বরগুনায় লবণ সহনশীল ধানের বাম্পার ফলন
উচ্চ ফলনশীল ও লবণ সহনশীল জাতের ধান ব্রি ৬৭, ৭৪ ও ৯৭ আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়ে মুখে হাসি ফিরেছে উপকূলীয় বরগুনার কৃষকদের। বিঘা প্রতি ২৩-২৪ মন ধান পাবেন বলেও আশা করছেন তারা।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) লবনাক্ত অঞ্চল খ্যাত পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের আমড়াতলা গ্রামে গেলে এমনটাই জানান কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, লবণ সহনশীল অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। এর মধ্যে ব্রি ৬৭ ও ৯৭ অন্যতম এবং এগুলো ৮-১২ মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। যা উপকূলীয় লবনাক্ত অঞ্চলগুলোতে উন্নত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষ করতে পারলে কৃষি সম্প্রসারণের সফলতা অর্জন হবে।
আমড়াতলা গ্রামের কৃষকরা জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে তারা প্রথমবারের মতো চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি ধান ৬৭, ৭৪ ও ৯৭ এই তিন জাতের ধানের চাষ করেন। বর্তমানে তা কর্তনের সময় হয়ে গেছে। সবগুলো জাতই ভাল ফলন হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে আমড়াতলা গ্রামে পতিত জমিতে লবণ সহনশীল ধান ব্রি ৬৭, ব্রি ৭৪ ও ব্রি ৯৭ জাতের প্রদর্শনীর উপর মাঠ দিবস ও ফসল কর্তনের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শওকত ওসমান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয় প্রধান ড. কাজী শিরীন জাহান আক্তার, পাথরঘাটার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা গোলাম কবীর।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিএসও এবং প্রধান ড. মো. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড. দেবজিৎ রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপকূলীয় শস্য নিবিড়িকরন কর্মসূচির পরিচালক এবং সিনিয়র সাইন্টফিক অফিসার ড. প্রিয় লাল চন্দ্র পাল। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং দুই শতাধিক কৃষক কৃষানি উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় কৃষক দলনেতা মো. বাদল হাওলাদার বলেন, লবনাক্ত অঞ্চল হওয়ায় আমড়াতলা গ্রামে কোন ফসলই ভালো হতো না। কিন্তু বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে ব্রি ধান ৬৭, ৭৪ ও ৯৭ জাতগুলো প্রথমবারের মতো এখানে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে আমরা চাষ করি। সবগুলো জাতই অত্যন্ত ভাল ফলন হয়েছে। এতে করে যেমন সকল কৃষকই খুশি হয়েছে। তেমনি নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন তারা। যেখানে ভালো কোন ফসলই হতো না আজ সেখানে বিঘা প্রতি ২৩-২৪ মন ধান পাব বলে আমরা আশা করছি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট লবণসহনশীল অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছে। তার মধ্যে ব্রি ধান ৬৭ ও ব্রি ধান ৯৭ অন্যতম। এই জাতগুলো ৮-১২ মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং জীবনকাল ১৪০-১৪৫ দিন। উপকূলীয় লবনাক্ত অঞ্চলগুলোতে উন্নত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই জাত চাষ করতে পারলে কোন জমি আর পতিত থাকবে না এবং যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।
/এএস