শেখ হাসিনার বেঁচে যাওয়া ও আজকের বাংলাদেশ
২১ আগস্টের বোমা হামলা ইতিহাসের একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এর একটি পটভুমি আছে। এর পটভূমি হলো ১৯৭৫ সাল। আমরা প্রত্যেকেই জানি যে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যা করার একটি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। ক্ষমতা দখলের জন্যই শুধু ১৫ আগস্টের ঘটনাটি ঘটেনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই সামগ্রিক অভ্যত্থান হয়।
দেশের রাজা বাদশা সরকার প্রধানকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। বাংলাদেশের এই ঘটনায় নারী শিশু গর্ভের সন্তান সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। ৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া এবং এই হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে সেই নয়া পাকিস্তানি ভাবাদর্শে নিয়ে যাওয়ার একটি গভীর ষড়যন্ত্র।
বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার যদি বেঁচে থাকে। রক্তের উত্তরাধিকার তারা হয়তো আবার ঘুরে দাঁড়াবে। সেই কারণেই রক্তের উত্তরাধিকারকে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। আদর্শের উত্তরাধিকারকে শেষ করতে চেয়েছিল, যে কারণে বঙ্গবন্ধুর চারজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
আমরা জানি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এ কথা বলি কারণ, বাংলাদেশ কয়েকটি আদর্শ মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারই ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু যারা পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী, যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চায়, যারা বাঙালি জাতিস্বত্তায় বিশ্বাস করে না, তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সেই কাজটি শুরু করল।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যেটি চালু ছিল, সেটি সক্রিয় করতে বিদেশ থেকে সমস্ত রাজাকার আলবদররা এসে তারা এসে নতুন করে রাজনীতি শুরু করল। এক কথায় বাংলাদেশের সংবিধান কেটে ছেড়ে নষ্ট করে কিছুই আর রইল না। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন ৮১ সালে আবার ফিরে এলেন এবং তিনি লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন এবং ৯৬ সালে জনরায়ে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নীতি আদর্শে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করতে শুরু করলেন। যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের আওতায় আনলেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেই আন্দোলনে তিনি ও তার দল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করল।
তারপর আমরা জানি যে, ২০০১ সালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে তাকে আবার পরাস্ত করা হলো। এই গোষ্ঠীর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, শেখ হাসিনা যদি বেচে থাকে, আওয়ামি লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি বেচে থাকে তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ এলে সেই বিচার প্রক্রিয়া আবার চালু হবে এবং এই যুদ্ধাপরাধী বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হবে, ফাঁসি হবে। সুতরাং আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে শেষ করে দিতে হবে। তারই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২১ আগস্ট এর গ্রেনেড হামলা করা হয়। শেখ হাসিনা যেন প্রাণে বাঁচতে না পারেন তাকে নিশানা করে গুলিও করা হয়েছে। বুলেটপ্রুফ গাড়ি থাকায় তিনি প্রাণে বেচে গিয়েছেন। আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা সেদিন আহত হয়েছিল। এই যে জঘন্য বর্বর একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দলকে, তার পুরো নেতৃত্বকে শূন্য করে দেওয়া এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।
মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র ।বাংলাদেশ যেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তার বিরুদ্ধে এই হামলা। শেখ হাসিনা ভারত থেকে ফিরে আসার পরে তাকে ২১/২২ বার তাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ৭৫ এ বুলেটের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনাকে সেই বুলেটই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার শেষ করে দিতে হবে। কিন্তু তারা তো জানেনা এভাবে রক্তের উত্তরাধিকার শেষ করা যায় না। আদর্শের উত্তরাধিকারও শেষ করা যায় না। বাংলাদেশে যুদ্ধপরাধিদের বিচার হয়েছে, বংগবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে।মানুষ যখন জেগে উঠে তখন ব্যক্তিকে হত্যা করা গেলেও আদর্শকে হত্যা করা যায় না। আদর্শ পরম্পরা এটি বয়ে চলে । পরবর্তী প্রজন্ম এটিকে বহন করে নিয়ে যায়।
লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব