মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশে আছি আমরা
বৈশ্বিক বাজারে একটি মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশে আছি আমরা। জিনিসপত্রের আমদানি মূল্য বেড়ে যাচ্ছে, টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, একই সঙ্গে দাম বাড়ছে আমদানিকৃত পণ্যের। আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় একইধরনের যেসব পণ্য সেগুলোরও কিন্তু দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন কারণ তাদেরও জীবনধারণ করতে হয়, বিশেষ করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ান। যার ফলে ট্যাক্সও বাড়ছে। আমদানিমূল্য যেহেতু বাড়ে টাকায়, কাজেই সেদিক থেকে স্বাভাবিকভাবেই ট্যাক্সও বাড়ে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও বেড়েছে। কাজেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে, নয়তো ঘাটতি তৈরি হবে। এভাবেই কিন্তু চক্রাকারে দাম বেড়ে যায় পণ্যের।
আমার ব্যক্তিগত মতামত একইসঙ্গে ক্যাবের যেটি বিষয়, এখন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এমনকি পানির মূল্য বৃদ্ধি করা কোনোভাবেই সংগত হবে না। যদি সরবরাহকৃত এ সব পণ্যের দাম বাড়াতে হয়, তাহলে তার প্রভাব অন্যান্য পণ্যের উপর পড়বে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হবে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। কাজেই আমি বলব, এখন মূল্যবৃদ্ধির সময় নয়। এজন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে হোক, ভর্তুকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় যে অপচয় হয়, অব্যবস্থাপনার জন্যে, দুর্নীতির জন্যে, অদক্ষতার জন্য, এবং অবশ্যই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। সেদিকে সূক্ষ্ম মনিটরিং অথবা নজরদারি থাকতে হবে। যেমন বিদ্যুৎখাতে রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহার করে বিদ্যুতের দামটি বেশি পড়ে। তাই সাশ্রয়ী উপায় অবলম্বন করে, ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই এ সব পণ্যের মূল্য বাড়ানো সঠিক হবে না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিসের দাম সহনশীল রাখার উদ্দেশ্য হলো, সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়ন। তবে কেউ যদি সরবরাহ বিঘ্নিত করার জন্য অপচেষ্টা করে, দ্রব্য সামগ্রী মজুদ করে, পণ্য পরিবহনে বাধার সৃষ্টি করে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। কোনো অবস্থাতেই সাপ্লাই চেঞ্জ যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনিটরিং ব্যবস্থা অনেক বেশি জোরদার করতে হবে।
মানুষ আসলে শান্তিতে নেই। সেটি আমরা আজ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত যাদের আয় খুবই সীমিত অথবা নির্দিস্ট আয়, তাদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
সীমিত আয় দিয়ে তাদের জীবনযাত্রা সুস্থভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমার মতো যারা অবসরপ্রাপ্ত তারা সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় আছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
সরকারকে আরও বেশি জনবান্ধবমূলক পলিসি তৈরি করতে হবে। কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে সেদিকে খেয়াল দিতে হবে। মনিটরিং করে যেখানে সমস্যা দেখা যাবে, সেগুলোর আশু সমাধান করতে হবে। কোথাও অন্যায় অনাচার হচ্ছে জানতে পারলে কঠোরভাবে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে। জনমত তৈরি করতে হবে।
কাজেই আমি বলব, শুধু বিদ্যুতের ক্ষেত্রে নয়, কোনো ক্ষেত্রেই দাম বৃদ্ধি সুফল বয়ে আনবে না। বরং এতে করে অসামঞ্জস্যতা আরও বেড়ে যাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কোভিড পরবর্তী সময়ে মানুষ এমনটিতেই সংকটের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। ভর্তুকি দিয়ে হলেও জনগণের দিকটি সরকারকে আগে দেখতে হবে। কাজেই আমার মনে হয়, শুধুমাত্র বিদ্যুৎ নয়, কোনো কিছুরই দাম বাড়ানোর সঠিক সময় এটি নয়। কাজেই দাম বাড়িয়ে নয় বরং পলিসির পরিবর্তন করে সমাধানের নতুন পথ আমদের খুঁজে বের করতে হবে।
লেখক: সভাপতি, ক্যাব
আরএ/