সবজির দাম বাড়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটে: কৃষিসচিব
সবজির দাম বাড়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটে বলে মন্তব্য করেেছন কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সবজির মূল্যবৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত করতে আমরা একটা গবেষণা করছি। কৃষি কর্মকর্তারা ছাড়াও জেলা প্রশাসনকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। গবেষণা শেষে সবজির মূল্যবৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণগুলো জানতে পারব। কেন সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আমরা নির্ণয় করতে চাই।’
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সবজি মেলা ২০২২ উপলক্ষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিসচিব এ কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে শুরু হওয়া গবেষণা থেকে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে, তাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটের বিষয়টিই প্রধান।’
সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে যে সবজির কেজি ১০-২০ টাকা, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সেটা আমরা ঢাকায় ৬০-৭০ টাকায় কিনে খাই।’
দ্বিতীয়ত এ বছর অসময়ে দুই বার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিশেষ করে ৫ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড় জোয়াদের প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে। তাতে বাজারে উৎপাদনে ঘাটতি হয়নি, কারণ কৃষক দ্বিতীয়বার উৎপাদনে গিয়ে তা পুষিয়ে দিয়েছে। ফলে তাদের খরচ বেশি পড়েছে।
কৃষিসচিব মনে করেন, কৃষকের ব্যয় বৃদ্ধি বাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
দাম বৃদ্ধির পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা আবিষ্কার করলেও তাদের দমন করার কোনো উদ্যোগের কথা জানাতে পারেননি সায়েদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ’কৃষি মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে। আমরা একটা গবেষণাও করছি। কেন সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা আমরা নির্ণয় করতে চাই। তবে আমরা এ পর্যন্ত যে তথ্যগুলো পেয়ে আসছি তা হচ্ছে সব সময় মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ থাকে মধ্যস্বত্বভোগী।’
খাদ্য-শস্য ও কৃষিপণ্যের জোগান অব্যাহত রাখতে ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এত প্রতিষ্ঠান থাকার পরও সবজির দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে কেন নতুন করে গবেষণা করতে হচ্ছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি মধ্যস্বত্বভোগী এখানে একটা ভূমিকা রাখছে। এই মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম কমাতে আমরা কাজ করছি। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। আমরা এখন দেখতে চাচ্ছি কোন পর্যায়ে কত দাম হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘একেক সময় একেক পরিস্থিতির কারণে সবজির দাম বাড়ে। এ বছর ডিসেম্বর মাসে জোয়াদ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। তবে গবেষণা শেষে আমরা সুনির্দিষ্ট কারণগুলো জানতে পারব।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সবজির উৎপাদন চিত্র তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘বিগত ১২ বছরে সবজির উৎপাদন প্রায় সাতগুণ বেড়েছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে। এ তালিকায় চীন প্রথম ও ভারত দ্বিতীয়। কৃষিখাত থেকে জিডিপির ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ আসে। দেশে এখন চাষাবাদ হয় ১০০ প্রজাতির সবজি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে নয় লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার টন সবজি উৎপাদন হয়েছিল। এর আগের বছর নয় লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার টন সবজি।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষি সচিব জানান, রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় সবজি মেলা ২০২২।
এদিন বিকাল ৩টার দিকে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক মেলার উদ্বোধন করবেন। কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলা চলবে আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে সবজি মেলা। তিন দিনব্যাপী জাতীয় সবজি মেলায় ৫২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে।
এনএইচবি/এমএমএ/