সম্পদ আহরণ, সম্পদ বণ্টন ও বণ্টনের দক্ষতা অর্জন জরুরি
বাজেটের তিনটি দিক আছে। একটি হলো সম্পদ আহরণ, দ্বিতীয়টি সম্পদের বণ্টন এবং তৃতীয়টি হলো সম্পদ বণ্টনের দক্ষতা। সম্পদ আহরণের দিক থেকে যদি বলি, যে চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে বাজেটটি প্রণয়ন করা হয়েছে যে, আমাদের একটি মূল্যস্ফীতির চাপ আছে, কোভিড থেকে আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে। সাধারণ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেক্ষিতে তাদের জীবন মানের নিশ্চয়তা বিধানের একটি প্রয়োজনীয়তা আছে। এটির প্রেক্ষিতে যদি আমি দেখি, বাজেটের তিনটি দিক তাহলে আমি বলবো সেখানে কিছু কিছু প্রচেষ্টা আছে, যাতে করে বিনিয়োগকে প্রণোদিত করা যায়। সাধারণ মানুষের মূল্যস্ফীতির চাপকে সহনীয় করা যায়। তারপরও আমার মনে হয় যে, কিছু কিছু জায়গায় বাজেটে দুর্বলতা রয়ে গেছে। একটি দুটি আমরা দেখি, সেটি হলো যে, সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে আমাদের আরও উচিত হবে আরও বেশি প্রচেষ্টা গ্রহণ। সেটি আমি দেখিনি। আমাদের দেশে এখনো অপ্রত্যক্ষ্য করের উপরেই রয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষ্য কর আহরণের দিকে আমাদের আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত। স্থানীয় শিল্পকে সংরক্ষণ দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা আছে। আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে এবং উৎপাদনের উপর শুল্ক কমিয়ে। আমার মনে হয়েছে যারা নিম্নবিত্ত আছে তাদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য করের আয় সীমা না বাড়লেও নিম্নতম করের উপর যে এক লাখ টাকার ৫% এর যে একটি স্ল্যাব আছে সেটিকে আরও বাড়িয়ে এটি করা যেতে পারত। তাহলে যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের কর কিছুটা কম দিতে হতো। সর্বোচ্চ যে কর যেটি ৩০% থেকে ২৫% এ নামানো হয়েছিল। কোভিডের সময়ে উচ্চ আয়ের মানুষদের তেমন একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আর বিতরণের দিক থেকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলো ঠিকই ছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি যে সামাজিক সুরক্ষাখাতে যদিও বরাদ্দ কিছুটা টাকার অংকে বেড়েছে, আমরা যেটি দেখি পেনশন, বেতন, সঞ্চয়পত্রে সরকারের ভর্তুকি, এটিকে বাদ দিলে সামাজিক সুরক্ষায় প্রকৃত ব্যয় ৩০০০ হাজার কোটি টাকা কমে গিয়েছে। এমতাবস্থায় সরকার যে চিন্তা করছে, এককোটি মানুষকে পাঁচ মাসের জন্য ৩০ কেজি চাল পনের টাকা দরে দেবে, এটি আরেকটু বিস্তৃত করতে গেলে সামাজিক সুরক্ষায় কিন্তু বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার ছিল এবং আমার মনে হয় যে, এখনও সময় আছে।
শিক্ষাখাতে শিশুদের দুই বছরের ব্যত্যয় হয়েছে, শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে, সেখানে শিক্ষাখাতে বরাদ্দটুকু আরও বৃদ্ধি করা দরকার বলে আমি মনে করি। বিশেষত ২০১৮ সালের বাজেটে বলা হয়েছিল চাইল্ড বাজেট আলাদা করে দেওয়া হবে, ১৫.৫% পুরো বাজেটের এবার সে বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। আমার মনে হয় যে, শিশু ও মাতৃত্বকালীন প্রকল্প অর্থাৎ সব মা ও শিশুকে এর আওতায় নিয়ে আসা, সেক্ষেত্রেও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার বলে আমার মনে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশে সরকারি ব্যয় জিডিপির ১৫.৫% এর মতো। এটি কিন্তু দক্ষিণ এশিয়াতে সর্বনিম্ন। আমাদের সেটি বাড়াতে হবে। আর সেটি করতে হলে আমাদেরও সম্পদ আহরণ বাড়াতে হবে। এসব জায়গাগুলোতে আরও বিনিয়োগ করা দরকার। কর প্রস্তাবে যেটি বলা হয়েছে যে, বাইরের টাকা দেশে আনার জন্য প্রণোদনা দেওয়া, বাইরের টাকা ১৫% দেখিয়ে সেটিকে লিগ্যালাইজ করা,সেটিকে দেশে নিয়ে আসতে গেলে ১০% অথবা টাকার ক্ষেত্রে ৭% ইত্যাদি যেসব সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেটি আমি মনে করি,
নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক এবং রাজনৈতিকভাবেও এটি সমর্থনযোগ্য নয়। এগুলো দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে কতটুকু কি হবে জানিনা, তবে ন্যায়ের শাসনে ব্যত্যয় হবে বলে মনে করি। সুতরাং এগুলি না করে, কিভাবে দেশ থেকে অর্থপাচার না হয়, সেদিকে খেয়াল করে, যে আইন কানুনগুলি আছে সেগুলি যদি কাজে লাগানো যায়। অর্থনৈতিকভাবে শূন্যসহিষ্ণুতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যেটি বলেছেন, সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
লেখক: অধ্যাপক ও সম্মানীয় ফেলো, সিপিডি