দুই পক্ষের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি আলোচনার মূল লক্ষ্য
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে একটি রুটিন সফর হিসেবেই দেখছি। প্রথম কথা হচ্ছে যে, জনকল্যাণ, উন্নয়ন বলতে আমরা যদি বড় প্রকল্প বুঝি অথবা ডেভেলপমেন্ট বুঝি, সেটির সঙ্গে এই সফরের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। আরেকটি বিষয় হলো, মার্কিন কর্মকর্তা অথবা আরও অনেক দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ কিন্তু নিয়মিতই সফর করে থাকেন। এটি সবসময়ই হয়ে আসছে। সে হিসেবে তার বাংলাদেশ সফর অস্বাভাবিক কিছু না। তবে সময়টি একটি বিষয় এবং তিনি কী বলছেন, সেটিও একটি বিষয়।
আমার অনুমান হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মোটামোটি যে পজিশন আমরা জানি, সামনের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা সব দেশের মতোই আমেরিকানদের চিন্তা ভাবনা আছে। এটি অস্বীকার করে লাভ নেই। তাদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, তারা এটি চায় যে, একটি নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। তিনি বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সেটি সবার জন্যই ভাল হবে। এর বাইরে আমাদের উপর অন্য কোনো চাপ সৃষ্টির কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।
প্রতিটি দেশ তার নিজের এজেন্ডাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কথা বলবেন ও কাজ করবেন। আমরা নিজেরাও সেটি করে থাকি। সেক্ষেত্রে তাদের অ্যাম্বাসেডর যিনি আছেন, তার চ্যানেলেও যেটি বলার, আমেরিকানরা বলতে পারেন। আমি সফরটিকে একটি নিয়মিত সফরেরই একটি অংশ হিসেবে মনে করতে চাই। তবে তাদের সামনে যেহেতু একটি নির্বাচন আছে কাজেই সেক্ষেত্রে আমাদের নেতাদের কাছে তারা সেটি পরিষ্কার করবে। সে বিষয়ে নানা কথাবার্তাও হয়েছে।
দেশের উন্নয়ন অথবা কল্যাণের কথা যদি আমি বলতে চাই যে, বাংলাদেশের উন্নয়ন বাংলাদেশের হাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের কার্যকলাপ যা কিছুই করুক না কেন করবে ডিপ্লোম্যাটিকভাবে, সেটাতে তাদের স্বার্থ ও অবস্থান জড়িত। ডেমোক্রেসি অথবা অন্যান্য বিষয়ে তাদের যে রাষ্ট্রীয় অবস্থান আছে, তা তারা প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। সেটিতে আমাদের ভালো কিছুও হতে পারে। আমরা আমাদের এজেন্ডাকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে চেষ্টা করব। স্বভাবতভাবে সবক্ষেত্রেই সবাই নিজেদের এজেন্ডা অনুসরণ করবে। আমরা আমাদের এজেন্ডা অনুসরণ করব, আমেরিকানরা তাদের এজেন্ডা অনুসরণ করবে।
আমরা জানি যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে, শক্তি ও ক্ষমতা। যেহেতু তারা বেশি শক্তিমান কাজেই তাদের সঙ্গে আমাদের বিনিময় সম্পর্ক হবে উভয়পক্ষের স্বার্থ সুরক্ষার দিকটি বিবেচনায় রেখেই। এখন আমাদের যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দরকার, কাজেই আমাদের সেটি খেয়ালে রাখতে হবে। শিল্প কারখানা টিকিয়ে রাখার জন্য, বিশ লাখ মেয়ের চাকরির জন্য এবং আমাদের চেষ্টা থাকবে সেটিকে আরও বাড়ানো যায় কি না। কাজেই সেটি মনে রেখেই আমাদের কথা বলতে হবে।
লেখক: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব