চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থান সংঘাতের দিকে যাচ্ছে
চীনের যে পার্টি কংগ্রেস হয়ে গেল পাঁচ বছরের জন্য এবং এর পরের পাঁচ বছরে চীনের অর্থনীতি কেমন হবে, চীনের বৈদেশিক নীতি কেমন হবে, চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, সামরিক ব্যবস্থা অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে বিভিন্নমুখী সম্পর্ক একইসঙ্গে বহিঃবিশ্বের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এই বিষয়গুলোই এবারে কংগ্রেসের ডকুমেন্টসে উঠে আসে।
কংগ্রেসের শুরুতেই চীনের যিনি রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং উনি একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন, অর্থাৎ তিনি কি ভাবছেন? সেটি তিনি কংগ্রেসের সদস্য যারা আছেন তাদের কাছে পেশ করেছেন। সে অনুযায়ী, একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে গৃহীত হবে। পরবর্তীতে তারা কীভাবে শাসন ব্যবস্থা চালাবে সেটির একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার করে এটি হয়। সেদিক থেকে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড সময়ে সারা পৃথিবী একটি অস্থির অবস্থার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। ফলে সারা পৃথিবীর অর্থনীতি একধরনের বিপদগ্রস্ত অবস্থার মধ্যে আছে। পৃথিবীর বড় বড় শত্রুগুলির মধ্যে একধরণের উত্তেজনা এবং সংঘাত বিরাজমান। এটি কিছু অংশে চলছে আর কিছু অংশে বারেবারে ঘনীভূত হওয়ার একটি আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটেই কিন্তু চীনের পার্টি কংগ্রেস হয়ে গেল। সে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী পাঁচ বছর চীনের কংগ্রেস পার্টি কীভাবে দেশ চালাবে, য়ার মাধ্যমে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক রাখবে, সেগুলো নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এখানে কয়েকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপুর্ণ। ৭৯ সাল থেকে চীন একটি মুক্ত বাজার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হয়েছে। বাইরে থেকে তারা অনেকক্ষেত্রেই মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুযোগ পেয়েছে। সেখানে মূল ব্যাপার হল যে, চীন পাশ্চাত্যের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে চীনারা এখন মনে করছে, তারা বাইরের পরিবেশ থেকে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারলে অর্থাৎ নিজেদের অভ্যন্তরীণ বলয় তৈরি করতে পারলে তারা নিরাপদ বেশি থাকবে বহিঃবিশ্ব থেকে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার মতামতের বাইরে অন্যকোনো মত আলোচিত হোক অথবা প্রচারিত হোক সেটি চাননি। এমনকি এটিও ভাবা হচ্ছে, যেহেতু তিনি সংবিধান পরিবর্তন করে তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হয়েছেন, তার মানে তিনি হয়ত আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারেন। তার অর্থ দাঁড়ায় যে, চীনারা গত চল্লিশ বছরে যে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল, সেই ধারাবাহিকতার একটি ইঙ্গিত এখানেও পাওয়া যায়।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিন্তু চীনারা একটু অন্তর্মুখী অর্থনীতির দিকে যেতে চাইছে এবং যাচ্ছেও। এতে করে চীনারা গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক চাপের কারণে চীনা অর্থনীতিও একটু চাপে আছে। প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে চাঙ্গাভাব ছিল সেখানে একটু ভাটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, পশ্চিমা জগত অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া সব হাউজসহ চীনাদের একটি চাপের মুখে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটিও কিন্তু চীনকে চিন্তায়িত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চীনাদেরকেও বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের জায়গাটি পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
চীনের উত্থান ছিল শান্তিপূর্ণ। অর্থাৎ তাদের সেই উত্থানের মধ্যদিয়েই কিন্তু চীন সুবিধাটুকু লাভ করেছে। এখন যদি এরা সংঘাতের দিকে যায়, সেটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, কূটনীতির ক্ষেত্রে তাদের জন্য কতটা সহজ হবে, সেগুলো কিন্তু আজকে আলোচিত হচ্ছে, বিশ্বজুড়েই। চীন যেহেতু প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছে, তারা হয়ত অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যেতে পারে। তারা হয়ত ভাবতে পারে পাশ্চাত্য জগত যেহেতু তাদের সহযোগিতা করবে তারা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই যেতে চাইবে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে চীনারা সত্যিকার অর্থেই কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেটি নিয়ে চিন্তাভাবনার দরকার আছে বলে মনে হয়।
লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরএ/