্নিগর্ভ। জনরোষ নিয়ন্ত্রণ করে নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখা যে কত কঠিন সেদিন মর্মে মর্মে অনুভব করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী, ইপিআর এবং পুলিশ মরিয়া হয়ে ওঠে বিক্ষোভ দমনে। যত্রতত্র গুলি চালাতে থাকে। সে গুলিতেই শহীদের তালিকায় যুক্ত হয় মতিউর, মকবুল, আনোয়ার, রুস্তম, মিলন, আলমগীর, আনোয়ারাসহ আরও অনেক নাম। লক্ষ মানুষ নেমে আসে ঢাকার রাজপথে। মানুষের পুঞ্জিভূত ঘৃণা এমন ভয়ঙ্কর ক্ষোভে পরিণত হয় যে, বিক্ষুব্ধ মানুষ সরকারি ভবন ও সরকার সমর্থিত পত্রিকাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ‘দৈনিক পাকিস্তান’, ‘মর্নিং নিউজ’ এবং ‘পয়গাম’ অফিস ভস্মীভূত হয়। আগরতলা মামলার প্রধান বিচারপতি এস রহমান বাসভবন থেকে এক বস্ত্রে পালিয়ে যায়। নবাব হাসান আসকারি, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য এনএ লস্কর এবং রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধকারী খাজা শাহাবুদ্দীনসহ আরও কয়েক মন্ত্রীর বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়।

ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউশনের দশম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমানের লাশ নিয়ে আমরা পল্টনে যাই। লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণে পল্টন ময়দানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর বিক্ষুব্ধ জনতা গভর্নর হাউস আক্রমণে উদ্যত হয়। বিনা মাইকে বক্তৃতা করে জনতাকে শান্ত করি। গণমিছিল করে মতিউরের লাশ নিয়ে ইকবাল হলের মাঠে আসি। যে মাঠে এসেছিলেন সদ্য-সন্তানহারা শহীদ মতিউরের পিতা আজহার আলী মল্লিক। তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেছিলেন, ‘আমার ছেলে চলে গেছে দুঃখ নাই। কিন্তু আমার ছেলের এই রক্ত যেন বৃথা না যায়।’

যখন ইকবাল হলে পৌঁছাই তখনই রেডিওতে ঘোষিত হয় ঢাকায় কারফিউ। মতিউরের পকেটে এক টুকরো কাগজে নাম-ঠিকানাসহ লেখা ছিল, ‘মা-গো, মিছিলে যাচ্ছি। যদি ফিরে না আসি মা, মনে কোরো তোমার ছেলে বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য, শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে। ইতি- মতিউর রহমান, ১০ম শ্রেণি, নবকুমার ইনস্টিটিউশন। পিতা: আজহার আলী মল্লিক, ন্যাশনাল ব্যাংক কলোনি, মতিঝিল।’

কারফিউর মধ্যেই মতিউরের লাশ নিয়ে যাই ন্যাশনাল ব্যাংক কলোনিতে। আমরা পিতামাতার আকুল আর্তনাদের আশঙ্কা করছিলাম। কিন্তু মা শুধু আঁচলে চোখ মুছে বলেন, ‘আমার ছেলে চলে গেছে দুঃখ নাই! আজ থেকে তুমি আমার ছেলে। মনে রেখো, যে জন্য আমার ছেলে রক্ত দিয়ে গেল, সেই রক্ত যেন বৃথা না যায়।’

৬৯-এর ২৪ জানুয়ারি গণআন্দোলন-গণবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় গণঅভ্যুত্থান। কারফিউর মধ্যে একদিনও থেমে থাকেনি আমাদের সংগ্রাম। দেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি প্রশাসন বর্জন করেছে। কল-কারখানা, অফিস-আদালত, সচিবালয় সর্বত্র প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য ধরনা দিতেন ইকবাল হলে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতাদের কাছে। কিছুদিনের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ইকবাল হল। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১১ দফার পক্ষে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীসহ বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন পেয়েছিলাম।

এরপর সান্ধ্য আইন প্রত্যাহৃত হলে ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ‘শপথ দিবস’ পালন করে। শপথ দিবসে আমার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয় এবং আমরা ১০ জন ছাত্রনেতা ‘জীবনের বিনিময়ে হলেও ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন করবো’ জাতির সামনে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করার শপথ নিয়ে স্লোগান তুলি, ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করবো, শপথ নিলাম শপথ নিলাম মা-গো তোমায় মুক্ত করবো।’

৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয় নেতাকে মুক্ত করে স্লোগানের প্রথম অংশ এবং ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তান হানাদারদের কবল থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করে স্লোগানের দ্বিতীয় অংশের পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছি। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন ও ডাকের জনসভায় জনতার দাবির মুখে প্রিয় নেতার ছবি বুকে ঝুলিয়ে বক্তৃতা করি। ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহার হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সংগ্রামী ছাত্র-জনতা আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে। মানুষ ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করে প্রিয়নেতাকে মুক্ত করতে চায়। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভা থেকে স্বৈরশাসকের উদ্দেশে আলটিমেটাম প্রদান করে বলি, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের প্রিয়নেতা শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’

২২ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত লৌহমানব আইয়ুব খান আমাদের দাবির কাছে নতিস্বীকার করে বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সকল রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদানে বাধ্য হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠদিন। সেদিন সদ্যকারামুক্ত প্রিয় নেতাকে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা প্রদান করা হয়। স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে দিনটির ছবি। এমন একজন মহান নেতার গণসংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সেদিনের রেসকোর্স ময়দান ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ, জনসমুদ্র। চিরাচরিত প্রথা ভঙ্গ করে আগেই সভাপতির ভাষণ প্রদানের অনুমতি চেয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। দশ লক্ষাধিক লোক দু’হাত তুলে সম্মতি জানিয়েছিল। বক্তৃতায় আমি বঙ্গবন্ধুকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে বলেছিলাম, ‘প্রিয় নেতা, তোমার কাছে আমরা ঋণী, বাঙালি জাতি চিরঋণী। কারণ তুমি জেল-জুলুম অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছো। তোমার জীবন তুমি বাঙালি জাতির জন্য উৎসর্গ করেছো প্রিয় নেতা। এই ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। তাই কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞ চিত্তে তোমাকে একটি উপাধি দিয়ে সেই ঋণের বোঝাটা আমরা হালকা করতে চাই।’

দশ লক্ষাধিক লোক দু’হাত উত্তোলন করে সম্মতি জানাবার পর সেই নেতাকে— যিনি জীবনের যৌবন কাটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে, ফাঁসির মঞ্চে দাড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন— ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে সেদিন এই প্রস্তাব গ্রহণ করে বাংলার মানুষ লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনি তুলেছিল, ‘জয় বঙ্গবন্ধু।’
সেদিন ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে বাংলার মানুষ সুনির্দিষ্ট আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে সংগ্রাম করেছে। সোনালী সেই দিনগুলির কথা ভাবলে গর্বে বুক ভরে ওঠে। আমরা মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছি। শহীদ মতিউরের মা ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেছিলেন, ‘আমার সন্তানের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’ শহীদ মতিউরের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেইনি।

২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের বীরোচিত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে আন্দোলন রক্তে রঞ্জিত হয়, সেই আন্দোলনের সফল পরিণতি বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার প্রাপ্তি, ৭০-এর নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ এবং পরিশেষে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহত্তর বিজয় অর্জন। আর এ সব অর্জনের ড্রেস রিহার্সেল ছিল ৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থান— যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং থাকবে চিরদিন।

তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি

আরএ/

Header Ad

নিখোঁজের চারদিন পর নদী থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে নিখোঁজের চারদিন পর নদী থেকে মহিম বাবু নামে ছয় বছরের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

রবিবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ। মাহিম উপজেলার নাকাইহাট ইউনিয়নের গ্রামের খুকশিয়া গ্রামের মাজেদুল ইসলামের ছেলে। শিশুটি গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে নিখোঁজ ছিল।

স্বজনরা জানান, নিখোঁজের পর থেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও মাহিমের কোন সন্ধান পাওয়া যচ্ছিলো না। এরই এক পর্যায়ে রবিবার বিকেলে আনুমানিক ৪টার দিকে বাড়ীর পার্শ্ববর্তী নলেয়া নদীতে একটি শিশুর মরদেহ ভেসে ওঠার খবর পান তারা। মাহিমের পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে লাশটি মাহিমের বলে শনাক্ত করে।

খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, পানিতে পড়ে শিশু মাহিমের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের হয়েছে।

Header Ad

নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা রেল লাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি। আর তা হবে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যমত্যের মাধ্যমে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি একথা জানান।

নির্বাচন কবে হবে এই প্রশ্ন সবার মনেই আছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তারপর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সমস্ত দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে।

তিনি বলেন, একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আপনারাই আমাদেরকে এই ম্যান্ডেট দিয়েছেন। যে ছয়টি সংস্কার কমিশন আমরা শুরুতে গঠন করেছিলাম তারা ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই কমিশনের সুপারিশমালা অত্যন্ত জরুরি। তাদের প্ল্যাটফর্মে যান। আপনার মতামত খোলাখুলিভাবে তুলে ধরুন। আপনি দেশের মালিক। আপনি বলে দিন আপনি কি চান। কীভাবে চান।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে আপনাদের সকল বক্তব্য বিনাদ্বিধায় বলতে থাকুন। সবার মনের কথা তুলে ধরুন। আমার অনুরোধ সংস্কারের কথাটাও একই সঙ্গে বলুন। সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। নির্বাচনের কথা বলার সঙ্গে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের কথাটিও বলুন। সংস্কার হলো জাতির দীর্ঘ মেয়াদি জীবনী শক্তি। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ দেবে। জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।

নির্বাচন আয়োজনে যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দলসমূহ এবং দেশের সব মানুষের মতামত অপরিহার্য সে কমিশন হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই সুপারিশমালার কোন অংশ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তার ভিত্তিতে নির্বাচনী আইন সংশোধন করতে হবে। সমান্তরালভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে, বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, আমি নিশ্চিত নই, সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের সুযোগ আমরা কতটুকু পাবো। তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা সুযোগ দিলে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার কাজ শেষ করেই আমরা আপনাদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আয়োজন করবো। ততদিন পর্যন্ত আমি আপনাদের ধৈর্য্য ধারণ করার অনুরোধ করবো। আমরা চাইবো, আমরা যেন এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি যা যুগযুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এর ফলে সাংবাৎসরিক রাজনৈতিক সংকট থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকে নীতির কাঠামোয় আনার জন্য, এবং রাজনীতির জন্য নতুন পরিবেশ সৃষ্টির নিবিড় আকাঙ্ক্ষা থেকে। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা থেকে জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।

Header Ad

ঢাবি ছাত্রদলের ৬ নেতাকে অব্যাহতি

ছবি: সংগৃহীত

সদ্যঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থেকে ছয়জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ওই ছয়জনকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, গত ১৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়।

কমিটি ঘোষণার পর কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হলে কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ছয়জনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন- সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়া সাইফুল ইসলাম রিমন ও মাহাদী ইসলাম নিয়ন, জেন্ডার ন্যায্যতা ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা সুকাইনা নাফিসা তরঙ্গ, সহ-পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক ইমরান হোসেন এবং সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন ও রায়হান হোসেন।

গত ১৪ নভেম্বর ২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি শাখা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এ কমিটিতে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিদ্রুপকারী এক শিক্ষার্থী পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

ওই দিনই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি জহির রায়হান আহমেদ ও এবিএম ইজাজুল কবির রুয়েলের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এই ছয়জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাজ চলমান থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নিখোঁজের চারদিন পর নদী থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার
নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাবি ছাত্রদলের ৬ নেতাকে অব্যাহতি
গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কারাগারে
নখের পাশে চামড়া ওঠে কেন, করণীয় কী?
মেট্রোরেলের এমআরটি-৫ প্রকল্পে ব্যয় কমলো ৭ হাজার কোটি টাকা
সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন ও তাঁর স্বামীর পাসপোর্ট আবেদন স্থগিত
বন্ধু ছাঁটাই করার দিন আজ
বিমানবন্দর থেকে দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান গ্রেফতার
মাওলানা ভাসানী সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রেরণাদাতা: তারেক রহমান
ইসরায়েলের পাঁচ সামরিক ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর রকেট হামলা
পরীক্ষায় ফেলের হতাশা থেকে স্কুলে হামলা, নিহত ৮
মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
উত্তরের জনপদে শীতের আমেজ, পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নেমেছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
নতুন প্রেমে মজেছেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা
এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ার
ইলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠকের কথা নাকচ করেছে ইরান
সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই সাইফুল্লাহ
পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ৭ সেনা নিহত