মরুর ফল ‘ত্বিন’ চাষে স্বপ্ন বুনছেন ফেনীর ফরিদ
ফেনীতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে মরু অঞ্চলের বিখ্যাত ত্বিন ফলের। এ ফল চাষাবাদ নিয়ে ফেনীর কৃষি বিভাগও ব্যাপক আশাবাদী। কৃষিবিদরা বলছেন এ জেলার বিভিন্ন এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফলটি চাষাবাদের জন্য উপযোগী।
ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ এ ফলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে জেলায় এরই মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। স্বপ্ন বুনছেন বাণিজ্যিক আবাদের। সদর উপজেলার আমিন বাজারের পশ্চিম পাশে ৩৩ শতক জমির মধ্যে তিনি ডুমুর জাতীয় এ ফলটির আবাদ করেছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ জানান, কুয়েত ও ইতালি থেকে তিনি চারাগুলো সংগ্রহ করেছেন। মোট ১৫টি প্রজাতির ত্বিন ফল তিনি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছেন।
মাসুদ জানান, ১ বছর আগে ৩৩ শতক জমিতে মোট ১০০টি চারা দিয়ে ত্বিন ফলের আবাদ শুরু করেন তিনি। প্রতিটি চারা আনতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০০ টাকার মতো। জমি তৈরি, জৈব সার ও শ্রম মজুরি সব মিলিয়ে এ বাগানে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো।
মাসুদ জানান, রোপণের দুই মাস পরেই গাছে ফলন আসতে শুরু করে। ফলটি খেতেও ভালো। পরীক্ষামূলক হলেও অনেকেই এ ফলটি কিনতে আসেন। এ ফলের বাজারও ভালো। উৎপাদন হলে ক্রেতার অভাব হবে না। একদম অর্গানিকভাবে এ ফল চাষাবাদ করা যায়। কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই জৈব সার দিয়েই তিনি চাষাবাদ করছেন।
এ কৃষি উদ্যোক্তা আরো বলেন, তিনি এখানে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে সম্ভাবনা দেখছেন। পরে এটিকে আরও সম্প্রসারণ করতে নতুন জমি নিয়েছেন। সেখানেও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হবে। এ ফল খেতে যেমন খুব সুস্বাদু তেমনি এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। রয়েছে ওষুধিগুণও।
তিনি আরও জানান, ত্বিন গাছটির বীজ থেকে চারা উৎপাদনের হার কম হওয়ায় নির্ভর করতে হচ্ছে কাটিং বা কলম চারায়। যার কারণ হচ্ছে বীজের চারায় ফলন আসে কয়েক বছর পর। অন্যদিকে কলম চারায় ফল আসে মাত্র ৬ মাসে। গাছে ফল আসতে শুরু করায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের।
ধর্মপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, এ ফলের কথা অনেক শুনেছি। মাসুদ বাগান করার কারণে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে ত্বিন চাষের বিষয়ে কৃষি উদ্যোক্তা ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে নিয়মিত কৃষি পরামর্শ দেওয়া হয়। বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, এ অঞ্চলে ত্বিন ফল আবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, কাঁচা-পাঁকা অবস্থায় প্রতি কেজি ত্বিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর শুকনো ত্বিন ফলের কেজি হাজার টাকার উপরে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ত্বিন ফলের চাষ করা হলে লাভবান হওয়া যাবে।
ফেনী সদর উপজেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, ত্বিন ফল মরুভূমি অঞ্চলের ফল হলেও বাংলাদেশের অনেক জেলায় এরই মধ্যে এটির ভালো চাষাবাদ হচ্ছে। এর ওষুধিগুণও রয়েছে অনেক। এ ফলের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করলে অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
একই সঙ্গে এ ফলের বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সে কারণে ত্বিন ফল চাষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ার পর এখন কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিক চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তারা জানান, সরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতা থাকলে এ ফলের চাষাবাদ ফেনীতে সম্প্রসারিত হবে।
এসএন