সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১০ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

পর্ব-১

বিশ্ব মন্দা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত সতর্কবার্তা

যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ সফর শেষে গত ৪ অক্টোবর সাংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী অনেক বিষয়ে কথা বললেও আমার কাছে মনে হয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি তিনি বলেছেন সম্ভাব্য প্রচণ্ড বিশ্ব মন্দা নিয়ে। অনেক রাষ্ট্রনেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে তার আলাপ হয়েছে। তারা প্রায় সবাই তাকে আভাস দিয়েছেন যে সারা বিশ্বের জন্যেই আগামী বছরটি মহামন্দার ঝুঁকিবহ। সেই বিষয়টিই তিনি আরও স্পষ্ট করে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে ‘বিশ্বব্যাপী একটা আশঙ্কা, ২০২৩ সাল একটা মহাসংকটের বছর হবে।’

আরও স্পষ্ট করে তিনি জানিয়েছেন, যে এবছর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা প্রকট হতে পারে। সেজন্য আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। যার যার জায়গা আছে, চাষ শুরু করে দিন। কৃষিই যে বিপদের দিনে আমাদের রক্ষাকবচ সে কথাটি তিনি ভালো করেই জানেন। তাই নির্দ্বিধায় বলেছেন যে কৃষি খাতের বাড়তি বাজেট ছাড়াও তিনি সংকট মোকাবিলার জন্য আলাদা করে বাজেট করেছেন।
সংবাদ সম্মেলন ছাড়াও আরও বার কয়েক তিনি বিশ্বে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধানের সঙ্গে আলাপের সময় সারা বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নিয়ে কথা বলেছেন। দেশে এসেও তিনি তার সেই আশঙ্কার কথা একাধিকবার বললেন।

একথা তিনি এমন করে বলতে পেরেছেন এ কারণে যে খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে মানুষের বেঁচে থাকা যে বড়ই কষ্টের সে বিষয়টি প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি নানা সংকট মোকাবিলার সময় তিনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের মনে আছে ১৯৯৮ সালের মহাবন্যার সময় তিনি সম্মুখসারির একজন যোদ্ধার মতো বিপর্যস্ত মানুষকে পর্যাপ্ত খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণের ব্যবস্থাই শুধু করেননি, বন্যাপরবর্তী কৃষির পুনর্বাসনের জন্য কৃষিঋণসহ সব উপকরণ বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এমন কী বর্গাচাষিরাও যাতে কৃষিঋণ পান সেজন্য রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে হাটে বাজারে ব্যাংকিং বুথ খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

নাগরিক সমাজের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে ওই বন্যার কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ যাবে। কিন্তু সুদক্ষ ত্রাণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে বন্যার অভিঘাতে তৈরি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় যেন একজন মানুষেরও প্রাণ না যায়। একই সঙ্গে পুরো সমাজকে তিনি দায়বদ্ধ করতে পেরেছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে ঢাকা শহরের প্রতিটি সচ্ছল পরিবার কোনো কোনোভাবে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়েছিল। প্রতিটি বেসরকারি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্হানীয় প্রশাসনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ত্রাণ বিতরণে অংশগ্রহণ করেছিল। অনেক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বন্যার্তদের উদ্ধারে নেমে প্রাণও দিয়েছিল।

সরকারের সময়োপযোগী কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির কারণে বন্যাপরবর্তী ধান ও সবজির বাম্পার ফলন হয়েছিল। সেবার সরকার হেলিকপ্টারে করে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ধানের চারা সরবরাহ করতে দ্বিধা করেনি। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিএডিসি, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ প্রতিটি অধিদপ্তর ও সংস্থা সরকারি ও বেসরকারি সব উদ্যোগের সমন্বয় করে কৃষি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীকালে যেকোনো সংকটকালে ওই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের কৃষকহিতৈষী নেতৃত্ব সরকারি নীতিমালাকে সমন্বিত উপায়ে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।

আমরা জানি কৃষির প্রবৃদ্ধি শুধু খাদ্যই যোগায় না। কৃষি গ্রামীণ মানুষের চল্লিশ শতাংশেরও বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে। কৃষি ভালো করলে অকৃষি খাতও ভালো করে। বাড়ন্ত আধুনিক কৃষি শিল্পের কাঁচামাল ও দেশের সার্বিক অভ্যন্তরীণ চাহিদাও যোগায়। ফলে দেশে কোনো মন্দা দেখা দেয় না। ২০০৯ সালেও চলছিল বিশ্ব আর্থিক সংকট। কিন্তু সংকট মোকাবিলায় সিদ্ধহস্ত প্রধানমন্ত্রী কৃষি, এসএমই, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ওপর বিশেষ নজর দিয়ে এমন এক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করেছিলেন; যার ফলে বাংলাদেশের মানুষ ওই বিশ্ব আর্থিক সংকটের আঁচই পায়নি।

উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে সময়টায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কৌশল নিয়ে সরকারের মাটিঘেঁষা উন্নয়ন অভিযাত্রায় শামিল হয়েছিল। কৃষককে দশ টাকায় হিসাব খুলে দেওয়া, বর্গাচাষিদের কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা, নারী উদ্যোক্তাদের বিনা জামানতে ঋণের সুযোগ করে দেওয়া সহ অসংখ্য উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ সরকারের জনবান্ধব উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সহযোগিতা করেছিল।

অন্তর্ভুক্তিমূলক সেই উন্নয়ন কৌশল কভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ঝাপ্টা মোকাবিলায় যথেষ্ট কাজে লেগেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মিলে প্রণোদনা কর্মসূচির আদলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এমন এক উপযোগী কৌশল গ্রহণ করেছিল যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি মোটেও ঝিমিয়ে পড়েনি। বরং উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সবচেয়ে গতিশীল প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। জিডিপির প্রায় ছয় শতাংশ এই প্রণোদনার আওতায় স্বল্প সুদের ঋণ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখনো কৃষি ও ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি চালু করে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির চাকাকে বেশ গতিশীল রেখেছে।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যখন সারা বিশ্বের প্রবৃদ্ধি এবছর এবং আগামী বছর তিন শতাংশের আশে পাশে রাখছে সেই সব প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার এই দুবছরই তার দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে তাদের অর্থনৈতিক প্রক্ষেপণে তুলে ধরেছে। এডিবি তার চেয়েও আরেকটু বেশির কথা বলছে। আর বাংলাদেশ আশা করছে তার প্রবৃদ্ধির হার এই সময়টায় সাত শতাংশের কম হবে না।

তবে এই ক্রান্তিকালে প্রবৃদ্ধি যদি প্রক্ষেপিত হারের চেয়ে খানিকটা কমও হয় তাতে দোষের কিছু নেই। এই মুহূর্তের বড় সংকট কী করে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বজুড়েই বইছে এই প্রবল মূল্যস্ফীতির লু হাওয়া। এর ফলে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হারও বাড়ন্ত। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির দাপট বেশ আক্রমণাত্মক।

অথচ এই মূল্যস্ফীতির উৎস অভ্যন্তরীণ নয়। আমদানি করা এই মূল্যস্ফীতির পেছনে একদিকে কোভিডের কারণে পর্যুদস্ত আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন (বিশেষ করে বাড়ন্ত জাহাজ ভাড়া) এবং তদুপরি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে জ্বালানি, গ্যাস ও ভোজ্য তেলের পাশাপাশি খাদ্যমূল্য দারুণ হারে বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো কাজ করছে। এর ওপরে ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে নেমে এসেছে ডলারের দাম বৃদ্ধি। কোভিডের সময় যুক্তরাষ্ট্রও ব্যাপক হারে তার অর্থনীতিতে অর্থ ঢেলেছিল। সেই অর্থ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মৌলিক নীতি হার বাড়িয়েই চলেছে। এরই মধ্যে কয়েকবারে তিন শতাংশের মতো মৌলিক সুদ হার বাড়িয়েছে ফেড। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে এখনো মূল্যস্ফীতি আট শতাংশের বেশি তাই সহজেই এই নীতি হার বাড়ানোর কৌশল থেকে সরে আসবে না ফেড। এর ফলে অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মুদ্রার বাস্কেটের মূল্যমানের চেয়ে এরই মধ্যে প্রায় তেরো-চৌদ্দ শতাংশ বেড়েছে ডলারের দাম।

আর আমাদের মতো দেশের মুদ্রার তো কথাই নেই। যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও জাপান তাদের মুদ্রার মান ধরে রাখার জন্য রিজার্ভ থেকে বিদেশি মুদ্রা ছেড়ে দিচ্ছে। রেপো রেট বাড়াচ্ছে। কিন্তু একমাত্র জাপান ছাড়া আর সব উন্নত দেশেই মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি। শূন্য মূল্যস্ফীতির দেশ জাপানের মূল্যস্ফীতিও তার টার্গেট দুই শতাংশ কবেই অতিক্রম করে গেছে।

বিশ্বের চল্লিশ শতাংশ বাণিজ্য হয় ডলারে। বিশ্ব বন্ড বাজার প্রায় পুরোটায় ডলার নির্ভর। ডলারের দাম বাড়ায় একদিকে আমদানির খরচ বাড়ছে তো বাড়ছেই, অন্যদিকে বিদেশে ডলার মূল্যের বন্ড বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা ছুটছে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড কেনার জন্য। সেদেশে বন্ড থেকে পাওয়া লাভের অংক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর শ্রীলংকার মতো যেসব দেশ ডলার বন্ড বাজারে ছেড়েছিল তারা আর বিক্রিচ্ছুক বিনিয়োগকারীদের ডলারে দাম শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

শ্রীলংকা তো নিজেকে দেওলিয়া ঘোষণা করে এই সংকট থেকে বাঁচবার কতোই না চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড মার্কেট তেজি হচ্ছে এবং একই সঙ্গে ডলারের দামও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ফেড যাতে তার নীতি হার আর না বাড়ায় সেজন্য জাতিসংঘ পর্যন্ত আহ্বান জানিয়েছে। কেননা এর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা বেড়েই চলেছে। এর শিকার দুর্বল অর্থনীতির উন্নয়নশীল দেশগুলোর ম্যাক্রো অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে।

অন্য দিকে উন্নত দেশগলোর মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় তাদের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়ছে আমাদের মতো রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর। বিশেষ করে মূলত বস্ত্র রপ্তানির দেশ বলে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের বেশ খানিকটা ঝুঁকি তো তৈরি হচ্ছেই। এমনিতেই হঠাৎ আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বিলাসী ও কম অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমমদানি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কয়েক মাস ধরেই অনেকগুলো নীতি গ্রহণ করেছে।

ঋণের মার্জিন বাড়িয়ে দেওয়া, বেশি মূল্যের এলসি নিবিড়ভাবে মনিটর করা, ডলার খরচ কমানোর জন্য প্রশাসনিক অনেক কৃচ্ছ কর্মসূচি হাতে নেয় এবং অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি থামিয়ে দেওয়ার মতো সুবিবেচনামূলক নীতিমালার সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।

তা ছাড়া দেশে আরও বেশি ডলার প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আনার জন্য টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন এবং নিয়মনীতি সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসেবে ঘাটতি গত তিন মাসে বেশ কমেছে। এর ফলে প্রায় এক বছর পরে হলেও রিজার্ভ ক্ষয়ের ধারাটি থেমেছে। ধীরে হলেও রিজার্ভ ফের বাড়তে শুরু করেছে। ডলারের একাধিক হারের বদলে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি হারের দিকে এগোতে পারলে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের গতি আরও বাড়বে বলেই মনে হয়। সামনের দিনগুলোতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়বে এবং অন্যদিকে আমদানি খরচ কমবে আশা করা যায়। দুইয়ে মিলে ডলার-টাকা বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে এবং রিজার্ভের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে।

লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসএন

Header Ad
Header Ad

চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রশিবিরের হামলা

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরেবাংলা হলের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রদলের অন্তত চারজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে ছাত্রশিবির এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন ওমর ফারুক সাগর, রেদোয়ান ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ কাইফ ও মোরশেদুল ইসলাম। তারা বর্তমানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক সাগর বলেন, “চট্টগ্রাম কলেজে আজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। আমন্ত্রণ পেয়ে আমরা সেখানে যাই। কিন্তু শেরেবাংলা হলের সামনে পৌঁছানোর পর ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা আচমকা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ছাত্রদল নেতা ফারুক চট্টগ্রাম কলেজে থাকতে পারবে না।’ এরপর আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।”

তিনি আরও বলেন, "হামলাকারীরা শিবির নেতা শামীম আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন কর্মী নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। তারা আমাদের মারধর করে এবং কলেজে ছাত্রদলের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করার হুমকি দেয়। বিষয়টি আমরা চকবাজার থানার ওসি ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি। তারা যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি তানভীর হোসেন জুয়েল। তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। তাই আমরা কোনো গ্যাদারিং করিনি এবং কলেজের বাইরে সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখেছি, ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ফরম বিতরণ করছিল। তাদের কোনো কলেজ ড্রেস বা আইডি কার্ড ছিল না। তখন কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী তাদের বাধা দেয় এবং জানায় যে এখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। তখনই উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু এটি রাজনৈতিক হামলা নয়। যদি ছাত্রশিবির হামলা করত, তাহলে তাদের নাম ও পদ-পদবি প্রকাশ করা হোক।”

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমার কাছে বিচার দিয়েছে যে, তারা লিফলেট বিতরণ করার সময় কিছু ছেলে এসে তাদের টানাহেঁচড়া করেছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি তাদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেছি। তারা জানিয়েছে, বার্ষিক ক্রীড়ার সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এসে জটলা করছিল এবং তারা বহিরাগত। এরপর আমি উভয়পক্ষকে কিছুক্ষণ কাউন্সেলিং করেছি।”

এই ঘটনায় কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে পরবর্তী কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।

Header Ad
Header Ad

সেমিফাইনালের পথে ভারত, কোহলির সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের হার

বিরাট কোহলি। ছবি: সংগৃহীত

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে জয় পেয়েছে ভারত। বিরাট কোহলির দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ২৪২ রানের লক্ষ্য সহজেই পার করেছে রোহিত শর্মার দল।

টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। ভারতীয় বোলারদের দাপটে ব্যাটিংয়ে সুবিধা করতে পারেনি বাবর আজমের দল। সৌদ শাকিলের ৬২, মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৪২ এবং খুশদিল শাহের ৩৮ রানের ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান ২৪১ রান সংগ্রহ করে। ভারতের পক্ষে কুলদীপ যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া ও মোহাম্মদ শামির বোলিং ছিল প্রশংসনীয়।

২৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল ভালো শুরু করেন। উদ্বোধনী জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৩১ রান যোগ করেন তারা। তবে পঞ্চম ওভারে শাহিন আফ্রিদির দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরে যান রোহিত শর্মা। এরপর ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি এবং শুবমান গিলের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়েন। ৫২ বলে ৪৬ রান করে গিল আউট হলে কোহলির সঙ্গী হন শ্রেয়াস আইয়ার।

কোহলি ও আইয়ারের ১১৪ রানের জুটি ভারতের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেন আইয়ার। তবে ৫৬ রানে খুশদিল শাহের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। অন্যদিকে কোহলি ছিলেন অবিচল। ৪২.৩ ওভারে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান। তিনি ১১১ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংসে বাবর আজম ও ইমাম-উল-হক ধীরে শুরু করলেও বড় ইনিংস গড়তে পারেননি। বাবর ২৬ বলে ২৩ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। অন্যদিকে রান আউট হয়ে ২৬ বলে মাত্র ১০ রান করে ফেরেন ইমাম। এরপর রিজওয়ান ও শাকিল ১০৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে শক্ত অবস্থানে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অক্ষর প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়ে ৭৭ বলে ৪৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন রিজওয়ান।

রিজওয়ান ফিরে গেলে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে। ৬২ রান করে শাকিলও বিদায় নেন। এরপর শেষ দিকে খুশদিল শাহ ৩৯ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে দলের সংগ্রহ ২৪১ রানে নিয়ে যান। ভারতের বোলারদের মধ্যে কুলদীপ, শামি ও হার্দিক পান্ডিয়া গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন।

বিরাট কোহলির অসাধারণ ব্যাটিং ও দলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল ভারত।

Header Ad
Header Ad

নাহিদের পদত্যাগ নিয়ে যা জানা গেল

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি এখনও পদত্যাগ করেননি। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে, সন্ধ্যায় তার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, "আমি পদত্যাগ করিনি। যে খবর ছড়িয়েছে, সেটা গুজব।"

এর আগে, গত মঙ্গলবার নাহিদ ইসলাম জানিয়েছিলেন, উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ এবং নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদানের বিষয়ে তিনি সপ্তাহের শেষ দিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রশিবিরের হামলা
সেমিফাইনালের পথে ভারত, কোহলির সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের হার
নাহিদের পদত্যাগ নিয়ে যা জানা গেল
দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে সড়কে প্রাণ গেল মায়ের
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে!
জীবন থাকতে কোনো স্থানীয় নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না: ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক
২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা, সরকারি ছুটি নিয়ে যা জানা গেল!
ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রশিবিরের সংবাদ সম্মেলন, ছাত্রদলের নিন্দা
ভারতে ৫ বছর ধরে নিকটজনদের কাছে ধর্ষণের শিকার কিশোরী
ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফর ও স্টারলিংক চালুর আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টার
পাঁচ দফা দাবিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, একাডেমিক শাটডাউন ও লংমার্চের ঘোষণা
নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি সময়সীমা নির্ধারণ: সিইসি
নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ অভিনেতা আজাদ, আহত মা ও স্ত্রী
আহতদের চিকিৎসা বন্ধে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিলো
এস আলম পরিবারের ৮,১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের নির্দেশ
প্রথমবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান সরাসরি বাণিজ্য চালু
৪ ডিআইজিকে বাধ্যতামূলক অবসর, জানা গেল নাম
পুলিশ প্রজাতন্ত্রের স্বাধীন কর্মচারী, কোনো দলের নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ধর্ষণের প্রতিবাদে আসাদ গেটে ছাত্র-জনতার সড়ক অবরোধ
স্ত্রীর সামনে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২