পদ্মা সেতু বাঙালির বীরত্ব ও গৌরবের প্রতীক
পদ্মা সেতু শুধু অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীকই নয়, পদ্মা সেতু বাঙালির বীরত্বের, গৌরবের অন্যতম প্রতীক। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বৃহৎ শত্রুর অন্যায় অপবাদকে উপেক্ষা করে, অসীম সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে রাষ্ট্রনায়োকচিত প্রজ্ঞা নিয়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আজ তারই বাস্তবরূপ আমরা দেখতে পেলাম। পদ্মা সেতু উদ্ভোধন হলো। বহু কাঙ্ক্ষিত, বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্ভোধন হয়ে গেল। এটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয় সন্দেহ নাই।
ব্যক্তিগতভাবে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল পদ্মা সেতু উদ্বোধন আয়োজনে অংশগ্রহণ করার। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। মনে হয়েছিল যেন বাঙালির বীরত্বের নতুন আরেকটি পালক যুক্ত হলো। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে আনন্দ উপভোগ করেছিলাম, কেন যেন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় সেই একইরকম আনন্দ উপভোগ করেছিলাম। আমি আগেও বলেছি যে, এই সেতু শুধুমাত্র সেতু নয়। এটি পৃথিবীর কততম বড় অথবা দীর্ঘ সেতু সেটিও মুখ্য নয়। মূখ্য বিষয় হলো, বৃহৎ শক্তির চোখ রাঙানো,ধমক, হুমকি যে বাঙালি পরোয়া করে না, এই দেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে যে দেশ স্বাধীন করেছে, যে রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তারই কন্যা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায়, তখন এই চোখ রাঙানোকে যে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না, বীরত্বের সঙ্গে পাল্টা জবাব দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশ বীরের জাতি, তারা কারও কাছে আত্মসমর্পণ করে না। পদ্মা সেতু হচ্ছে সেই বীরত্বের প্রতীক। আমাদের সাহসের প্রতীক। সততার প্রতীক। সক্ষমতার প্রতীক। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা যে আমাদের আছে, তার প্রতীক। এই মিশনে শেখ হাসিনা সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাতি তার সঙ্গে একসঙ্গে হাজির হয়েছে, সহযোগিতা করেছে, সাহস যুগিয়েছে। সুতরাং আমরা আশা করি, এই পদ্মা সেতু যতদিন থাকবে, বাঙালি জাতির গৌরবের ইতিহাস ততদিন সমুজ্জ্বল থাকবে।
অর্থনৈতিকভাবে এটি আমাদের জন্য একটি বড় অবকাঠামো হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। সে আলোচনা হয়তো আরও বড় আঙ্গিকে করা যাবে। কিন্তু আমি যেটি বলতে চাই, পদ্মা সেতু আমাদের একটি বিজয়গাঁথা। আমরা সেই জাতি, যারা রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে, লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়েও আত্মসমর্পণ করেনি।
এর বাইরে বলতে গেলে, এই সেতু নিয়ে হয়তো অনেক অপবাদ মিথ্যাচার আছে। সেটিকে আমি সমালোচনা বলব না। আমি বলব সেগুলো কুৎসা রটনা। অনেকে বলছে, এই সেতুতে অর্থের ব্যয় অনেক বেশি হয়েছে। এখন যারা এসব বলছেন, তারা এক্সপার্ট না। তারা জানে না এখানে কত হাজার পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। যারা মিথ্যাচার করতে চায়, তারা সমালোচনা করতে জানে না। সমালোচনা এক জিনিস, আর মিথ্যাচার করে কুৎসা রটনা করে একটি বড় অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা আরেক জিনিস। আমি প্রধানমন্ত্রীকে এই সফলতার জন্য যেমন সাধুবাদ জানাই, তেমনি এসব অপবাদ সৃষ্টিকারীদের আমি তীব্র নিন্দা জানাই।
লেখক: সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট