কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় ফিরতে চায় চীন
গত চল্লিশ বছরে চীন কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। এর ফলে যেটি হয়েছে, চীনের দারিদ্র্যসীমার নিচে যে জনসংখ্যা ছিল, তাদের একটি বড় অংশকে চীন উপরের দিক নিয়ে আসতে পেরেছে। তারাই কিন্তু বর্তমানে চীনের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। সেই বিবেচনায়ই চীন আসলে উন্নয়নশীল দেশের কাতার থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।
অনেকেই বলছেন যে, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে চীন হয়তো পৃথিবীর এক নম্বর অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ২০৫০ সাল নাগাদ। এখন এই যে ধারাগুলো বলা হলো, চীন তার অর্থনৈতিকতভাবে কাঠামো বজায় রেখেছে। রাজনৈতিক কাঠামোও মোটামুটিভাবে উদার অবস্থায় ছিল। তারা কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও উদারনীতি ব্যবস্থা করেছে। এবারে চীনাদের উপর বিশেষ করে মার্কিনিদের পাশ্চাত্য জগতের পক্ষ থেকে আস্তে আস্তে যে চাপটি বাড়ছে, সেই চাপের পাশাপাশি কোভিডকালীন তাদের উপর চাপ এবং এখন ইউক্রেন-রাশিয়া পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রাশ্চাত্য শক্তি সম্মিলিতভাবে চীনের উপর একটি চাপ সৃষ্টি করছে। সেই প্রেক্ষাপটে এবারের কংগ্রেসে নতুন দিক নির্দেশনা অথবা নতুন পথ খোলার চেষ্টা করেছে।
চীনারা এখন মনে করছে, অর্থাৎ কংগ্রেস মনে করেছে যে, এখন আমরা চারদিকে বাইরের আক্রমণের মুখে আছি এবং বাইরে এতদিন যে সুযোগ সুবিধাগুলো পেতাম, রপ্তানি বাণিজ্যসহ অনেকক্ষেত্রেই, সেগুলো বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা শুরু হয়েছে। সেকারণেই চীনের একটি অন্তর্মুখী অর্থনীতির দিকে যাওয়ার একটি প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। অভ্যন্তরীণভাবে তারা একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনের চেষ্টা করছে।
দ্বিতীয় যে জায়গাটি রয়েছে, সেখানে যদি যেতে হয়, অর্থাৎ জাতীয় পুনরুজ্জীবনের কথা শি জিন পিং প্রথমবারে এসে বলেছিলেন, আমরা জাতীয়ভাবেই পুনরুজ্জীবন ঘটাতে চাই। দ্বিতীয়বারেও বলছেন যে, আমরা জাতীয় পুনরুজ্জীবন ঘটাতে চাই। সেকারণেই প্রথমবারের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা সেটিই একটুখানি ছেদ ঘটিয়ে প্রথমবারে কিন্তু চীনের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কিন্তু তিনি অভিষিক্ত হলেন। চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তার থেকে একটুখানি ব্যতিক্রম। এটি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় তারা ফিরে যাচ্ছেন। এবার অনেকেই বলছেন, তিনি সংবিধান সংশোধন করে যে ঘোষণা দিয়েছেন, এর মাধ্যমে তিনি হয়তো আজীবন প্রেসিডেন্ট থেকে যাবেন।
এখন এটি প্রতীয়মান হচ্ছে যে, চীনারা তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়েছে এবং সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটিকে প্রতিহত করার জন্য সক্রিয় হয়েছে। এদের ভেতর এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থান তৈরি হয়েছে। এধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চীনের জন্য সুখকর মনে হয় না। কারণ চীনের উত্থান মূলত ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলা যায় চীন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে। কাজেই তাদের বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কের জায়গাটি পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
তাদের হাতে সম্পদের পরিমাণ কমে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে যেমন তার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাদের অগ্রগতিক কূটনীতি পরিচালনা করার কারণে পৃথিবীতে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে চীনারা তাদের কর্তৃত্ব নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়েছে এবং সেটিকে প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট ইতোমধ্যে সচেষ্ট হয়েছে। ফলে উভয়দিকেই এক ধরনের পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থান তৈরি হয়েছে। এ ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চীনের জন্য খুব একটা ভালো কথা নয়। চীন তাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে মডেলটা অনুসরণ করছে, বহির্বিশ্বে তার আবেদন খুব একটা নেই বলেই মনে হয়। তবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই একক নীতি অনুসরণ করেই চীন সম্মুখে এগিয়ে যেতে চায়।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
এসএন