মানুষ গড়ার কারিগর একটি ভাল বই
বই আমাদের জীবনে সার্বজনীন একটি শব্দ। শব্দটির সাথে আমরা যেমন পরিচিত তেমনি বস্তুটির সাথেও আমরা পরিচিত। প্রতিটি ঘরে ঘরে সবাই আমরা বইয়ের সাথে পরিচিত। তবে প্রকৃত বিষয় হলো, বইয়ের অনেক রকম প্রকারভেদ আছে। সেই প্রকারভেদের মধ্যে কিছু বই আছে, যা পড়ে উত্তীর্ণ হওয়া যায়। কিছু বই আছে পড়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করা যায়। কিছু বই পড়ে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। অর্থাৎ নিজেকে সমৃদ্ধ করা, নিজের মনের ক্ষুধা নিবারণ করা এবং নিজেকে গড়ে তোলা। এটির জন্য যে বইয়ের দরকার, সেই প্রকারের বইগুলি আমাদের দেশে খুবই প্রয়োজন। শুধু প্রয়োজন বললে ভুল হবে, সেই বইয়ের পাঠক আমাদের খুবই প্রয়োজন। তবে দুঃখজনকভাবে সত্যি হলো, সেই ধরণের বই এবং বইয়ের পাঠক আমাদের দেশে সন্তোষজনক নয়। যেদিন এ ধরণের বই এবং বইয়ের পাঠক আমাদের দেশে সন্তোষজনক হবে, সেদিন কিন্তু আমাদের সামাজিক, বৈশ্বিক, নৈতিক অর্থাৎ সামগ্রিক উন্নতির জন্য আমাদের আর কোন আক্ষেপ করতে হবে না। সেটি ধারাবাহিকভাবেই এগিয়ে যাবে। আমার মনে হয়, বর্তমানে আমাদের ভিতর যে ডিজিটাল আগ্রাসী, পুরো দেশে বা পুরো বিশ্বে বিরাজ করছে, এতে এরকম হার্ড কপি, সৃজনশীল মানুষ গড়ার কারিগর যে বই, সেই বইয়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই আমাদের লড়াইয়ের মুখোমুখি হওয়া দরকার। সেজন্য আমাদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
একটি বিষয় আমি বলতে চাই যে, আন্তর্জাতিকভাবে বইয়ের যে ক্ষেত্রটি সেখানে আমরা সেভাবে পৌঁছাতে পারিনি। আগে আমাকে প্রতিযোগিতার মাঠে যেতে হবে। তারপরে প্রতিযোগিতার মাঠে আমি কতটা এগিয়ে, কতটা পিছিয়ে আছি, সেটি বুঝতে পারবো। এখনও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পৌঁছানোর মতো অবস্থায় আমরা আসিনি এবং সেটির জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, সেই প্রস্তুতি আমরা আসলেই কতটুকু ভালভাবে নিচ্ছি অথবা সেই সুযোগ আমাদের হচ্ছে, সেটিও প্রশ্নের ব্যাপার।
বই শব্দটির সাথে প্রাথমিকভাবে দুটি জিনিস দরকার। একটি হচ্ছে বইয়ের ভিতরের কনটেন্ট। অন্যটি হলো, বাইরের খোলশ বা প্রোডাকশন। প্রোডাকশন হচ্ছে প্রকাশকের ব্যাপার। সেই প্রোডাকশনের মান উন্নয়ন এবং কোন ধরণের মানের অর্থাৎ মাঝারি অথবা তার চেয়ে বেশি বা কম, সেটি নির্ভর করে খরচের উপর। ব্যয় বৃদ্ধি করে প্রোডাকশন উন্নত করা যায়। সেটি আমরা আন্তর্জাতিক বইকে অনুসরণ করে আমরা করতে পারি বা করার চেস্টা করতে পারি।
বইয়ের ভিতরের কনটেন্ট যেটি অর্থাৎ লেখা, সেটি সম্পূর্ণভাবেই লেখকের মেধা অথবা অনুভূতির ব্যপার। এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে কিনা, সেটি যাচাই করার সুযোগই আমাদের হয় নাই অথবা কম হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বইকে সকলের কাছে পৌঁছাতে হলে, আমাদের যে জিনিসটি লাগবে সেটি হচ্ছে ভাল অনুবাদ। বিভিন্ন ভাষায় ভাল অনুবাদ। ভালভাবে অনুবাদ করে সেই দেশ থেকে বইটি যদি প্রকাশ করা যায়, কিংবা আমাদের দেশ থেকে প্রকাশিত হলেও সেটি যদি সেই প্রকাশকের বিভিন্ন দেশে প্রকাশ করার সুযোগ থাকে, তখনই আসলে পরীক্ষা ক্ষেত্রটি তৈরি হবে। তখনই আমরা বুঝতে পারবো আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পাঠকরা সেটি পড়তে পারছে কি না, ভাল বলছে কি ভাল বলছে না। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, সেটুকু অব্ধি আমরা এখনও যেতে পারি নি। গেলেও সেটি একেবারেই নগন্য।
আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বই ছড়িয়ে দিতেও চেস্টা করছি, শুধুমাত্র বাংলা ভাষাভাষী, বাংলা অধ্যুষিত এলাকায়, বাংগালি পাঠকদের জন্য। বই ছড়িয়ে পড়লেও পাঠকরা এক জায়গাতেই রয়ে গিয়েছে। সেটি হচ্ছে সবাই বাঙ্গালি পাঠক। ভিন্ন ভাষাভাষির পাঠকদের মধ্যে আমরা আমাদের বই এখনও সেভাবে ছড়াতে পারছি না।
তবে আমাদের সবসময়ই আশাবাদী থাকতে হবে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রচেস্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বই দিবসে সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি