২০২২ এর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের চিহ্ন থাকবে আগামী বছরও
আগামী বছর আমাদের জন্য একটি সমস্যা সংকুল বছর হবে। এ বছরের শেষে আমাদের অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত দেখেছি। আমাদের বিনিময় হারের বড় ধরনের পতন হয়েছে। যার ফলে আমাদের আমদানিকৃত দ্রব্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ যেসব পণ্য উৎপাদন করা হয় সেটি সরবরাহ ও চাহিদার ক্ষেত্রে পার্থক্যের কারণে সেগুলোর মূল্যবৃদ্ধিও আমরা দেখছি। আমাদের রিজার্ভ দিয়ে আমদানির ক্ষেত্রে এল সি খোলার বিশাল সমস্যা হচ্ছে। আমরা দেখছি রপ্তানির প্রবৃদ্ধির হার অথবা রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি হার কমে যাচ্ছে অর্থাৎ নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে। যেটির প্রতিফলন হচ্ছে রিজার্ভের উপরে। অনেকসময় প্রাইভেট সেক্টরগুলো আমদানির ক্ষেত্রে এল সি খোলার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা পাচ্ছে না।
বৈশ্বিক যুদ্ধের কারণে রাশিয়া নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে তাদের চুক্তিগুলো থেকে। ফলে ইউক্রেন থেকে যে গম সরবরাহ হত সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারেও এর প্রভাব বাড়ছে। এসবকিছু মিলিয়ে আমরা ২০২২ শেষ করছি অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। এর একটি চিহ্ন ২০২৩শে থাকবে। সেটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকেও থাকবে। কারণ আমদানি করার ক্ষেত্রে শুধু মূল্য নয়, প্রাপ্যতারও সমস্যা হতে পারে। রিজার্ভের ক্ষেত্রে আমদানি করার যে সক্ষমতা সেটিও যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এখন আমরা আইএমএফের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। সেখানে আমাদের ভর্তুকি প্রত্যাহার করা্, প্রনোদনা পুনর্বিন্যাস করা, এগুলোর চাপ থাকবে। মূল্যস্ফীতির চাপে বিশেষ করে যারা স্থির আয়ের মানুষ আছে, তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। কেবলমাত্র স্বল্প আয়ের মানুষ না, মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার উপরেও চাপ পড়েছে। বিভিন্ন পেশার কম আয়ের মানুষ যাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতাধীন নিয়ে স্বলপ মুল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যেটি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে আমরা দেখেছি। এগুলি আমাদের শক্তিশালী করতে হবে।
সবটা মিলিয়ে ২০২৩ আমাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়ই আমি বলব। খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে, আমাদের আমদানি সক্ষমতার দিক থেকে, আমাদের এক্ষচেঞ্জ রেটের স্থিরতা বজায় রাখার দিক থেকে, আমাদের মূল্যস্ফীতির দিক থেকে, এগুলো সবকিছু আমাদের প্রবৃদ্ধি ,আমাদের কর্মসংস্থানের উপরেও পড়বে। সুতরাং সবটা মিলিয়ে আমাদের ২০২৩ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সময়ই বলব এবং আমাদের যথেষ্ট সাবধানতার মধ্য দিয়ে সেটি অতিক্রম করতে হবে।
আমরা যেন রাজস্ব আহরণ বাড়াতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। সুশাসনের মধ্যে নিয়ে এসে আমাদের অনাহুত ব্যয় হ্রাস করতে হবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। এগুলোর দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। যাতে করে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা যাতে করে আমাদের কম আয়ের মানুষদের সমস্যা না হয়। সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদির দিকে নজর দিতে হবে। এই জায়গাগুলোতে সামস্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা মুদ্রা ব্যবস্থাপনা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এই তিনটি ক্ষেত্রেই খুব ভালভাবে আমাদের নজর দিতে হবে। অর্থাৎ ঝুঁকিগুলো যেন বড় কোনা বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসতে না পারে। এবং ঝুকিগুলো সামাল দিয়ে ২০২৩ এর মধ্যে আমরা যেন অর্থনীতিকে পুনরায় শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে আসতে পারি।
লেখক: অধ্যাপক এবং সম্মানীয় ফেলো (সিপিডি)
আরএ/