ঋণখেলাপির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি
আমাদের সাধারণ মানুষ এখন মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। এ রকম একটি সময়ে ঋণখেলাপির সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ, এটি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই টাকাটা অর্থনীতিতে সার্কুলেট হতো। অনেকেই ঋণখেলাপি হয়েছে। দেশের টাকা বাইরে নিয়ে গিয়েছে। অনেকে ফেরত দিচ্ছে না। এই টাকা অর্থনীতিতে আসলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ হতে পারত। এই ঋণখেলাপির টাকা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং ব্যাংকের উপরে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকের ‘কসট অব ফান্ড’ বেড়ে যাচ্ছে। এটির কারণে কিছু টাকা আলাদা রেখে দিতে হচ্ছে যেটি তারা লোন দিতে পারে না।
আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ। তবে এটাও ঠিক যে খেলাপি ঋণ আমাদের দেশের একার সমস্যা নয়। এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। বিশ্বের সব দেশেই খেলাপি ঋণ আছে। কোথাও বেশি, আবার কোথাও কম। মাত্র কিছুদিন আগে ভারতের ব্যাংকিং খাতে যে খেলাপি ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়েছে তা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথেষ্ট শক্তিশালী এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তদারকি করার ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা। তাই সেখানে উচ্চ হারের খেলাপি ঋণ মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না। ইউরোপের গ্রিস ও ইতালিতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও তাদের ব্যাংকিং খাত এখনো খেলাপি ঋণ সমস্যা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বের অনেক ব্যাংকই এখন আর এই দুটি দেশের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে আগ্রহ দেখায় না শুধু সেসব দেশের ব্যাংকের মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে। বাংলাদেশও এই সমস্যায় জর্জরিত।
মূল্যস্ফীতির চাপে বিশেষ করে যারা স্থির আয়ের মানুষ আছে,তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। কেবলমাত্র স্বল্প আয়ের মানুষ না, মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয় ক্ষমতার উপরেও চাপ পড়েছে। বিভিন্ন পেশার কম আয়ের মানুষ যাদেরকে স্যোশাল সেফটির আন্ডারে নিয়ে স্বল্প মুল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে যেটি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। এগুলো আমাদের শক্তিশালী করতে হবে।
সেজন্য আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের গভর্নেন্স ইম্প্রুভ করতে হবে। অনেকদিন থেকে আমরা ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম কমিশন করে তাদের পরামর্শগুলো নেওয়ার জন্য আমরা সুপারিশ করছি। সেগুলোও করতে হবে গভর্নেন্স ইমপ্রুভ করার জন্য। স্বল্প আয়ের মানুষগুলির জন্য যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া হচ্ছে, সেখানে তার ব্যাপ্তি ও প্রাপ্তি দুটিই বৃদ্ধি করতে হবে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য।
আমাদের দেশে অনেক আইন আছে। কিন্তু আইন থাকলেই শুধু হবে না। তার প্রয়োগ হল ইম্পোর্টেন্ট। আইন প্রয়োগ করা নজরদারি খবরদারি বাড়ানো, আইনের প্রয়োগ শক্তিশালী করা, প্রাতিষ্ঠানিক যেসকল সংস্থা যেগুলি এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে আমাদের বেশি নজর দিতে হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, দূর্নীতির প্রতি শূন্য সহিষ্ণুতা ইত্যাদি। এগুলো এখন কার্যকর করতে হবে। সেটি করলে যেগুলো ব্যত্যয় হচ্ছে, সেসব দূর হবে। তবে আইন প্রয়োগ আরও শক্তিশালী হতে হবে। কারণ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দূর্বলতা আমরা দেশি।
লেখক: অধ্যাপক এবং সম্মানীয় ফেলো (সিপিডি)