২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গবাদিপশুর রোগ নির্মূলে সরকার কাজ করছে
কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু
‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)’র প্রশিক্ষণ ভবনের অডিটোরিয়ামে গবাদিপশুর জুনোটিক রোগ, টিউবারকুলোসিস (টিবি) ও ক্যামপাইলোব্যাকটেরিওসিস’র ঝুঁকি কমাতে একটি গবেষণা কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২) দুপুর ১২টায় ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত কয়েকটি জেলার ডেইরি ফার্মে ‘জুনোটিক, যক্ষা ও ক্যামপাইলোব্যাকটেরিওসিস রোগ বিষয়ক গবেষণা’ কর্মশালাটির আয়োজন করা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেছেন প্রকল্পের সমন্বয়ক, প্রধান গবেষক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)’র ‘মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন’ বিভাগের অধ্যাপক ড. এস. এম. লুৎফুল কবির।
শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেছেন কো-প্রকল্প পরিচালক আইএলএসটি (ইন্সটিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)’ নেত্রকোনার প্রিন্সিপাল ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
প্রকল্পটির সমন্বয়ক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এস. এম. লুৎফুল কবির জানিয়েছেন, ‘আমাদের প্রকল্পের মাধ্যে ঢাকা ও ময়মনসিংহের মোট ৩শটি খামারে বিভিন্ন ধরণের গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করা হয়েছে। অঞ্চল দুটির ডেইরি ফার্মিংয়ে জুনোটিক, যক্ষা ও ক্যামপাইলোব্যাকটেরিওসিস রোগগুলোর সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তিনটি রোগের জুনোটিক ইমপ্যাক্ট ও ইকোনোমিক ইমপ্যাক্ট নির্ণয় করা হয়েছে। আমাদের প্রাপ্ত ফলাফল এই জুনোটিক রোগগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও খামারিদের অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।’
বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক গবাদিপশুর যক্ষা ও ক্যামপাইলোব্যাকটা রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে টিকা তৈরির পরিকল্পনা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন।
ড. এস. এম. লুৎফুল কবির বলেছেন, ‘ক্যাম্পাইলোব্যাকটেরিওসিস ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। গবাদিপশুর ডায়রিয়া ও গর্ভপাতের সৃষ্টি করে। আক্রান্ত গাভীর দুধ ও মলের মাধ্যমে সুস্থ পশুতে সংক্রমিত হয়।’
‘জুনোটিক, যক্ষা ও ক্যামপাইলোব্যাকটেরিওসিস রোগ বিষয়ক গবেষণা’ প্রকল্পের প্রধান আরো বলেছেন, ‘টিবি-ও গবাদিপশুর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। এই রোগে গবাদিপশুর উৎপাদন ক্ষমতা বহুলাংশে কমে যায়। তারা খামারিদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। রোগটি গবাদিপশু থেকে এমনকি মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হয়।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), আইসিডিডিআরবি (ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ) ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) মিলে কর্মশালাটির আয়োজন করেছে।
তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করেছে ‘কেজিএফ’।
আইসিডিডিআরবির প্রধান ইনভেস্টিগেটর ড. মো. জিয়াউর রহিমের সভাপতিত্বে ও প্রকল্পটির কো-প্রকল্প পরিচালক এবং বাকৃবির ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল হাসান শিকদারের সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএলএস (ডিপাটমেন্ট অব লাইভস্টক সাভিসেস)’র মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেন, কেজিএফের পরিচালক ড. নাথুরাম সরকার, কেজিএফ’র নির্বাহী পরিচালক ড জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস।
আরো ছিলেন বাকৃবির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান।
ডিএলএসের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা জানিয়েছেন, ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস পালনের এই দিনে আমাদের এই কর্মশালা খুবই গুরুত্ববহ। কেননা, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন খাদ্য নিরাপত্তা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের পাশাপাশি সবাই মিলে কাজ করতে হবে। খামারিদের রোগ-বালাই প্রতিরোধে আমাদের দেশের গবেষকরা কাজ করছেন। ফলে ভালো, ভালো অনেক গবেষণা হচ্ছে।’
ডিএলএসের মহাপরিচালক বলেছেন, ‘এখন আর কোরবানির সময় এখন গবাদিপশুর অভাব হয় না। বাইরের কোনো জায়গা থেকে পশু আমদানীও করতে হয় না। এও প্রমাণ করে-বাংলাদেশ মাংস, দুধ, ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। এখন আমরা রপ্তানির দিকে চলে যেতে হবে। সেটি হচ্ছেও। খামারিরা এই বিপ্লবের নায়ক। পরিমাণ বাড়াতে আমরা কাজ করছি।’
ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা জানিয়েছেন, ‘২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গবাদিপশুর রোগগুলো চিরতরে নির্মূলে আমরা কাজ করছি।’
কেজিএফের পরিচালক ড. নাথুরাম সরকার বলেছেন, ‘তৃণমূল খামারিরা সরাসরি উপকৃত হবেন-এই পরামর্শগুলো এই কর্মশালার মাধ্যমে আমরা সবাই গ্রহণ করতে ও ছড়িয়ে দিতে পারি। আমি আশা করি-বাংলাদেশের প্রাণীসম্পদ খাত এ ধরণের গবেষণায় আরো এগিয়ে যাবে।’
‘জুনোটিক, যক্ষা ও ক্যামপাইলোব্যাকটেরিওসিস রোগ বিষয়ক গবেষণা’ কর্মশালায় আরো আলোচনা করেছেন বাকৃবির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘সারাবিশ্ব যখন অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত, তখন আমাদের মাতৃভূমি দুর্দান্তভাবে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষি এগিয়ে চলছে অনেক ভালোভাবে। ঘরে, ঘরে সবাই পশু পালন করছেন বলে তাদের জন্য পশুচিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, লাইভস্টকের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষকরা। তারা ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারা, খামারিরা উপস্থিত ছিলেন। বিপুল সংখ্যায় অনলাইন, ফেইসবুক মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।
ওএস।