রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

সংকটকালে কৃষিই অর্থনীতির চালিকাশক্তি

ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি কৃষি। সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে এসেছে এদেশের কৃষি খাত। অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির চাকাকে গতিশীল রাখার ক্ষেত্রেও প্রধানতম শক্তির জায়গা হিসেবে আমরা সবসময় পেয়েছি এদেশের কৃষি, কৃষক এবংকৃষি উদ্যোক্তাদের। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু তার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন দর্শনের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধোত্তর দেশে কৃষি পুনর্গঠনে দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ মনোযোগ। তাই তার প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি ও পানিসম্পদ খাতকে সর্বোচ্চ (২৪ শতাংশ) বরাদ্দ পেতে দেখি।

অস্থির বৈশ্বিক বাস্তবতায় সদ্য স্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্প খাতের বিকাশের পাশাপাশি তিনি কৃষি ও কৃষকের সুরক্ষা নিশ্চিত করাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। ওই সময়টায় এখনকার মতো সারা বিশ্বেই তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল। খাদ্য সংকটও ছিল তীব্র। তাই কৃষি উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়াটা ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দেশের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে তার এই কৃষিমুখী নীতি ও উন্নয়নদর্শন অত্যন্ত গুরুত্ববহ ভূমিকা রেখেছে। তার দ্বিতীয় বিপ্লবের মূল প্রস্তাবনাতেও প্রধান জায়গায় ছিল কৃষি কেন্দ্রিক সমবায় আন্দোলন।

বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর দেশ পথ হারিয়েছিল।বঙ্গবন্ধুর শুরু করা সবুজ বিপ্লবও গতি হারিয়েছিল।  বহু বছর পর গেল শতাব্দীর একেবারে শেষে এসে আবার যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের হাল ধরেন তখন আমরা আবার ফিরতে পেরেছি টেকসই কৃষি উন্নয়নের পথে। মাঝে দেশবিরোধীদের কারণে এইঅভিযাত্রায় ছেদ পড়ে। তবে ২০০৯ থেকে দ্বিতীয় দফায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বকাঁধে নেওয়ার পর থেকে দেশের কৃষি খাতকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ সময়ে কৃষির সার্বিক ও টেকসই উন্নয়নের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই খাদ্য উৎপাদন সূচক, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ইত্যাদিতে বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রগতিতে। 

বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকালে এই কৃষিনীতির যে দিকটিতে বিশেষভাবে আলোকপাত করা দরকার তা হলো এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় আমাদের কৃষি খাতের অবদান, সক্ষমতা ও সম্ভাবনা। ২০০৮-০৯-এও বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থার সংকটকালে অনেকে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সেসময় সরকারের যথাযথ নির্দেশনা ও সহায়তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিয়েলইকোনমিতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। 

মূলত ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্থিক সেবা প্রান্তিক মানুষের কাছে বিশেষ করে কৃষিনির্ভর জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়াইছিল এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অভিযানের মূলনীতি। যথাযথ অর্থায়নের মাধ্যমে বহুমুখীকৃষির বিকাশ, নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি এবং সর্বোপরি কৃষকের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এগোনো আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এই অভিযান তখন সুফল দিয়েছিল। ৪০ শতাংশ কর্মশক্তি যেই কৃষি খাতে যুক্ত সেখানে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর ফলে বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও তাদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।একইসঙ্গে কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়িয়েছিল সরকার। সারের দাম ব্যাপক হারে কমিয়ে ছিল সরকার।কৃষকের হাতে টাকা থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও বেগবান হয়েছিল।আর এর সুফল পেয়েছে অর্থনীতির অন্যান্য খাতও। ফলে ওই মন্দা থেকে অর্থনীতিকে কেবল সুরক্ষিত করা গিয়েছিল তাই নয়, পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির চাকাকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেগবান করাও সম্ভব হয়েছিলে। 

একইভাবে সর্বশেষ করোনা জনিত অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থার সময়ও কৃষি আমাদের অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে। সে সময় যথাযথ প্রণোদনাসহ নানা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে কৃষির সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। ফলে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ বহাল থেকে ছিল। এমনকি শহরাঞ্চলে অস্থায়ী বেকারত্বের শিকার হয়ে যারা গ্রামে ফিরেছিলেন তাদেরও একটি বড় অংশের সহায় হয়েছিলএই কৃষি খাতই। এভাবেই বারেবারে দেশের কৃষি খাত সামষ্টিক অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তির্ণ হয়েছে।

করোনাজনিত সংকট থেকে পুনরুত্থান শুরু হতে না হতেই অনাকাঙ্ক্ষিত রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে গোটা বিশ্ব অর্থনীতি। প্রত্যাশিতভাবে সংকটের প্রভাব পড়ছে এদেশেও। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি হুঁশিয়ারি দিচ্ছে যে আগামী বছর বিশ্বজুড়েই ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। চলতি বছর সারাবিশ্বেই যে জলবায়ু পরিবর্তনের উথালপাথাল দেখা গেছে তাতেই খাদ্য উৎপাদন নিয়ে এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া বিশ্বের শস্য ভাণ্ডার বলে পরিচিত ইউক্রেন ও রাশিয়ায় যুদ্ধ চলতে থাকায় তাদের কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুদ্ধের কারণে খাদ্য পরিবহনেও সমস্যা হচ্ছে। এতে আমাদের মতো দেশে যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গম ও ভোজ্য তেলসহ অনেক খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। খাদ্য সরবরাহ পেতেও অসুবিধা হচ্ছে। এসবই আমাদের আমদানি মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর পেছনে কাজ করছে। আর এবছর আমাদের দেশসহ এই অঞ্চলে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়নি। তবে বর্ষাকালের শেষ প্রান্তে এসে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব আমন ফসলের ওপর পড়বে বলে মনে হয়।জমিতে রস থাকবে বলে বোরো ধান উৎপাদনেও কম সেচ লাগবে। তা সত্ত্বেও বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতি মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাপক হারে কমে যাবে বলে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ তাদের অর্থনৈতিক আউটলুক বা প্রক্ষেপণে একাধিকবার বলেই চলেছে। আইএমএফ আশঙ্কা করছে আগামী বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২.৯ শতাংশ হবে।গত ১৩-১৪ বছরেদেশকে একটি শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো গেছে বলে চলমান সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ অন্যঅধিকাংশ দেশের চেয়ে ভালো করছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী এবং রেটিং এজেন্সিগুলোও তাই বলছে। 

তবে চ্যালেঞ্জ যে রয়েছে তা তো মানতেইহ বে। একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, এই সংকট উত্তরণের ক্ষেত্রেও কৃষি সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষাকবচ হতে পারে। এ জন্য দরকার সময়োচিত নীতি গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী কৃষিকেই আমাদের সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য যথোপযুক্ত বাজেটারি সহায়তা ছাড়াও সহজ শর্তে ঋণ, সম্প্রসারণ এবং মার্কেটিং সমর্থন দিয়ে যেতে হবে।বঙ্গবন্ধু পুরস্কার পেয়েছেন যেসব কৃষক এবং যাদের নাম প্রস্তাব করা হয় সেগুলোর তথ্য ভাণ্ডার কৃষি মন্ত্রণালয়ে আছে। এরা আধুনিক কৃষক। এদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করা যায়।

সোলার সেচের বিকাশে আরও মনোযোগী হতে হবে। সরকার কৃষি যান্ত্রিকিকরণের জন্য যে ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে সেখান থেকে সোলার সেচ প্রকল্পও অনুরূপ ভর্তুকি দেওয়া হোক।পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া পঁচিশ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে কয়েক লক্ষ সোলার পাম্পের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।গবেষণা ও উদ্ভাবন সমর্থনের পাশাপাশি কৃষির উন্নয়নের জন্য মার্কেটিং ও গুদামজাত করার জন্য ঋণ দেওয়া যায়।কৃষি পণ্যের জন্য ই-কমার্স উৎসাহ দেওয়ার অংশ হিসেবে ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ছোট ঋণ মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো যেন ন্যানো ঋণ মডেলে দেয় তার নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক দিতে পারে।

আজকাল অনেক শিক্ষিত নারীও আধুনিক কৃষি উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাদের জন্য আলাদা কিছু ঋণ ও রাজস্ব সুবিধার কথা নিশ্চয় ভাবা যায়।কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের চালু করা স্টার্টআপ উদ্যোগ ত্বরান্বিত করা গেলে মন্দ হয় না। এবারের মন্দায় আমাদের কৃষি এবং ছোট উদ্যোগ প্রণোদিত করতেই হবে।

কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সব ধরনের নীতি সমর্থন দিতে হবে।বদলে যাওয়া গ্রাম বাংলায় অকৃষি খাতের প্রসারের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের হাতে প্রয়োজনীয় পুঁজি জোগান দিয়ে যেতে হবে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের গতি কতটা তা দেখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মনিটরিং জোরদার করতে পারে। এই কর্মসূচি যেন অব্যাহত থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে ঋণ দিতে উৎসাহী করার জন্য সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। সোলার পাম্পও এই কর্মসূচির সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। তাহলে কৃষিতে বিনিয়োগের হার বাড়বে। প্রয়োজনে এই গ্যারান্টি স্কিমের জন্য বাজেটারি বরাদ্দ আরও বাড়ানো যেতে পারে। ন্যানো ক্রেডিট ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ডিজিটাল ফাইন্যান্সের আওতায় ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ঋণ দেওয়ার যে উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তাদেরও এই সুযোগ দেওয়া হোক। কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে সরকার। সম্প্রতি  কৃষিমন্ত্রী বলেছেন যে এ বছর ২৮ হাজার কোটি বিনিয়োগ করেছে। আগামী বছর কৃষিতে এই বিনিয়োগ ৪৬ হাজার কোটি করবে বলে তিনি আশা করছেন কৃষির প্রতি  নীতিনির্ধারকদের এই মনোযোগ এই সংকটকালে খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।

লেখক: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

Header Ad
Header Ad

আনিসুল হকের তিন ব্যাংকে ২১ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক

সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক। ছবিঃ সংগৃহীত

সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের ৩ ব্যাংকে মোট ১৬টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব হিসাবগুলোতে প্রায় ২১ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যা ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুদক সূত্রে জানা যায়।

আনিসুল হকের হিসাবগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক বনানী শাখার ৬টি হিসাবের মধ্যে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে ৫ কোটি টাকা এবং অন্য এক হিসাবে এসসি গোল্ডেন বেনিফিটস নামে ৫০ লাখ ৮১ হাজার টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, সিটিজেন ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ৯টি হিসাব থেকে মোট ১৫ কোটি ১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে নথিপত্র সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করলে কমিশন আইন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবে।

এ বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও পাচারের অভিযোগ থাকলেও দুদক দালিলিক প্রমাণ ছাড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে না। আমাদের তথ্য ও সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। যা অংশ হিসাবে তিন ব্যাংকে প্রায় ২১ কোটি টাকা জমা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং ফ্রিজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই টাকা তার আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলেই আপাতত মনে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।

আনিসুল হক ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গত ৭ অক্টোবর থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। যার মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অপর এক সহযোগী ফারহানা ফেরদৌস নামে অপর এক নারীর বিরুদ্ধে আসা পৃথক আর একটি অভিযোগও আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদকের অনুসন্ধান টিম।

Header Ad
Header Ad

নরসিংদীতে ছাত্রদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা

হুমায়ুনের মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নরসিংদীর মেহেরপাড়ায় এক ছাত্রদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১২টার দিকে নরসিংদীর পাঁচদোনা মেহেরপাড়া বাড়ি আগিণার খেলার মাঠ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

নিহত হুমায়ুন কবির (২৬) মেহেরপাড়া ইউনিয়নের নাগরারহাট এলাকার একরামুল হকের ছেলে। তিনি মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য।

নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একই এলাকার বাদল মিয়া, শাহআলম ও আতাউর মেম্বারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল হুমায়ুন কবিরের। দ্বন্দ্বের জেরে ইতোমধ্যে দুই পক্ষ একাধিক মামলা করেছে। গতকাল শনিবার দিনগত রাতে নিহত হুমায়ুন বাড়ির পাশের আঙ্গিনায় ব্যাডমিন্টন খেলছিল। রাত ১২টার দিকে দুটি মোটরসাইকেল যোগে শাহ আলম ও টিপুসহ চারজন হুমায়ুনের বাড়ির সামনে আসে। ওই সময় তারা হুমায়ুনকে ব্যাডমিন্টন খেলা থেকে ডেকে পাঁচদোনা বাজার মাছের আড়ৎ মসজিদের দিকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে সন্ত্রাসীরা তার বুকে, পিঠে ও ঘারে পরপর তিনটি গুলি করে। এ সময় সে মাটিতে লুটিয়ে পরে। গুলির শব্দ শুনে খেলার মাঠ থেকে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে তারা মটোরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় হুমায়ুনকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, হুমায়ুন হত্যার বিচার দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এলাকাবাসী।

নিহত হুমায়ুনের বন্ধু ও মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সুজন ভূইয়া বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল নিহত হুমায়ুনের। তার নেতৃত্বেই পাঁচদোনা মেহেরপাড়া ও মাধবদী আন্দোলন হয়েছিল। এসব ঘটনা নিয়ে সে এলাকার অনেকের রোষানলে পড়ে। এসবের জেরে তার বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। প্রাণ বাঁচাতে সে পালিয়ে থাকে। ৫ তারিখের পর এলাকায় আসে। এর মধ্যেই গতকাল তাকে বাড়ির আঙ্গিনা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হলো।’

নিহতের বড় ভাই আল মামুন বলেন, ‘আমাদের ১৭ শতাংশ একটি জমি দখল করে নেয় বাদল মিয়ারা। পরে মামলার রায় পাওয়ার পর আমরা জমিটি দখলে নিই। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। এরই জের ধরে তারা আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ছাড়া স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এসব নিয়ে অনেকে তাকে দমানোর চেষ্টা করছিল।’

মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাডমিন্টন খেলা শেষে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটনসহ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।’

Header Ad
Header Ad

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের বিষয়ে নিশ্চিত নয় ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বিষয়ে নিশ্চিত নয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। নোটিশ জারি হলে তা পুলিশের এনসিবি শাখা জানাবে বলে জানান তাজুল ইসলাম। 

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে শেখ হাসিনাকে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে দেশে ফেরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে রেখেছেন চিফ প্রসিকিউটর। সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে অগ্রগতি জানানো হয়নি।

শুধু শেখ হাসিনাই নয়, দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন।

গত ১০ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে জানান, হাসিনাসহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় অভিযুক্ত পলাতক সকল আসামিকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে সরকার।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পুরাতন ভবনের সংস্কারকাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্র পৃথিবীর যে দেশেই থাকুক, ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে গত ১০ নভেম্বর ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

১২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা গণহত্যা, গুমসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এবং মামলার আসামি। তবে তিনি পালিয়ে গেছেন এবং বর্তমানে দেশের সীমানার বাইরে অবস্থান করছেন।

এরকম একজন অপরাধীকে গ্রেফতার করতে বা তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়া হয়েছে।'

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, চিঠিতে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ইন্টারপোলকে গ্রেপ্তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার বাধ্যবাধকতার কথা জানানো হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আনিসুল হকের তিন ব্যাংকে ২১ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক
নরসিংদীতে ছাত্রদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের বিষয়ে নিশ্চিত নয় ট্রাইব্যুনাল
ভারতের কাছে হেরে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ
এক দশক পর ফিরলো ‘আমার দেশ’ পত্রিকা
৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচার: হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদকের
ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন বিমান হামলা
লোকসানের মিথ্যা গল্প শোনাচ্ছে ব্রিডার ফার্মগুলো
একজন ঢাকা অন্যজন কলকাতায় সংসার ভাঙছে মিথিলার
আইনজীবী আলিফ হত্যা: তদন্ত কমিটির সব সদস্যের পদত্যাগ
যে কোন সময় বাংলাদেশের পাশে নতুন দেশ
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর মৃত্যু
বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না: ড. ইউনূস
  সংকট কাটছে, মেট্রোর যাত্রীদের সুখবর দিল ডিএমটিসিএল
ভারতের বিপক্ষে ১১৮ রান করলেই এশিয়া কাপ ঘরে ‍তুলবে বাংলাদেশ
বিরামপুরে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
টাঙ্গাইলে আ.লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম আটক
শেখ হাসিনা নিজ হাতে তার বাবাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করেছে: গয়েশ্বর
চুয়াডাঙ্গায় অবৈধ যানবাহন বন্ধ না হলে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা
জুমার দিনে ফিলিস্তিনের মসজিদে আগুন দিল ইসরায়েলিরা