বৈশ্বিক ভারসাম্য রক্ষায় আন্তর্জাতিক ঐক্য জরুরি
নববর্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা। নতুন বছর শুভ হোক। স্বপ্ন পূরণের পথে অর্থাৎ দেশ উত্তরোত্তর উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাক। এই প্রত্যাশা আমরা সবসময় করি। বছর ঘুরে যখন নববর্ষ আসে, এটি আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। নতুন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়।
নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা সে কথাটিই বলব। আমরা আশা করব সকলেই সুস্থ থাকুক। বছরটি সকলের জন্যই শুভ হোক। মঙ্গল হোক। নতুন বছরের প্রাক্কালে সবার জন্য এটিই প্রার্থনা করছি।
আমাদের প্রথম প্রত্যাশা হবে, আমরা শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে জাতি হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। কারণ, নতুন বছরের মধ্যদিয়েই আগামীতে একটি নির্বাচন আছে, সেটির প্রক্রিয়াও শুরু হবে। এ বছরটি যেন শান্তিপূর্ণভাবেই রাজনৈতিক বাতাবরনটুকু থাকে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিটুকু যেন নির্ভিঘ্ন ও নির্ভার থাকে। এটি আমাদের প্রথম প্রত্যাশা।
দ্বিতীয় প্রত্যাশা হচ্ছে, বৈশ্বিকভাবে আমরা একটি আলোড়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আশা করি, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক। এ যুদ্ধের ফলে শুধু যে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, সারা বিশ্বে নেতিবাচক প্রভাবের মাধ্যমে জীবনযাত্রার উপর যথেষ্ট চাপ পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ যেহেতু স্বল্প উন্নত দেশগুলোর কাতার পেরোবে, এখনো পেরোয়নি, কাজেই আমরা কিন্তু ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ইউক্রেনের যুদ্ধ যদি শেষ হয়, তাহলে আমি মনে করি যে, বৈশ্বিকভাবে অর্থনীতি আবার স্বাভাবিক জায়গায় আসার সুযোগ পাবে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় যে ক্রমান্বয়ে জটিল অবস্থা তৈরি হচ্ছে, সেখান থেকে আমরা একটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারব।
আরেকটি বিষয় যেটি বলব যে, আমাদের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যু, একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিল সমস্যা, এবং এই ইস্যুটি সমসাময়িক ডালপালা ছড়াচ্ছে, গত দুদিন ধরে যেসব খবরাখবর দেখছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে নৌকাযোগে ইন্দোনেশিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কায়ও রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা আটক করা হয়েছে। এইসব ঘটনাগুলো মানুষ হিসেবে আমাদেরকে ভাবায়। এটি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মায়ানমার যে অমানবিক ব্যবহার করছে, সেই অমানবিকতা ও নেতিবাচক আচরণের ঋণ আমরা শোধ করছি, সেই জায়গায় প্রত্যাশা হবে এটিই যে, তারা যেন সম্মানের সঙ্গে তাদের বাসভূমিতে ফিরে যেতে পারে। সেই জায়গায় আমরা যেন খানিকটা ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাই, সেটিই আমার প্রত্যাশা থাকবে।
পরিশেষে এটিই বলব যে, বাংলাদেশের মানুষ আমরা যারা আছি, বিশেষ করে অর্থনৈতিক চাপ যেটি আছে, ইত্যাদির সঙ্গে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। তারা আরও বেশি করে বৈশ্বিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল মিলাতে সচেষ্ট হোক, আরও বেশিমাত্রায় অর্থনীতিতে অবদান রাখুক, আরও বেশি করে এগিয়ে যাক, তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করুক, ২০২৩ সালে বিশেষভাবে এটিই আমার প্রত্যাশা।
এম. হুমায়ুন কবির: সাবেক রাষ্ট্রদূত