জ্বালানি তেলেন দাম এত বেশি বাড়ানো অযৌক্তিক
দেশে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেল। দেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এতটা বাড়ানো হয়নি। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পদক্ষেপ এটি।
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। তারপরও হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ জনগণের ভোগান্তি বাড়াবে। এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই জনবান্ধব নয়। দেখা যাচ্ছে লিটারে প্রায় ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।
দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এই আশঙ্কা ছিল আমাদের। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে। ডিজেলের দাম হবে ১১৪ টাকা লিটার, যা এতদিন ৮০ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। কেরোসিনের দামও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দর ডিজেলের সমান, অর্থাৎ ১১৪ টাকা লিটার। সাধারণত, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সমান হয়। পেট্রল ও অকটেনের দামও বেড়ে গেছে। পেট্রলের নতুন দাম ১৩০ টাকা, যা এতদিন ৮৬ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে লিটারে ৪৪ টাকা। অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৪৬ টাকা। এতদিন অকটেন ৮৯ টাকা লিটার বিক্রি হত। এখন তা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হবে। নতুন এই দাম ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।
আমাদের একটিই কথা, আইন লঙ্ঘন করে সবকিছু ভেঙেচুরে একাকার করে দেওয়া হল এই আদেশের দ্বারা। এ রকম মূল্যবৃদ্ধির এখতিয়ার জ্বালানি বিভাগের নেই এবং এই যে আইন লঙ্ঘন করা এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এভাবে আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়াভাবে মূল্যবৃদ্ধি করে যে অর্থ আমাদের থেকে আদায় করছে, এটিকে আমরা লুণ্ঠনমূলক হিসেবে মনে করছি।
সেটি আমরা অতীতেও বলেছি এখনো বলছি। সংযত হওয়ার পরিবর্তে বেপরোয়া হলো এই জ্বালানি বিভাগ। প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ জনগণের কল্যাণ ও জনগণের স্বার্থ সুরক্ষা করার জন্য। অথচ আইন ভেঙে যদি এ ধরনের বিপর্যয় ঘটানো হয়, সেটি আমাদের কাছে আইলা সিডরের সামিল এবং তার থেকেও ভয়াবহ মনে করছি। আমরা আতঙ্কিত ও বিস্মিত এবং আমাদের প্রতিকার পাওয়ার অথবা অভিযোগ করার আশ্রয়ের জায়গা আর নেই। আমাদের আস্থার জায়গা আর কোথাও রইল না। একমাত্র বিধাতার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের বলার আর কোনো জায়গা থাকল না।
এ প্রক্রিয়ায় শুধু আমরা ভোক্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি তা নয়। সরকার নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষের কাছে সরকারের যে ভাবমূর্তি তা এখন প্রচণ্ড হুমকির সম্মুখীন হবে। মানুষের প্রচণ্ড রকম ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে, বাজারের পণ্য সেবার প্রভাব কমে যাবে এতে সরকারের আয়ও কমে যাবে। এমন একটি পরিস্থিতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এগুলো আর কথার কথা ছাড়া কিছুই না বলে আমরা মনে করছি।
এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। তার ওপর তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবন আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়বে। আমাদের কথা একটিই, ধ্বংস লুণ্ঠন ইত্যাদি বাদ দিয়ে সরকারকে সেবার মনোভাব নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে।
লেখক: জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব